ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

নতুন বছরের একগুচ্ছ কবিতা ।।।।।  বিচিত্র কুমার

নতুন বছরের একগুচ্ছ কবিতা ।।।।।  বিচিত্র কুমার

১.
চক্রের ভাঙন 

নতুন বছর আসে,
তবু কিছু প্রশ্ন থেকে যায়—
সময় কি বয়ে আনে মুক্তি,
নাকি পুরনো ক্ষত মেলে ধরে নতুন আলোয়?
সেই ক্ষত, যা লুকিয়ে থাকে প্রতিদিনের হাসির নিচে,
অগোচরে রক্তাক্ত করে হৃদয়ের গভীর কোণ।

প্রতিশ্রুতির ভাঁজে জড়িয়ে থাকে ক্লান্তি,
তবু, হৃদয় এক আশ্চর্য খুঁজে ফেরে।
তোমার জানালা খুলে দেখো—
সূর্যের প্রথম আলো যখন ঘরে ঢোকে,
তোমার ক্লান্ত চোখে সে কী দেখায়?
সে কি পুরনো স্মৃতির ছায়া,
নাকি নতুন স্বপ্নের ইশারা?

বছরের প্রথম দিনটি
তোমার শৈল্পিক ক্যানভাস।
তুমি কি তুলিতে রঙ তুলবে?
নাকি অতীতের ধূসর ধুলোয়
ঢেকে দেবে তার প্রতিটি কোণ?

সময় শেখায়,
চক্র ভাঙতে হলে দরকার
সাহস আর ভাঙনের আকাঙ্ক্ষা।
যদি চক্র ভাঙতে পারো,
তোমার পথ খুলে যাবে—
যে পথের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে
তোমার নতুন তুমি।

২.
সময়ের শস্যক্ষেত্র

নতুন বছরের প্রতিটি দিন যেন
একটি শস্যদানা।
তুমি কি মাটির গভীরে বুনে দেবে তা?
কী জন্মাবে জানো না,
তবু, অঙ্কুরিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।

তোমার হাতে যদি শস্যের বীজ থাকে,
তবু তুমি যদি মাটিতে বুনে না দাও,
সে বীজ মরে যাবে—
তোমার অজান্তেই।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত
একটি শস্যক্ষেত্র।
তুমি কি চাষ করবে তা,
নাকি নষ্ট হতে দেবে শুকনো জমি?
সেই জমি যেখানে তোমার
স্বপ্নগুলো শিকড় গাঁথতে চায়।
এই বছর,
তোমাকে হতে হবে একজন কৃষক।

কৃষকের কাজ সহজ নয়।
সে কাদা মাখে, ধৈর্য ধরে,
প্রত্যেকটা ফসলের পেছনে ঢালে ভালোবাসা।
তোমার স্বপ্নও তাই।
তোমাকে কাজ করতে হবে,
তোমার প্রত্যাশার প্রতিটি শস্যদানা
যত্নে বুনতে হবে।
তুমি যদি কাজ করো,
তাহলেই এই বছর
তোমার হাত ভর্তি করবে সোনালি ফসল।

৩.
নিঃশব্দ শপথ

নতুন বছরের প্রথম নিশ্বাসে
একটি শপথ নাও—
শব্দহীন,
তবু মনের গভীরে স্পষ্ট।
তোমার শপথ যেন বাতাসের মতো—
অদৃশ্য, তবু স্পর্শযোগ্য।
তুমি কী শপথ করবে?

সময়ের সঙ্গে একাত্ম হও,
পুরনো দিনগুলো তোমার পায়ের নিচে
একটি সেতু।
তোমার শপথ জানে,
তোমার পদচিহ্ন কোথায় পড়বে।

তুমি কি অপেক্ষা করবে
একটি নতুন প্রভাতের জন্য?
নাকি প্রথম পদক্ষেপ নিজেই নেবে?
তোমার শপথের আলো জ্বলবে
অন্ধকারেও,
যদি তুমি তাকে বিশ্বাস করো।

তুমি যদি চুপ থেকেও শপথ করো,
তাহলেও সে শপথ
তোমাকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।
নতুন বছর তোমার হবে,
যদি তুমি সাহস পাও
নিজের শপথ পূরণ করতে।

৪.
সময়ের সিঁড়ি

পুরনো দিনের সিঁড়ি বেয়ে
তোমাকে উঠতে হবে।
সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে জমে আছে
হারানো মুহূর্তের স্মৃতি।
তোমার ব্যর্থতা,
তোমার ছোঁয়া-লাগা সফলতা।

তুমি কি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবে,
নাকি নিচে নেমে যাবে
ভীত, ক্লান্ত, নিরাশ হয়ে?
তোমার সামনে একটি দরজা।
তুমি কি সেই দরজা খুলবে?
দরজার ওপারে যে জীবন অপেক্ষায় আছে,
তোমার সাহস ছাড়া তাকে ছোঁয়া অসম্ভব।

সিঁড়ি বেয়ে ওঠা সহজ নয়।
তোমাকে হারাতে হবে
তোমার অলসতা,
তোমার নিজের তৈরি ভয়।
তুমি যদি উপরে উঠতে পারো,
তোমার সামনে খুলবে
সম্ভাবনার একটি নতুন পৃথিবী।

৫.
মুক্তির প্রহর

নতুন বছর,
তোমাকে একটি চিঠি লিখেছি।
তুমি কি পড়বে?
এই চিঠিতে আছে আমার
অগোচরে রাখা সব কথা,
আমার আশা,
আমার ব্যথা,
আমার স্বপ্ন।

পুরনো বছরগুলো আমার
গায়ের চিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে।
কিন্তু এই বছর
আমি চাই,
সে চিহ্নগুলো মুছে যাক।

তুমি কি আমাকে মুক্তি দেবে?
আমার ভেতরের সেই বদ্ধ কক্ষ,
যেখানে আমি নিজেই বন্দী,
তোমার আলো কি সেই দরজা খুলে দেবে?
নতুন বছরের প্রথম আলোয়,
আমি শপথ করব—
আমি নিজের মুক্তি চাই।
এই বছর হবে আমার।
——–


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন