ফিচার্ড মত-মতান্তর

বউ 

ছবি: সংগৃহিত

বউ 

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক: বেচারা স্বামী চিৎকার করে বললেন, ‘হে ঈশ্বর, তুমি মেয়েদের এত সুন্দর করে বানিয়েছো, বউ-গুলোকে ‘এমন’ বানিয়েছো কেন’? ঈশ্বর উত্তর দিলেন, ‘মেয়েগুলোকে আমি বানিয়েছি ঠিকই, বৌ-দের তোরা বানিয়েছিস’। সামাজিক মাধ্যমে বউ-দের নিয়ে রঙ্গ-তামাশা’র শেষ নেই। অথচ বউ ছাড়া সব অচল। ‘বউ নাই যাঁর পোড়া কপাল তাঁর’। আমাদের নবেন্দু দত্ত’র বউ মারা গেছেন, এখন তিনি জানেন ‘বৌ কি জিনিস’? যদিও লোকে বলে, ‘বউ মরে ভাগ্যবানের’। বউ যৌবনে মরলে হয়তো কথাটা সত্য, নবেন্দু’দার বয়স যখন ৭০+, বৌদি মুক্তি দত্ত তখন মারা যান, বেচারা। এই বয়সে বউ মরলে কি দুর্দশা হয়, নবেন্দু’দা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ক’দিন আগে আমার বন্ধু গোলাম রব্বানী এসেছিলো আমেরিকা ঘুরতে। রব্বানীর ষ্ট্রোক হয়েছে, কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে, দেখলাম পুরোপুরি স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল। এটাই বাস্তবতা। বউ’র মূল্য বোঝা যায়, ‘বিছানায় পড়লে’, বৌ ছাড়া কেউ আর তখন পাশে থাকেনা।

বঙ্গদেশে বাবা-মা মারা গেলে মানুষ সান্তনা দেয়; বলে, বাবা-মা কি কারো চিরকাল থাকে? বয়স হয়েছে, ওনাদের যাবার সময় হয়েছে, শোকের কিছু নেই। আরো বলে, আমরা তো আছি? বউ মারা গেলে কোনো মহিলা এসে কিন্তু বলে না যে, ‘আমরা তো আছি’? পক্ষান্তরে কারো স্বামী মারা গেলে পুরুষরা এক-পায়ে খাঁড়া একথা বলার জন্যে যে, ‘আমরা তো আছি’? এ বিষয়ে পুরুষ জাতি বড়ই উদার। মহিলারা উদার হতে চাইলেও সমাজ বাধাঁ দেয়। আশির দশকে আমাদের এক বন্ধু রহমতউল্ল্যাহ ফরিদপুরের এক মহিলার গল্প বলতো। মহিলা সবসময় একটি ‘মাদুর’ নিয়ে ঘুরতেন। চ্যাংড়া ছেলেপেলে জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, ‘কি করবো বাছা, তোমরা চাইলে তো আর আমি ‘না’ করতে পারিনা’?

আমাদের অপর এক বন্ধু বোরহানের ব্রীফকেসে সর্বদা একটি তোয়ালে ও লুঙ্গী থাকতো। আশির দশকে আমরা তরুণ, বোরহান ইঞ্জিনিয়ার। বলতো, কোথায় রাত্রি কাটাবো, বলা তো যায়না! বোরহান নেই, কিন্তু ‘ও’ নারী বিশেষজ্ঞ ছিলো। অন্যের ‘বউ’র সাথে ঘুমাতো। আমায় বলতো, তুমি কিচ্ছু জানোনা, ওপর তলায় ‘বউ বদলানো’ কোন ব্যাপার নয়, ‘টেষ্ট বদলানোর জন্যে বউ বদলানো’! একজনের বউ’র কাছে বোরহান প্রায়ই যেতো। প্রথম রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বললো, আমি তো প্রথমে একবার ‘চড়াও’ হলাম, তাঁর কিচ্ছু হলোনা। দ্বিতীয়বারও নয়, তৃতীয়বার চরমে পৌঁছে, বোরহান বললো, তুমি বিশ্বাস করবে না, বিছানার চাদরটা পুরো ভিজে যায়। আমি তখন বাংলাবাজারে একটি খৃষ্টান পরিবারের সাথে ‘পেয়িং গেষ্ট’ থাকতাম। ওদের একটি ছোট্ট বাচ্চা ছিলো। মহিলা দেখতে মন্দ ছিলোনা। কি যেন এক সমস্যায় বোরহান একবার কিছুদিন আমার সাথে থাকে। মহিলা তখন প্রেগন্যান্ট। বোরহান একদিন আমায় বললো, তুমি কি কখনো এই ভদ্রমহিলাকে ট্রাই করেছো? বললাম, ধুর ব্যাটা, আর একজনের বউ! বললো, তুমি ট্রাই করলে জিততে!

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

বউ আমার আলোচ্য, সেক্স নয়? বউ আলোচনায় সেক্স আসবে না, তা কি হয়! বউ আর সেক্স অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যৌবনে বউ সেক্সসঙ্গী, কবি যেমন বলেছেন, ‘প্রতি অঙ্গ লাগি তব কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর’। এজন্যে হয়তো বলে জীবনসঙ্গী। মধ্যবয়সে বউ সাথী, হয়তো ঝগড়াটে বন্ধু, আর বৃদ্ধ বয়সে নি:স্বার্থ সেবিকা। আপনার বিয়ে করা যুবতী বউ-টাকে আপনিই দুমড়ে-মুচড়ে নি:শেষ করে দিয়ে প্রৌঢ়া বানিয়ে দেন! ভারতীয় সংস্কৃতিতে সচরাচর স্বামী বয়সে বউ’র চেয়ে বড় হয়ে থাকে। লক্ষণীয় যে, স্ত্রীরা ধরেই নেয় যে, বার্ধক্যে স্বামীর সেবা করবেন, এটি যেন তাঁদের অধিকার, কর্তব্য এবং এটি তাঁরা আনন্দের সাথেই করেন, করতে ভালবাসেন, পছন্দ করেন, যা স্বামীদের জন্যে সৌভাগ্য বটে!

প্রেমিকা আর বউ ঠিক এক নয়, সেই প্রসঙ্গ পরে। বউ মানে বিয়ে করা বৌ। বিয়ে একটি সামাজিক ব্যবস্থা। যাঁরা একদা ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ বলতে ভালবাসতেন, তাঁদের সেই নেতা মাও সে তুং যেমন বলেছেন, ‘বিয়ে হচ্ছে আইনানুগ বেশ্যাবৃত্তি’। বিষয়টি তা নয়। ‘বন্দুকের নল সকল ক্ষমতার উৎস’-মাওয়ের এ বক্তব্য কিছুটা বাস্তবতা হলেও বিয়ে নিয়ে তাঁর বক্তব্য ‘অসত্য’। সমাজে উস্ক্রিনখলতা রোধে বিয়েকে ধর্মীয় অনুশাসনে বাঁধা হয়েছে। বাংলাদেশে একটি হিন্দু ছেলে রাধাকান্ত বিশ্বাস সামাজিক মাধ্যমে বিয়ে সম্পর্কে একটি তুলনামূলক বক্তব্য দিয়ে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট’-এ গ্রেফতার হয়েছেন। ছেলেটি শুধু বলেছিলো, ‘মুসলমান বিয়ের চেয়ে হিন্দু বিয়ে ভালো’ (দৈনিক আমাদের সময়, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট প্রতিনিধি, ২৬ আগষ্ট ২০২০)। পরে ছেলেটি’র ভাগ্যে কি ঘটেছে জানিনা, তবে হিন্দু বিয়ে জাঁকজমক পূর্ণ এবং সংস্কৃতিতে ভরপুর। এর বেশিরভাগ সামাজিক আচার কখনো সখনো এলাকাভিত্তিক।

আগেকার দিনে একটি ছেলে ও মেয়ের বিয়ে হতো সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশ, হয়তো কেউ কাউকে কখনো দেখেওনি। এমনকি বর্তমান সময়ে দেখেশুনে যেসব বিয়ে হয়, তথায় ছেলেমেয়ের আগাম পরিচয় তেমনটা থাকেনা। হিন্দু বিয়েতে এজন্যে বেশকিছু অনুষ্ঠান থাকে যা দুই অপরিচিত যুবক-যুবতীকে কাছাকাছি আনতে সাহায্য করে। যেমন বিয়ের  আসরে জড়িয়ে ধরা, সেটা যতই শালীন হোক, দু’জনকে কাছে টানে। আমার বিয়ে সময় আমার বন্ধু রব্বানী বলে ওঠে, ‘দেখিস’! আমার বউ এখনো সেই কথা বলে। সিঁদুর পড়ানো, শুভ দৃষ্টি, আংটি খোঁজা, জোড়া বেঁধে সাতপাঁক ঘোরা। সাতপাঁক ঘোরা যদিও অর্থবহ, কিন্তু হয়তো সব পুরুষই জলের নীচে আংটি খোঁজার চেয়ে বউ’র হাত ধরতেই ব্যস্ত থাকে।

বলছিলাম, এমনসব সামাজিক অনুষ্ঠান নব দম্পতিকে কাছে আসতে সহায়তা করে। তারপর আছে বাসী বিয়ে, বৌ-ভাত। বাসরশয্যা তিনদিনের মাথায়? এরমধ্যে নব-দম্পতি অনেকটা কাছাকাছি এসে যায়, এবং একটি প্রস্তুতি থাকে। যদিও আমার জেঠু তোজাম্মেল আলীর ভাষায়, প্রথম রাতে তো তৈরী হতে হতেই সব শেষ! তিনি একটি গল্প বলতেন! আমাদের দেশে বাসর রাতে ‘আঁড়িপাতা’ একদা প্রচলন ছিলো, সচরাচর বৌদি স্থানীয়রা বা ঠাট্টা-তামাশার যোগ্য মেয়েরা তা করতেন। জেঠু’র গল্পটি হচ্ছে, নব-দম্পতি বাসর ঘরে ঘুমাচ্ছেন, প্রথম দিন, স্বামী বেচারা চিন্তা করতে করতেই সব শেষ! এদিকে বিছনার অদূরে ওপরে ‘শিকায়’ একটি পাত্রে দুধ ছিলো। গ্রামদেশে ‘শিকা’-র প্রচলন ছিলো, এখনো কোথাও কোথাও আছে। বাসর ঘরে অন্ধকারে বিড়াল শিকায় দুধ খেতে লাফ দিলে দুধের পাত্রটি পড়ে যায়, এবং বউ’র মাথায় সামান্য আঘাত করে। নুতন বৌ ব্যথায় বলে ওঠে, ‘মাথাটা গেলো’। আঁড়িপাতা এক রমণী ফিসফিস করে বলে ওঠে, ‘মাথা যখন গেছে, বাকিটাও যাবে’।

সাত পাকে ঘোরা: এই সুযোগে সাতপাঁকে ঘোরার অর্থটা বলে নেই, যদিও এটি যথেষ্ট বড়সড়, তবু বলতে তো হবে?  হিন্দু বিয়েতে সাত পাকে ঘোরা একটি আনন্দঘন অনুষ্ঠান। প্রশ্ন উঠতে পারে, সাতবার কেন? আর শুধু বিয়ে কেন, প্রতিমা বিসর্জনের সময়ও সাতপাঁকে ঘোরানো হয়? এখানে দু’টি বিষয়, সাত ও বৃত্তাকারে ঘোরা। আমি যা বলছি, তা নুতন আবিষ্কার নয়, বহুজন বহুভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন, সামাজিক মাধ্যম বা কিঞ্চিৎ পড়াশোনা করে যা জেনেছি, তা আমার ভাষায় প্রকাশ করছি। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমরা জানি ‘বৃত্ত’ মানে ৩৬০ ডিগ্রী। একবার ঘোরা মানে আপনি ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরলেন! ৩৬০ সংখ্যাটি ৭ ব্যতীত ১-৯ প্রতিটি সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য। অর্থাৎ, ৭বার ঘোরা’র অর্থ হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কটি অবিভাজ্য। একইভাবে দেবতা-ভক্ত সম্পর্কটিও অবিভাজ্য। এজন্যেই হিন্দু বিয়েতে সাতবার ঘোরানো’র নিয়ম, যাতে সম্পর্কটি সুদৃঢ় হয়, হয়তো এ কারণে হিন্দুদের মাঝে ‘বিচ্ছেদ’ কম। আবার এই সাতবারের প্রতিটি’র একটি ভিন্ন অর্থ আছে। বিষয়টি যতটা না ধর্মের, আমার ধারণা এটি ততটা সামাজিক।

নিউইয়র্কে প্রবীর রায় ও এলিজাবেথ বার্না-র বিয়েতে সাত-পাঁকে ঘোরা-র রহস্য নিয়ে একটি ‘পুস্তিকা’ দেয়া হয়, সেটি খুঁজলে হয়তো এখনো পাওয়া যাবে, তবে এর তাৎপর্য হচ্ছে: সাত পাঁক ঘুরে স্বামীস্ত্রী তাদের মধ্যকার পবিত্র সম্পর্কটি জীবনের চড়াই-উতরাই বেয়ে হাসি-আনন্দ-দু:খকষ্টে একসাথে পাড়ি দেয়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ও শপথ নেয়। এ সময় স্বামীর ধুতির একাংশ দিয়ে স্ত্রীর শাড়ির আঁচল গিটঠু দিয়ে বাঁধা থাকে, যা সম্পর্কটিকে অচ্ছেদ্য হিসাবে বর্ণিত হয়।  হয়তো এসব কারণেই হিন্দু বিবাহকে বলা হয়, জন্ম-জন্মান্তরের সাথী।

প্রথম পাঁকে নবদম্পতি নুতন জীবনের শুরুতে ঈশ্বরের সদিচ্ছা ও শুভাশীষ কামনা করেন। স্বামী তাঁর পত্নীকে সুখ-শান্তি, ভাল-মন্দ, সন্তান উপহার দেয়ার শপথ নেন, স্ত্রী পরিবারে সবার ভালমন্দ দেখভালের অঙ্গীকার করেন। দ্বিতীয় পাঁকে স্বামী তাঁকে শক্তি জোগাতে স্ত্রীকে অনুরোধ জানান, ভালবাসা ও তাঁর প্রতি অখন্ড মনোযোগী হবার বিনিময়ে স্ত্রী স্বামীর অনুরোধে রাজি হ’ন। তৃতীয় পাঁকে নব দম্পতি ঈশ্বরের কাছে জীবনে সুখী থাকার জন্যে বুদ্ধি, সম্পদ, উন্নতি কামনা করেন। তারা ধর্মে নিষ্ঠাবান থাকার অঙ্গীকার করেন এবং স্ত্রী তাঁর স্বামীকে ভক্তি ও ভালবাসা দেয়ার শপথ নেন। ৪র্থ পাঁকে স্বামী তার জীবনে সুখ-শান্তি-পবিত্রতা আনার জন্যে নব-পরিনিতা বধূকে ধন্যবাদ জানান। বিনিময়ে স্ত্রী তাঁর স্বামীকে পরিপূর্ন সুখী করার অঙ্গীকার করেন। নবদম্পতি উভয়ে একত্রে পরিবারের বয়স্কদের সন্মান ও যত্ন নেয়ার শপথ নেন। ৫ম পাঁকের গুরুত্ব হচ্ছে নবদম্পতি একত্রে বিশ্ব-ব্রমান্ডের সকল জীবের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন। তারা তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত-পরিজন সবার মঙ্গল চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। ষষ্ঠ পাঁকে নব দম্পতি পুন্: তাঁদের সুন্দর- দীর্ঘ জীবন কামনা করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন; স্বামী তাঁর পত্নীকে সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা দেয়ার শপথ নেন, স্ত্রী শপথ নেন তিনি তার স্বামীর সকল মহৎ ও ভালো কাজে পাশে থাকবেন। ৭ম বা শেষ পাঁকে নবদম্পতি তাদের এই নুতন সম্পর্কের দীর্ঘ-স্থায়িত্ব, সমবৃদ্ধি, একে-অপরকে ভালোভাবে বোঝা ও একে-অপরের আনুগত্য কামনা করেন। তাঁরা শপথ নেন, তাদের এই সম্পর্ক সততা ও ভালবাসা দিয়ে শুধু এ জীবন নয়, অনাগত জীবনের জন্যে উন্নীত করে যাবেন।

বউ একটি মিষ্টি শব্দ। বৌ একটি আদর্শ চরিত্র। এই আদর্শের ধাক্কায় স্বামী বেচারা কখনো-সখনো অসুস্থ হয়ে পড়েন বটে, তবে স্ত্রী এরপর যত্ন-আত্তি করে প্রিয়তম স্বামীকে সরিয়ে তুলেন। আপনি বাজারে যাননা, এই ‘খোটা’ তো শুনেছেন? আর বাজারে গেলে যা আনেন তা সবই তাঁর অপছন্দ। আপনি বাজার করতে জানেন না, ফ্রেশ জিনিষটা চেনেন না, কচি বেগুন কিভাবে চিনতে হয়, বা ঢেঁড়স ভেঙ্গে দেখতে হয়, এসব আপনি শেখেননি, পঁচাগলা নিয়ে আসেন, সব জিনিষ বেশি দাম দিয়ে আনেন, সবাই আপনাকে ঠকিয়ে দেয়। এসব শুনতে আপনি অভ্যস্থ হয়ে গেছেন। অনেকদিন আগে একটি গল্প শুনেছিলাম বা পড়েছিলাম তা মনে নেই, সেটি হচ্ছে: স্বামীস্ত্রী ফার্মগেট থাকেন, বাজার করেন কাওরান বাজারে। ছুটির দিনে একদিন সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠে স্বামী দেখেন স্ত্রী ঘরে নেই, কিছুক্ষন পরে তিনি এলেন, বেজায় খুশি। স্বামী দেখলেন স্ত্রী অনেক বাজার করে ফিরেছেন, তিনিও খুশি এ কারণে যে, তাঁকে বাজারে যেতে হবেনা। বউ বড় একটি মাছ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, বলতো, এর দাম কত? স্বামী বললেন, ৩০০০ টাকা? স্ত্রী খুশি হয়ে বললেন, ‘তুমি হলে তাই হতো, আমি এনেছি মাত্র ২২০০টাকা দিয়ে। স্বামী ভাবলেন, তাইতো, এত সস্তা! খুশি হয়ে বললেন, উইকএন্ডের বাজারটা এখন থেকে তুমি করলেই পারো? বউ বললেন, হ্যাঁ, আমি ঘরের বৌ হয়ে বাজারে যাই, আর উনি ঘরে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমান। ব্রেকফাষ্ট, চা-টা খেতে খেতে স্বামী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কাওরান বাজারে গিয়েছিলে? বউ বললেন, কাওরান বাজারে এত টাটকা মাছ পাওয়া যায়? জানালেন তিনি সাভারে গিয়েছিলেন। স্বামী মুখে বললেন, ‘ও’। মনে মনে ভাবলেন,  ‘এতক্ষনে অরিন্দম কহিলা—’ হিসাব করলেন, পঞ্চাশ মাইল যেতে গাড়ীর তেল খরচ, ড্রাইভার, সময়… যাহোক, মুখে কথা না বাড়িয়ে ‘মাছ সস্তা, এতেই খুশি থাকলেন।

কোথায় যেন পড়েছি, বা সামাজিক মাধ্যমে দেখেছিলাম, স্বামী সারাদিন বাইরে খাটাখাটুনি করে ঘরে ফিরে দেখেন স্ত্রী আরামে টিভি দেখছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন, আমি খেটে মরি, আর বউ সামান্য রান্নাবারা, বাচ্চাদের দেখাশোনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই? স্বামী বেচারা আকাশে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করলেন, হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে বৌ বানিয়ে দাও, আর আমার বৌকে স্বামী বানিয়ে দাও। ঈশ্বর বললেন, ‘তথাস্তু, তবে তাই হোক’। বাসনমাজা, কাপড়কাঁচা, রান্নাবাড়া যাবতীয় কাজ করতে করতে দু’দিনেই বৌ-রূপী স্বামী হাঁপিয়ে উঠলেন, এবং আবার প্রার্থনা করলেন, ‘হে ঈশ্বর, আমি পারছিনা, তুমি আমাকে আবার পুরুষ বানিয়ে দাও। ঈশ্বর বললেন, ‘আমি অপারগ, তুমি প্রেগন্যান্ট’!

‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ ম্যুভিটি দেখেছি। আগে গ্রামেগঞ্জে ‘বশীকরণ’ তাবিজ পাওয়া যেতো। বশীকরণ তাবিজের অনেক ঘটনা এখনো গ্রামে-গঞ্জে শোনা যায়! যৌবনে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কের মধ্যে সেক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটা সময় ভাবতাম, হয়তো অতৃপ্ত স্ত্রীলোক ‘মুখরা’ হয়? সেই ভুল ভেঙ্গে গেছে। এরসাথে সেক্সের তেমন সম্পর্ক নেই, এটি একটি অভ্যাস বা বদ-অভ্যাস। তবে এও সত্য যে, যেদিন আপনি স্ত্রীকে বেশি বেশি আদর করবেন, পরদিন আপনার  ভালো যত্নআত্মি হবে। আমাদের অফিসের তোজাম্মেল আলী ছিলেন চিফ রিপোর্টার, আমাদের বেশ বড়, আমি ‘জেঠু’ ডাকতাম। ঠাট্টা করে তিনি বলতেন, ‘শোন ভাতিজা, যেদিন তোমার জ্যাঠাইমাকে ‘আদর’ করি, পরদিন সকালে তিনি ফুরফুরা মেজাজে থাকেন, ‘গুনগুন’ করে গান করেন। এই সেক্সের থিওরি সারাজীবন কাজ করে, তা বলা বাহুল্য।

এ গল্পটি সম্ভবত: ফেইসবুকে দেখেছি: এক স্ত্রী একবার এক সাধু-বাবার কাছে গিয়ে জানান যে তাঁর স্বামী তাঁকে অত্যাচার করে, তিনি এথেকে নিস্তার চান। সবশুনে সাধু একটি ছোট্ট তাবিজ দিয়ে বলেন, যতক্ষন স্বামী ঘরে থাকবে, ততক্ষন যেন তাবিজটি তিনি মুখে রাখেন। কিছুদিন পর মহিলা এসে সাধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁর স্বামী ভালো হয়ে গেছে। সাধু খুশি হলেন, এবং বললেন, পুনরায় সমস্যা হলে যেন তিনি তাবিজটি আবার মুখে রাখেন। মহিলা চলে গেলে এক শিষ্য সাধুকে প্রশংসা করে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবাজী, তাবিজে কি আছে? সাধু জানালেন, তাবিজে কিচ্ছু নেই, তাবিজ মুখে থাকায় মহিলার মুখ বন্ধ ছিলো, সুতরাং ‘নো প্রব্লেম’।

গাড়ীতে সচরাচর স্বামী গাড়ী চালান, ড্রাইভারের পাশের সীটে স্ত্রী বসেন। অভিজ্ঞ মাত্রই জানেন, গাড়িতে অন্য কেউ না থাকলে, স্ত্রী কথা বলেই চলেন, নিজে ড্রাইভার না হয়েও অনবরত ডিরেকশন দেন্। কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম যে, ফ্রন্ট প্যাসেঞ্জার সীট-বেল্ট বাঁধার সাথে সাথে যাত্রীর মুখের ওপর একটি সুন্দর চামড়ার মুখবন্ধ এসে শুধু নাকের নীচের অংশটুকু, মানে মুখটি ঢেকে দেয়? অর্থাৎ যাত্রীর কথা বলা বন্ধ। নিশ্চয়ই কোন গৃহিনীর এতে খুশি হবার কথা নয়, গাড়ি ব্যবসায়ীরা তাই এ ভুল করেননি, এটি মার্কেটে আসেনি।

এবার ঢাকা-কলকাতায় অনেক শীত পড়ে, আমার ছোটভাই রতন একটি চুটকি পোস্টিং করে। আমাদের দেশে বা ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপ-আমেরিকার মত ঘর হিটিং সিষ্টেম নেই, তাই ঘরে প্রচন্ড শীত অনুভূত হয়। রতন বলেছে, প্রচন্ড শীত থেকে বাঁচতে বেশি করে বউ’র সাথে কথা বলুন? বৌ কথায় কথায় এমন কথা বলবে যে আপনার রক্ত গরম হয়ে যাবে, এতে আপনি শীত থেকে বেঁচে যাবেন। একটি কার্টুন দেখলাম, কাঁথা মুড়ি দিয়ে স্বামী বলছেন, প্রচন্ড শীতে কাঁপছি, কি করবো? উত্তর এলো, বৌয়ের বাপের বাড়ির নিন্দা করুন, শীত চলে যাবে!

অমিত-লাবণ্য প্রেক্ষাপটে কবিগুরু তো বলেই দিয়েছেন, বৌ হচ্ছে ‘ভরা কলসি’, যখন খুশি জল খাওয়া যায়। নির্মলেন্দু গুন্ তাঁর ‘স্ত্রী’ কবিতায় আরো একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘যত্রতত্র স্ত্রীশয্যা ব্যতীত পুরুষের কোন শয্যা নেই’। এসব তো যৌবনের কথা, ভাটির টান, বা বার্ধক্যের কথা তো বলতে হবে! ফরাসী সাহিত্যিক ফ্রাঙ্কোয়েস ডি লা বচেফৌকুন্ড নাকি বলেছিলেন যে, ‘বিয়েই একমাত্র যুদ্ধ যেখানে আপনি শত্রুর সাথে ঘুমান’। আসলে কি বিয়ে একটি যুদ্ধ? যদি যুদ্ধ হয়, তবে বলতে হবে, এ যুদ্ধে কোন জয়-পরাজয় নেই, শুধুই ‘সন্ধি’। যৌনতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বলা যায়, ‘যৌনতা এমন এক যুদ্ধ যেখানে উভয়কেই জয়লাভ করতে হয়’। বিয়ে কি শুধুই যৌনতা? বিয়ে নাকি ‘দিল্লি কা লাড্ডু’ যিনি খান তিনি পস্তান, যিনি খাননি তিনিও পস্তান’। পস্তাতেই যদি হবেই, তবে খেয়ে পস্তানোই ভালো? স্ত্রী অমূল্য সম্পদ। স্ত্রীধন শ্রেষ্ট ধন, এ সম্পদের মূল্য তখনই বুঝবেন, যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়বেন। কেউ তখন পাশে থাকবে না, শুধু স্ত্রী সেবা দিয়ে আপনাকে সরিয়ে তুলবেন। বৌ হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, আপনি সেখান থেকে পিএচডি করতে পারেন। লোকে বলে, শিতাংশু’র ভাগ্য ভালো ওঁর বউটি ভালো। সেই অর্থে, আমি স্ত্রী সম্পদে সম্পদশালী। ভাগ্যবান।

বউ নিয়ে যদি মানুষের জীবনে এত অশান্তি, তবু মানুষ বিয়ে করে কেন? লক্ষ টাকার প্রশ্ন। উত্তর হচ্ছে, এন্টিবায়োটিক ওষুধের ‘ভাল-খারাপ’ দু’টি দিকই আছে, খারাপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার চাইতে ভালো’র দিকটা অনেকগুন ভালো বলেই রুগীকে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়, বউ-ও তাই! প্রোপাগান্ডা হিসাবে বউ’র বিরুদ্ধে যত সমালোচনা হউক না কেন ‘বিয়ে’ কিন্তু ততটা খারাপ নয়! এজন্যে বিয়েকে ‘দিল্লি কে লাড্ডু’ বলা হয়! সংস্কৃতিতে আছে, ‘স্ত্রীয়াশ্চম চরিত্রম দেবা ন জানন্তি, কুত মনুষ্যা’, অর্থাৎ স্ত্রীলোকের চরিত্র দেবতারা পর্যন্ত জানেন-না, মানুষ তো কোন ছার্। এখানে চরিত্র বলতে ঠিক অন্যের সাথে ঘুমানো বোঝায় না, বরং বলা যায়, ‘স্বভাব-চরিত্র’। কে যেন বলেছেন, স্ত্রীলোক চিনেছেন বলে বড়াই করবেন না, আর একটি মহিলা আপনাকে কি সুশিক্ষা দেবে তা আপনি জানেন-না।

অনন্তকাল ধরে সবাই জানে, সেক্সে পুরুষের ভূমিকা বেশি। আমাদের দেশের মহিলারা প্রায়শ: সেক্স বুঝতে বুঝতে অনেকটা সময় চলে যায়! কারণ পুরুষ তাঁর প্রয়োজন শেষে উঠে পড়েন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজে পুরুষের কর্তৃত্ব বেশি, তাই নারীর চাহিদা মেটানোর প্রয়োজন বুঝেন না, স্ত্রীও লজ্জ্বায় মুখ খুলেন না! অর্থাৎ সেক্সের ক্ষেত্রে যে একটা হিসাব-নিকেশ আছে, উভয়ের তৃপ্ত হবার ব্যাপার আছে, তা অনেকেই জানেন না, বা জানলেও পাত্তা দিতে চাননা। নারীর বহুগামী হবার এটি একটি কারণ। অনেক নারী আছেন তাদের এক পুরুষে হয়না, এটি অস্বাভাবিক নয়। একই কথা পুরুষের জন্যেও প্রযোজ্য। এটি দেহের ওপর নির্ভরশীল, দেহ অনুযায়ী চাহিদা। প্রকৃতির নিয়ম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক পুরুষ-এক নারী, ব্যতিক্রম বেশি নয়, তবে আছে। ‘টেষ্ট চেঞ্জ’ বা স্বাদ পরিবর্তন এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। দিনশেষে সবই এক! এজন্যেই হয়তো কবি গেয়েছেন, ‘কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রাঙ্গা’। ছেলেবেলায় বন্ধুরা বলতো, ‘যৌবনের জ্বালায় চেয়েছিলাম এক সুন্দরী নারী, পেয়েছি এক ফকিরনি, তাঁকেই কাছে টেনে নিয়েছি, তারও তো সবই আছে’! এমন ডায়লগ তো বেশ পুরানো যে, ‘ওর মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই’? পশ্চিমা দেশে কিন্তু স্বামীকে জমাখরচ দিতে হয়, নারী তাঁর হিসাবের পাওনা বুঝে নিতে জানেন। এদেশে এসে বাঙ্গালী বাবুদেরও এ ঝামেলা পোহাতে হয় বটে! এদেশের রমণীরা বলেন, ‘আমরা, মানে ভারতীয় উপমহাদেশের পুরুষরা সেক্সে এক্সপার্ট নই’। স্ত্রীর সাথে ঘুমানো, বাচ্চা বানানো আর সেক্স কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। এজন্যে নারীকে গালি দিয়ে লাভ নেই, প্রতিটি যৌনাচারের জন্যে নারী-পুরুষ সমানভাবে দায়ী।

শ্বাশুড়ী-বৌমা সম্পর্ক নিয়ে কত কথাই না আছে? যৌবনে স্ত্রীরা স্বামীর সাথে একলা থাকতে চায়, বার্ধক্যে একই রমণী সবাইকে নিয়ে একত্রে থাকতে চায়। শ্বাশুড়ী-বৌ গন্ডগোলে আমি একবার বলেছিলাম যে, ‘সাস ভি কভু বহু থি’, অর্থাৎ শ্বাশুড়ীও কখনো বৌ ছিলেন, অথবা আজ যিনি বধূ, কাল তিনি শ্বাশুড়ী হবেন। যাকে বলেছিলাম তিনি রেগে গিয়েছেন, এখন তিনি শ্বাশুড়ী, বৌমাকে জমা-খরচ দিয়েই চলেন। এটাই নিয়ম। সবাই বলে বৌ’র মুখ বন্ধ থাকলে সব ভালো, অথচ ‘বোবা মেয়ে’ কেউ বিয়ে করতে চায়না। ধর্ষিতা কোন মেয়েকে পুরুষ সচরাচর বিয়ে করতে করতে চায় না, অথচ একই পুরুষ অন্যের বৌ নিয়ে ভেগে যায়! কি বিচিত্র সেলুকাস! হিন্দুরা বলে থাকেন, বিয়ে সাত জনমের। সমস্যা হচ্ছে, রমণীরা সাত জনমে একই স্বামী চাইলেও স্বামীরা ভিন্ন ভিন্ন স্ত্রী চান? এ সমস্যা সমাধানে দরবার বসলে, বিচারক বলেন, একই স্বামী চাইলে স্ত্রীদের একই শ্বাশুড়ী গ্রহণ করতে হবে। পরে কি হয়েছিলো তা জানা যায়নি! সমাজে কথাটি প্রচলিত যে, ভাইয়ে-ভাইয়ে সমস্যা হবার কারণ বৌ! এক বোন তাঁর ভাইকে পরামর্শ দেয় যে, ভাই যেন বৌয়ের সাথে ‘চিৎ’ হয়ে ঘুমায়? অনেকের সামনে অবুঝ বোনটি কথাটি বলে, সবাই অবাক হয়! পরে বোঝা যায়, ওর কথার অর্থ হচ্ছে, চিৎ হয়ে ঘুমালে বৌ কানে কানে যে কুপরামর্শ দেবে, তা এক কান দিয়ে ঢুকে আর এক কান দিয়ে বেরিয়ে যাবে, আর কাত হয়ে ঘুমালে তা এক কান দিয়ে ঢুকে বেরুবার পথ না পেয়ে ভিতরেই থেকে যাবে।

বৌ হচ্ছে ‘টক-মিষ্টি-ঝাল’, ‘একের ভেতরে বহু’, এমন সুবিধা আপনি কোথায় পাবেন? এবার  বিয়ের রাতে ‘বিড়াল মারা’র গল্পটি বলি,  এটি বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে জানেন, আমি যেভাবে জানি তাহলো: দুই রাজপুত্র দেশ-দেশান্তর ঘুরে ক্লান্ত হয়ে একদিন অন্য এক রাজ্যে এক গাছের নীচে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই রাজ্যের প্রহরীরা গুপ্তচর ভেবে তাদের বেঁধে রাজার কাছে নিয়ে যায়। রাজা সবকিছু শুনে দুই রাজপুত্রের সাথে তাঁর দুই কন্যার বিয়ে দিয়ে দেন্। কিছুদিন পর দেখা যায়, এক রাজপুত্র বেশ তরতাজা, অন্যজন  মনমরা, কাহিল। দুইভাই তখন একে অপরের কুশল জানতে চায়, বড়ভাই ছোট রাজপুত্রের কাছে তাঁর মনমরা থাকার কারণ, ছোটভাইও দাদার কাছে জানতে চায় তাঁর তরতাজা থাকার কারণ। দু’জন দু’জনের কাহিনী শোনার পর বড় রাজপুত্র বললেন, ‘ও তুমি বিয়ের রাতে বিড়াল মারোনি’? ছোটভাই আসলে বউ’র অত্যাচারে কাহিল! তিনি জানতে চাইলেন, বিড়াল মারার ঘটনাটি কি? বড়ভাই বললেন, ‘আমার বউ’র একটি পোষা বিড়াল ছিলো। বিয়ের রাতে বউ খেতে দেয়, বিড়ালটি তখন বারংবার জ্বালাতন করছিলো। এরবার, দুইবার, তিনবার, রাজপুত্র এরপর তলোয়ারের এক কোপে বিড়ালটি’র মুণ্ডচ্ছেদ করে দেয়? প্রিয় বিড়ালের মৃত্যুতে বৌ ভীষণ রেগে যায়, এবং চিল্লাচিল্লি শুরু করে। রাজপুত্র তখন বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমারও একই দশা হবে’? ব্যাস! গল্প তো গল্পই, এতে ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই?

‘স্ত্রৈণ’ শব্দটি বঙ্গভাণ্ডারে কে আবিষ্কার করেছেন আমার জানা নেই! তবে সব পুরুষ ‘স্ত্রৈণ’ তা ভাবার কোন কারণ নেই, আমাদের মত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বরং উল্টোটি’র প্রধান্য বেশি। ধারণা করি যাঁরা আমার সাথে একমত হবেন না, তাঁরা এ গল্পটি বলবেন? এক রাজা একদিন রাজ্যের সকল পুরুষকে ডাকলেন। রানী বলেছেন, সকল পুরুষই বউকে ভয় পায়, রাজা তিনি তা মিথ্যা প্রমান করবেন। রাজা সকল পুরুষকে দুইভাগে বিভক্ত হওয়ার নির্দেশ দিলেন, একভাগে যাঁরা বৌকে ভয় পায়, অন্যভাগে যারা বৌকে ভয় পায়না। দেখা গেল সব পুরুষ ‘ভয় পাওয়ার’ দিকে, শুধু এক বীরপুঙ্গব বৌকে ভয় না পাওয়ার দিকে একাকী দাঁড়িয়ে আছেন। রাজা বিজয়ের হাসি দিয়ে রানীকে বললেন, ‘দেখেছো, অন্তত: একজন আমার রাজ্যে বউকে ভয় পায়না। রানী বললেন, ‘আচ্ছা, লোকটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা যাক’। রাজা লোকটিকে ডেকে পাঠালেন, জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তিনি একাকী একদিকে ছিলেন? লোকটি জানালেন, ‘তাঁর স্ত্রী বলে দিয়েছেন যেদিকে ভীড় থাকবে, তিনি যেন সেদিকে না থাকেন!  এজন্যেই হয়তো কবি বলেছেন, ‘রাজা করিছে রাজ্য শাসন, রাজা-রে শাসিছে রানী’।

শেষ করি গর্ভ বেদনার গল্প দিয়ে। সন্তান জন্ম দেয়া, নয় মাস গর্ভে ধারণ ইত্যাকার কষ্টগুলো সব মেয়েরাই করে, বলা হয়, কষ্ট না করলে সন্তানের হাসিমুখ দেখবে কি করে? আসলেই তো, সন্তানের ‘ওমা, ওমা’ করে চিৎকারে মা তাঁর নয় মাসের দু:খকষ্ট ভুলে যান। শুনেছি, বহুকাল আগে নারীবাদী মহিলারা একবার মিছিল করে ঈশ্বরের কাছে যান, এবং বলেন, নয় মাস গর্ভধারণ, সন্তান প্রসবকালীন ব্যাথা ইত্যাদি’র কিছু দায়িত্ব পুরুষদের দেয়া হোক। ঈশ্বর রাজি হলেন, এবং বললেন, এখন থেকে প্রসব বেদনা হবে সন্তানের পিতার। নারীবাদীরা বিজয় মিছিল করে চলে এলেন। কিছুদিন পর ঐ নারীনেত্রীর সন্তান ভুমিষ্ট হবার সময় আসে, তিনি নার্সিংহোমে ভর্তি হ’ন, পাশে স্বামী। সন্তান ভুমিষ্ট হয় হয় অবস্থা, কিন্তু স্বামীর প্রসব বেদনা হচ্ছেনা? হটাৎ শোনা গেল যে, বাইরে এক লোক প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, তিনি মহিলা’র ড্রাইভার। কি আর করা, মহিলারা আবার মিছিল করে ঈশ্বরের কাছে যান, এবং দাবি করেন, আমাদের ব্যথা আমাদের থাক। ঈশ্বর বললেন, ‘তথাস্তু’। পুরুষরা ব্যথা থেকে বেঁচে যায়। (ঢাকার বইমেলা ২০২৪-এ লেখকের বই ‘সমালোচনা থেকে)। [email protected]

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন