তুমি তো বলে ছিলে , আকাশ-শব্দ ধরতে
ভালবাসার অভিমান গুলো ছুঁয়ে আসতে ;
তার পর দুজনই হেঁটে গেছি
নির্জন এক জলাশয়ের কাছে ;
তাকে সাক্ষী রেখে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে ছিল ;
এখন চারিদিকে বর্ষামঙ্গল কাব্য ;
থৈ থৈ জলের উপর ভেসে চলছে রুপালী চাঁদ ,
চাঁদ সওদাগরের অব্যাক্ত যন্ত্রণা ,
লখিন্দর-বেহুলার কলার মান্দাস ;
এক নদী থেকে আরেক নদীতে ঢুকে পড়ে
আদ্র বাতাস ;
আর ঠিক তখনই বানভাসি মানুষ গুলোর
করুণ চোখ হয়ে যায় সপ্তডিঙা ;
তোমার সঙ্গে এক যুগ হয়ে গেল দেখা হয়নি ,
কথা হয়নি কোনও ভাবে ;
কেবল মাত্র স্মৃতি গুলো মাঝে মধ্যে ডানা ঝাপটায় ,
মেলে ধরতে চায় ইচ্ছে মতো ;
বিবর্ণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়তো অনেকটাই শান্ত ;
সারনাথ থেকে অশোক স্তম্ভ পাওয়ার পর
একটু একটু করে
জেগে উঠেছে অরণ্যের মানুষ গুলো ;
গুছিয়ে নিয়েছে তাদের পূর্ব পুরুষের
পরম্পরা সকল ;
একটা ছন্দে চলে জীবন ও জীবনাচার ;
পুরানো বীজ থেকে যখন নতুন চারা গাছ
জন্ম নেয়
সে জানে প্রতিকূল পরিবেশ কে
কি ভাবে করে নিতে হয় অনুকূল ;
কি ভাবে মেলে ধরতে হয় সবুজ পথ ;
ঠিক তুমি যেভাবে শিখিয়ে ছিলে
প্রেমের শব্দ গুলোকে সাজিয়ে নিতে ;
বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের দাপট বেড়ে গেলে
মা-পাখি ডানা দুটি আরও নিবিড় ভাবে
ঢেকে দেয় তার ছানাদের উপর ;
একটা ছুটন্ত বাতাস সমগ্ৰ অরণ্য জুড়ে
বলে যায়
বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প ;
যুদ্ধ জয় করে ফেরা সম্রাট অশোকের নীরব কান্না ;
হৃদয় জয় করে বাঁচার আনন্দ ;
সেই নির্জন জলাশয় এখনও তার জলের স্মৃতি থেকে
বার বার ফিরিয়ে দিতে চায় তাকে সাক্ষী রাখা কথা গুলো ;
একটা দুপুর , একটা রাত মনে করিয়ে দেয়
কি ভাবে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে ,
আবার কিভাবে সে সম্পর্ক ভেঙে যায় ;
কাছের মানুষ গুলো এক এক করে দূরে সরে গেলে
দূরের মানুষ গুলো একটু একটু করে চলে আসে
বুকের কাছাকাছি ;
আর ঠিক তখনই শুরু হয় অরণ্যের পরব ;
এক পুরু ধুলো গলে গলে পড়ে
পথের দু ধারে দাঁড়িয়ে থাকা
গাছ গুলোর সবুজ পাতা থেকে ;
ঠিক যেভাবে আমার ও আমাদের বুকের উপর
জমে থাকা ধুলো গলে গলে যায়
হঠাৎ করে আসা জীবনের মুসলধরা বৃষ্টিতে ;
তার পর একে একে ডুবে যায় আমাদেরই চরাচর ;
হত তো সেখানেই জন্ম নিতে পারে
প্রেমের কোনও এক দ্বীপ ভূমি ;
কথা তো ছিল দুজনে কোনও এক বর্ষা দিনে
ভিজতে ভিজতে ঢুকে পড়বো
অচেনা এক আদিবাসী পাড়াতে ;
তাদের সঙ্গে কাটিয়ে দেবো সারা রাত
মহুল পিয়ে ,
মাদলের বোলে …
শাল পাতার থালায় মোটা চালের ভাতে ;
বৃষ্টি হয়ে চলেছে সেই সকল থেকে ;
হয় তো থামবে না সারা রাতেও ;
হয় তো এ সময়ে ফিরে আসবে মুঠো মুঠো অন্ধকার ,
একের পর এক বজ্রপাত , মৃত্যু ;
মৃত্যুকে কে না ভয় পায় , আমিও ;
তবুও , তোমার জন্য বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
ভিজতে ভিজতে এগিয়ে চলেছি
বেহুলার কাছে ;
যে কিনা ফিরিয়ে আনতে জানে প্রাণ শক্তি ;
নদী মাতৃক দেশে বার বার ডুবে যায় ,
ভেসে যায় ঘর-সংসার ,
অথচ , আবার নতুন করে বাঁচে বানভাসি
দেহাতি মানুষ গুলো ;
নতুন করে করে গড়ে তোলে জীবনের আরেক অধ্যায় ;
আর আমি পারবো না !
তুমি তো শিখিয়ে ছিল কি ভাবে একটা একটা করে
ডাঙায় উঠে আসা জিয়ল মাছ ধরতে হয় ;
কি ভাবে কাটাতে হয় জলজ-জীবন ;
এতো দিনে একা একা হাঁটতে হাঁটতে ছুঁয়ে এসেছি
গঙ্গা ও পদ্মার চর , নম্র ঢেউ ;
রুপালি ইলিশের আঁশের ভিতর সযত্নে
রেখে দিয়েছি শত সহস্র বছরের আবেগ ও ভালবাসা ;
সকলেই একটু একটু করে ছুঁয়ে যায় আদ্র বাতাস ,
ফেলে আসা সময়ের ধারাপাত ;
তোমার বিবর্ণ ক্যানভাসে যে দিন এক ফোঁটা
বৃষ্টির জল কোনও ভাবে লাগবে
সে দিনই জেগে উঠবে বিশ্ব চরাচর ;
ঠিক তখনই জলের স্মৃতি শক্তি থেকে জন্ম নেবে তুমি ;
কারণ তুমি তো আমি বা আমরা নও
যে অতি সহজে সহজ লভ্য হয়ে যাবে এ বর্ষা মঙ্গলে ।