বিজয় দিবসের কবিতা ।।।।। বিচিত্র কুমার
(০১)
মুক্তির নৌকা
বিজয়ের আলোয় উদিত হয়, অরুণিমার প্রথম কিরণ,
এ যেন সূর্যের সোনালি নৌকা, যে নিয়ে আসছে শান্তির পারাবার।
পাশাপাশি ভেসে ওঠে আকাশের নীল, এক দুঃসাহসী অগ্নি,
যেন হাজারো মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগের ঝিলিক, যাদের রক্ত হলো রঙিন বর্ণমালা।
হাওয়ার বেগে ভেসে চলে এক স্বপ্নময় জাহাজ,
এ যেন বাংলার মাটির গন্ধ, যার ধ্বনি পৌঁছেছে সারা পৃথিবীজুড়ে।
মাটি, আকাশ আর জল—সবই হয়ে ওঠে এক অটুট বন্ধন,
যেমন নদীর স্রোত আর পাথরের অনন্ত শীতলতা, এক সাথে মিলন করে।
বীরেরা যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, সেগুলো ছিলো জয়ের অঙ্গীকার,
যেন অন্ধকার রাতের মধ্যে জ্বলন্ত দীপ, যা পথ দেখায় পাড়ি দেয়ার জন্য।
পলাশের ফুল, শুকনো পাতার মতো, মাটির বুকে লুকিয়ে থাকা স্মৃতি,
এরা যেন বিজয়ের পরিহাসের নীরব সাক্ষী, অশ্রু এবং হাসির সঙ্গী।
মুক্তির স্রোত যখন প্রবাহিত হল, তখন ভেসে আসলো এক স্বাধীন নদী,
যা ছড়িয়ে দিচ্ছিলো শান্তির অমৃত, এক অমলিন প্রাপ্তির গান।
যার ভেতর বাজছিল বিজয়ের এক মন্ত্র, যা আজও আমাদের শরণার্থী,
সে নৌকার মতো, যেটি পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ সাগরের রক্তিম ঢেউয়ে।
এ বিজয় এক পৃথিবীকে উন্মোচন করে, এক বীণার সুরে,
যার তালে তালে আজও চলে গানের স্বর, এই দেশের রক্তের ভিড়ে।
বিজয়ের সব চিহ্ন, মেঘের মাঝে রঙিন অভিসন্ধি,
সন্ধ্যাবেলায় এক পতাকার মতো সশব্দে উড়তে থাকে, আমরা সকলেই এক সাথে, এক গৌরবময় ধ্বনিতে।
মুক্তির নৌকা এগিয়ে চলেছে, এক পৃথিবীকে ভরিয়ে দিয়ে,
অথবা নীল আকাশে এক দীর্ঘ যাত্রা, যেখানে থেমে থাকেনা জীবন।
মুক্তির গান এখন আমাদের অঙ্গীকার, বাংলার হৃদয়ে বাজে,
এ যেন নদী, সাগর, আকাশ—সবই আমাদের সম্পদ, এক অমৃত যাত্রার পরিসমাপ্তি।
স্বাধীনতার বীজমন্ত্র
স্বাধীনতার বীজমন্ত্র, যেন আকাশে বাজানো শঙ্খের ধ্বনি,
যে ধ্বনিতে মিলিয়ে যায় শতাব্দীজীবী দাসত্বের কালো মেঘ।
এমনি একদিন, আগুনে পোড়া মাটিতে চারা হয়ে ফুটেছিল স্বপ্ন,
যেমন শীতের শেষে গাছের কুঁড়ি দেয় নতুন পাতার বার্তা।
বাংলাদেশের ধুলোয় গড়ানো ইতিহাস, যেন নদীর স্রোত,
যে স্রোত কখনো হারায় না, কেবল সীমানা ছাড়িয়ে যায় দূরে।
এমন এক স্রোত ছিল, যে স্রোতে তুমুল আগুনে ভস্মীভূত ছিল সব কিছু,
কিন্তু সেই আগুনই আবার জন্ম দিয়েছিল নতুন সূর্য।
তুমি শুনেছো কি? বাংলাদেশের মাটিতে ধ্বনিত হয়েছিল বিজয়ের বীজ,
যেমন বৈশাখী ঝড়ের ঝাঁপে দূর আকাশে ভেঙে পড়ে চাঁদের আলো।
তুমি কি জানো, স্বাধীনতার রূপ যেন এক অদ্ভুত ফুল,
যে ফুলের পাপড়িতে সোনা ঝরে, গন্ধে সঞ্চালিত হয় আশা।
ধন্য সেই ভূমি, যে ভূমি মাঝে মাঝে কাঁপে শোকের তরঙ্গে,
যেমন বর্ষার আকাশে এক ফোঁটা জলরাশি বুকে জমে যায়।
তবুও সেই শোকের মধ্যে ছিল এক প্রবাহ, এক কণ্ঠস্বর,
যে কণ্ঠস্বর হলো এক মুক্তির গান, যেন স্নিগ্ধ ভোরের রোদ।
স্বাধীনতার দিন, তা যেন মেঘের মধ্যে লুকানো বৃষ্টি,
যে বৃষ্টি শুয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের হৃদয়ে,
অথবা চন্দ্রিমার আলো, যেটি আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল মুক্তির অঙ্গীকার।
এই মাটি, এই আকাশ, সব কিছু যেন পুনঃজন্মের ছন্দে নাচে।
গাঙচিলের মুক্তিপাখি, যে পাখি উড়েছিল নক্ষত্রপথে,
তার দেহে ছিল স্বাধীনতার নীল চিহ্ন, আর কণ্ঠে বিজয়ের গান।
তারই মতো, আমরা আজকে বলি, এক স্বপ্নের মতো,
স্বাধীনতার বীজ, চিরকাল অঙ্কুরিত হবে, প্রবাহিত হবে চিরকাল!
আজকের দিনে, বাংলাদেশ অমলিন ঐক্যের প্রতীক,
যেমন প্রাচীন বৃক্ষের তলে রচনা হয় নতুন জীবনের মন্ত্র।
স্বাধীনতা, যে মন্ত্র আজও আমাদের শিরে জ্বলছে অদম্য আগুনের মতো,
এ আগুনের আলোতেই আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের গর্ব, আমাদের বিজয়।
(০৩)
বিজয়ের রক্তজবা
রক্তজবা, বিজয়ের রক্তজবা, যেন কাঁপে চিরন্তন আগুনের শিখা,
স্বাধীনতার শুদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে, শঙ্খধ্বনি যে আকাশে বাজে।
যেন আকাশের কালো মেঘ ভেদ করে উড়ে চলে নতুন সূর্যের রথ,
যতসব বিষণ্ন শোকের ছায়া মুছে দিয়ে, আশার মঞ্চে জ্বলে ওঠে নবতর গাথা।
দূর থেকে মনে হয়, ওই উজ্জ্বল পাহাড়ের মুকুট যেন বিজয়ের মুকুট,
যে মাটির উপর শিহরণ তুলে, স্রষ্টা রেখেছিল সংগ্রামের গূঢ় পুঁথি।
পৃথিবী বুকে যখন আগুনের নাচ, আমাদের হৃদয়ে তখন এক নিবিড় শান্তি,
সকল গর্জনের মাঝে অমর হয়ে উঠেছে দেশপ্রেমের সেই মহীয়ান গাথা।
পদ্মফুলের মুকুলে যেমন ফোটে তাজা শিশিরের রঙ,
তেমনি রক্তঝরা মাটিতে উঠে আসে বিজয়ের নীল আকাশের গন্ধ।
সেই জয়ন্তীকে দেখে, যাকে চেয়ে আমাদের চোখে অশ্রু ছড়িয়ে যায়,
সেই রাতের সংগ্রামে আমাদের সাহসের চিরন্তন সুর এক করতালি হয়ে বাজে।
যেমন সাগরের ঢেউয়ে ঢেউ খেলে, তেমনি রক্তঝরা সেই নদীর ঘূর্ণি,
যা আছড়ে পড়ে বিজয়ের স্রোতে, হারিয়ে যায় শত্রু ও কষ্টের জ্বালা।
এই বিজয়ের রক্তজবা, যেন এক প্রার্থনা, প্রতিটি গালিতে স্পন্দিত বায়ু,
যে বয়ে চলে মুক্তির চিহ্ন, হৃদয়ে হৃদয়ে, হয়ে ওঠে এক অবিরাম চিত্রশিল্প।
শত গুলি, শত বোমার মাঝে, যখন বিভাজন অমৃত হয়,
তখন এই রক্তজবা যেন এক চিরন্তন গান, হারিয়ে যায় কালো নক্ষত্রের গাঁথা।
প্রাণের গভীর থেকে উঠে আসে এক ভোর, যেন হাজার হাজার শঙ্খবেলায় বাজে,
তাহলে আমরা জানি, বিজয়ের রক্তজবা, ত্রাসে নয়, নতুন পৃথিবীর কবিতা!
এবং সে কবিতা, এই বিজয়ের প্রেরণা, যেন আকাশে মুকুলিত রক্তজবা,
আমাদের সঙ্গী, আমাদের গৌরব, এবং আমাদের অধিকার!