দেশের সংবাদ ফিচার্ড

বাসায় ফেরা হলো না শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তির

জারিন তাসনীম খান প্রিয়ন্তী

বাসায় ফেরা হলো না শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তির

কানাডা থেকে দেশে এসেছে বড় বোন। তাই তার সঙ্গে দেখা করতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন জারিন তাসনীম খান প্রিয়ন্তী। বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁয় ডিনার করতে যান বড় বোন তাসনোভার সঙ্গে। কথা ছিল ডিনার শেষে বাসায় ফিরে প্রবাসী ভাগ্নি, বোন আর বোনের জামাইয়ের সঙ্গে পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করবেন। তবে সেখান থেকে আর বাসায় ফেরা হলো না প্রিয়ন্তির। আগুনে পুড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকেন লাশ হয়ে।

মুন্সীগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ইংরেজি সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়ন্তী সদর উপজেলার বিনোদপুরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন খানের মেয়ে।

রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থী জারিন তাসনীম খান প্রিয়ন্তীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত প্রিয়ন্তী মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুরের বাসিন্দা ও সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

জানা গেছে, প্রিয়ন্তীর বড় বোন বড় তাসনোভা খান ও তার ৪ বছরের মেয়ে সায়মা কানাডা থেকে ঢাকায় আসেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বোনের সঙ্গে দেখা করতে বাবা, মা ও ভাইসহ ইস্কাটনে যান প্রিয়ন্তী। সেখান থেকে বড় বোন তাসনোভা, তার মামি শাশুড়ি ও ভাগ্নি সায়মাকে নিয়ে রাতে ডিনার করতে যান বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁয়।

আগুন লাগার পর রেস্তোরাঁটি ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ৩ জন বের হতে পারলেও বের হতে পারেনি প্রিয়ন্তী। আগুনে পুড়ে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। প্রিয়ন্তীর মৃত্যুর খবরে তার নিজ এলাকায় শিক্ষক, সহপাঠী ও স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহতের ভাই পিয়াল জানান, আগুন দেখে ঘাবড়ে যায় প্রিয়ন্তী। ঘটনার পরপরই সায়মাকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসেন তাসনোভার মামি-শাশুড়ি। প্রিয়ন্তীর হাতে ধরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে বড়বোন তাসনোভা। কিন্তু, ভবনের উপর থেকে হুড়োহুড়ি করে লোকজন নামছিল, ভিড়ের মধ্যে একপর্যায়ে প্রিয়ন্তীর হাতটি ছুটে যায়।

তিনি বলেন, সুহা প্রিয়ন্তীর হাতে ধরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভবনের উপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে লোকজন নামছিল, আর ধোঁয়ায় মধ্যে এক পর্যায়ে প্রিয়ন্তীর হাতটি ছুটে যায়। পরে সে আর বের হতে পারেনি। আগুনে পোড়া প্রিয়ন্তিকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বলেই কাঁদতে শুরু করেন পিয়াল।

এদিকে সদ্য এলএলবি পাস করা পিয়ালও বোনের সঙ্গে ঢাকা গিয়েছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিকভাবে হারানো বোনের দাফনের ব্যবস্থা করতে বাড়ি ফিরে এসেছেন। পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বাদ আসর দাফনের সময় নির্ধারণ করেছেন।

তিনি জানান, ঢাকায় প্রিয়ন্তীর মরদেহের সঙ্গে বাবা, মা ও বড় বোন রয়েছেন। সেখানে গোসল করানোর পর কফিন নিয়ে আসতে আসতে কিছুটা বিলম্ব হবে।

অন্যদিকে প্রিয়ন্তীর মৃত্যুর খবর মুন্সীগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনরা তাদের বিনোদপুরের বাড়িতে ভিড় করেন। এলাকার মানুষ অপেক্ষায় আছেন ঢাকা থেকে তার মরদেহ আসার।

মুন্সিগঞ্জ শহরের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে প্রিয়ন্তী এইচএসসি পাস করেছিলেন। তার সাবেক এই শিক্ষালয়টি ঘিরেও শোকের ছায়া। তার স্বজন ও সহপাঠীরা কেউই এই করুণ মৃত্যু সহ্য করতে পারছেন না। তারা বলছেন, প্রিয়ন্তীর সোনালী স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর কান্নার সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে প্রিয়জনদের।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বেইলি রোডে ছয়তলা ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে এবং রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনাস্থলকে ‘ক্রাইম সিন’ ঘোষণা দিয়ে ভবনটির সামনে হলুদ ফিতা আটকে দেন। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ভবনটিতে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ছাড়াও, স্যামসাংয়ের শোরুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইলিন, খানাস ও পিৎজা ইনের আউটলেট আছে বলে জানা গেছে। – বাংলাদেশ জার্নাল

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন