নিউইয়র্কে এবিপিসির সমাবেশ সোস্যাল মিডিয়ার অপপ্রচারণা ঠেকাতে চাই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা
বিডিপি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে।। নিউইয়র্কস্থ ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’ (এবিপিসি)র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কন্সাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে তথ্যের যে অবাধ-নির্বিচার প্রবাহ সেটি একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজের জন্যে। এ অবস্থায় যারা প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউজে রয়েছেন, যারা পেশাগতভাবেই সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আছেন, তারা সাংবাদিকতাকে বস্তুনিষ্ঠভাবে চর্চা করবেন, সত্য এবং প্রকৃত তথ্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন, সে প্রত্যাশা আমাদের। নাজমুল হুদা বলেন, প্রতি সপ্তাহে বেশ কটি পত্রিকা বের হয় নিউইয়র্ক থেকে, এছাড়া ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমেও প্রতিদিনই দেশ, বিদেশ, প্রবাসীদের সংবাদ দেখতে পাই, একটি প্রতিবিম্ব দেখতে পাই চলমান সময়ের। এজন্যে সাংবাদিকগণের প্রতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা।
নাজমুল হুদা আরো বলেন, তবে সাংবাদিকতা পেশাটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশাও বটে। আমরা আশা করছি নিউইয়র্কের পেশাজীবী সাংবাদিকরাও বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক তথ্য আরো বেশী বেশী পরিবেশন করবেন।
বিশেষণ সম্মানীত অতিথির বক্তব্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের হেড অব চ্যান্সেরি মো. শোয়েব আব্দুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শতপ্রতিকূলতার মাঝেও আমরা যে এগিয়ে চলেছি, সেখানে প্রবাসীদের অবদান অপরিসীম-তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী সাংবাদিকরা সেই সাফল্যগাথাকে আরো বেশী করে প্রচার করবেন। একইসাথে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার কল্পেও গণমাধ্যমের ভ’মিকা শক্তিশালী হবে বলে আশা করছি।
এ সময় ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ও খ্যাতনামা এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সঠিক সংবাদ পাওয়াটি খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পেশা নিয়েও এমন কিছু সংবাদ চলে যায়, যার কোন ভিত্তি থাকে না, বিব্রতবোধ করতে হয়। কারণ, যারা সত্যিকার অর্থে সাংবাদিক নন-তারা এমন সব কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, যাকে সহজ-সরল মানুষেরা সঠিক বলে মনে করেন। পরবর্তীতে খটকা লাগলে আমাদের কাছে ফোন করেন উদ্ভট ঐসব তথ্য সম্পর্কে জানতে। সে কারণে যারা সাংবাদিকতায় শিক্ষা-দীক্ষা নিয়েছেন, তাদেরই দায়িত্ব হচ্ছে অপসাংবাদিকতাকে রোধ করার।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ বলেন, কম্যুনিটি এখন সমৃদ্ধ। এই কম্যুনিটির সংবাদকে এই ক্লাবের সাংবাদিকরা দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সাথে পরিবেশন করছেন। যার মধ্যদিয়ে মূলধারার লোকজনও বাংলাদেশী আমেরিকানদের এগিয়ে চলার কাহিনী অবহিত হতে সক্ষম হচ্ছেন। বিশেষ করে আমার নেতৃত্বাধীন পিপল অ্যান্ড টেক ইন্সটিটিউট থেকে যে ১০ হাজারের অধিক বাংলাদেশীকে মার্কিন আইটি সেক্টরে উচ্চ বেতনে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি-সে তথ্যও আমেরিকানরা অবহিত হয়েছেন আমাদের পেশাজীবী সাংবাদিক বন্ধুগণের পরিবেশিত সংবাদের মধ্যদিয়ে।
প্রবাসের শক্তিমান কবি ও কলামিস্ট ফকির ইলিয়াস বলেন, আমাদের শেকড় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও যারা লেখালেখি করছেন, সাংবাদিকতা করছেন, তারা যেন সেই চেতনা থেকে বিচ্যুৎ না হন। কারণ, এই দেশ আমাদের, এই জাতি আমাদের এবং প্রজন্মও আমাদের। সকলকে সঠিক তথ্য অবহিত রাখতে হবে।
যুুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’র ২০২৪-২০২৫ মেয়াদের জন্যে গঠিত কমিটির পরিচিতি উপলক্ষে ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন উডসাইডে গুলশান টেরেসে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মানীত অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, পেনসিলভেনিয়ার মিলবোর্ন সিটির মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের এশিয়ান উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, মূলধারার রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকার সম্পাদক শাহনেওয়াজ, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নুরুল আজিম, কম্যুনিটি লিডার ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদেরি কিবরিয়া, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রেসিডেন্ট ও এবিপিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, ব্রঙ্কস কম্যুনিটি বোর্ডে ইমিগ্রেশন বিষয়ক চেয়ারপার্সন শাহজাহান শেখ, হোমকেয়ার এক্সিকিউটিভ নিলুফা শিরিন, যুক্তরাষ্ট্র লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, ট্র্যাভেল ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন প্রমুখ।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সবিতা দাসের নেতৃত্বে বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতনের শিল্পীরা। এরপর এবিপিসির নয়া কমিটির কর্মককর্তাগণকে মঞ্চে ডেকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সকলকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। কর্মকর্তারা হলেন : সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সহসভাপতি পপি চৌধুরী ও আলিম খান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক শাহ ফারুক রহমান, কোষাধ্যক্ষ জামান তপন, যুগ্ম সম্পাদক আজিম উদ্দিন অভি, সাংগঠনিক সম্পাদক-আরিফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আনিসুর রহমান। নির্বাহী সদস্যরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, কানু দত্ত, তপন চৌধুরী, রাজুব ভৌমিক এবং লায়লা খালেদা। এ সময় ক্লাবের সক্রিয় সদস্য হিসেবে শহিদুল্লাহ কায়সার, প্রতাপচন্দ্র শীল, সুব্রত চৌধুরী, শামিম আল আমিন, মোস্তফা অনীক রাজ, নুরুন্নাহার নিশা, আলমগীর কবির, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী হোসেন, রিজওয়ানা এলভিস, জলি আহমেদ, মো. শাহীন হাওলাদার, পিনাকি তালুকদার, সৌমিক আহমেদ, আদিত্য শাহীনকে সম্মানা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এর আগে অনুষ্ঠানের সকল সম্মানীত অতিথিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ক্লাবের কর্মকর্তারা।
এবিপিসির এই পরিচিতি সমাবেশের জন্যে গঠিত কমিটির সদস্য-সচিব শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকেও মঞ্চে উঠিয়ে ক্লাবের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে ছিলেন রেজাউল বারি, আবুল বাশার চুন্নু, গুলজার হোসেন, ইমদাদুল হক, আশরাফ আলী, শরাফত খান মবীন এবং ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান। কম্যুনিটির বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিত্বকারিগণের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি সাঈদা আকতার লিলি খান, সাবেক সেক্রেটারি তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন-বাপার মিডিয়া লিঁয়াজো জামিল সরোয়ার জনি, ক্যাপ্টেন সৈয়দ এনায়েত, শামিম হোসেন, আটাব সভাপতি সেলিম হারুন, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট লুৎফর রহমান লাতু, কৃষিবিদ মিজানুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক সাবিনা হাই উর্বি, দুলাল বেহেদু, রিয়াজ মাহমুদ, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানের চমক ছিলেন বিপার শিল্পীরা। তারা দলীয় নাচ ও গান পরিবেশন করে সকলকে আপ্লুত করেছেন। বিশ্বব্যাপী মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে বিবেকসম্পন্ন সকলকে জেগে উঠার উদাত্ত আহবানের একটি গান পরিবেশন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কন্ঠশিল্পী কাদেরি কিবরিয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া আরেকটি গানে তার সাথে ছিলেন প্রবাসের আরেক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী জলি দাস। গভীর রাতে গুলশান টেরেসের রুচিসম্মত ডিনারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। উল্লেখ্য, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্বেও বিপুল লোক-সমাগম ঘটেছিল। এ উপলক্ষে ‘প্রভাকর’নামক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে আমেরিকায় বাংলা ভাষার প্রথম সাপ্তাহিক দিগন্ত এবং এযাবতকালে প্রকাশিত সকল গণমাধ্যমের ওপর পৃথক দুটি পর্যালোাচনামূলক নিবন্ধ সকলের দৃষ্টি কেড়েছে।
এসএস/সিএ
CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।