সাহিত্য ও কবিতা

অমিত পর্ব- ৮ |||| সুশীল কুমার পোদ্দার

অমিত পর্ব - ৯

অমিত পর্ব- ৮ |||| সুশীল কুমার পোদ্দার

পূর্ব প্রকাশের পর…

…অজস্র করতালির মধ্য দিয়ে অমিত মাথা নিচু করে ফিরে আসে তার আসনে। দূর থেকে আলখাল্লা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। অতি উৎসাহে চিৎকার করে বলে উঠে – বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ওর এই অপ্রত্যাশিত আচরণে সবাই বিচলিত হয়ে তাকিয়ে থাকে ওদের প্রতি। পেছন থেকে গেরুয়া ওর কাপড় টেনে ধরে ওকে থামাতে চায়। আলখাল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গেরুয়ার প্রতি। আরে মিয়া, আমার কাপড় ধরে টানা টানি করেন কিসের লাইগ্যা। আমি মানুষটা খারাপ হইলেও দেশের প্রতি দরদ আছে, আপনার মতো বেঈমান না। আপনি তো হালায় হাজার হাজার কোটি মাইরা নিয়ে কানাডা পালাইয়া আইছেন। আজকে আমাদের দেশের এই পোলা, এতো বড় একটা কাজ করছে, এতগুলো মানুষের সম্মান পাইছে, দেশী হিসেবে যদি ওকে এইটুকু সম্মান জানাতে না পারি তাহলে মানুষ হিসেবে বাইচ্যা থাইকা কি লাভ! তুমি তো হালায় ছুপা রুস্তম। গলায় আইসো – বলেই আলখাল্লা অমিতের গালে চপাত করে একটা চুমু খেয়ে বসে। অমিতের গা ঘিন ঘিন করে উঠে। ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দেয়।

এদিকে সেক্যুরিটি এটাকে ভায়োলেন্স ভেবে দৌড়ে আসে। অমিতকে ওরা ঘিরে ফেলে। আলখাল্লাকে তার আসনে বসতে বলে। ঘটনার আকস্মিকতায় গেরুয়া স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। বসে ভাবতে থাকে এমন একটা লোকের সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়া কতোটা যুক্তিযুক্ত। আলখাল্লা তার ভুল বুঝতে পেরে গেরুয়ার দিকে চোখ চেপে ওকে হাসাতে চেষ্টা করে। গেরুয়ার কোন ভাবান্তর হয় না। সময় গড়িয়ে যায় । মাইকে অধিবেশনের সমাপ্তির ঘোষণা আসে। উপস্থিত পুনর্জীবিত মানুষ গুলোকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়। ওরা লাইন ধরে এক এক ডেস্কের দিকে এগিয়ে চলে।

প্রত্যেক ডেস্কের সামনে কম্পিঊটার নিয়ে বসে আছে স্বল্পবসনা মেয়ে। ওরা একেকজনের সাথে কথা বলে ওদের জীবিতকালীন সময়ের ব্যবহৃত জিনিষপত্র গুলো ফেরত দিচ্ছে। এবার আসে অমিতের পালা। অমিত বিনীত হয়ে বলে – আমি কি কোন সত্যিকার মানবীর সাথে কথা বলছি ? তার উত্তরে মেয়েটা খল খলিয়ে হেসে উঠে। হাই মি অমিত, আপনি কি আপনার জিনিষ পত্রগুলো ফেরৎ পেতে চান? অমিত মাথা নেড়ে সন্মতি জানায়। মেয়েটা একাএকাই কার সাথে যেন কথা বলে। অমিত বুঝতে পারে মেয়েটা নিউইয়র্কে কার সাথে যেন কথা বলছে ওর জিনিষপত্রগুলো পাঠিয়ে দেবার জন্য। মেয়েটা কথা বন্ধ করে ওকে দুটো মিনিট অপেক্ষা করতে বলে। অমিত বুঝে পায় না কেমন করে দু’মিনিটে ওর জিনিসপত্র নিউইয়র্ক থেকে আসবে! মুহূর্তে এক যুবক একটা পুরানো সুটকেস আর একটা টেপ দিয়ে বাঁধা ব্রিফকেস নিয়ে অমিতের দিকে এগিয়ে আসে। অমিত কৌতূহল চেপে রাখতে পারে না। চাপা গলায় মেয়েটাকে বলে কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি সুটকেসটা সুদূর নিউইয়র্ক থেকে এলো। টেলিপোর্টেশন টেকনোলজি – যা দিয়ে প্রাণহীন যেকোনো জিনিষকে ডি-ম্যাটারাইজ করে তরঙ্গ হিসেবে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পাঠানো যায়। অপর প্রান্তে সে তরঙ্গ থেকে আবার অবিকল জিনিসটা রিজেনারেট করা যায়। আপনার জিনিষগুলোও একই ভাবে এসেছে । মেয়েটা আরও বলে যায় – পোস্টাল সার্ভিস, কনভেনশনাল কুরিয়ার সার্ভিস আজ টেলি টেলিপোর্টেশন সার্ভিস দিচ্ছে। অমিত তার জীবৎদসায় এমনি অনেক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়েছে , টেলিপোর্টেশন , বিমিং , কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন কতো সব কাহিনী! নতুন পৃথিবীতে এমন নতুন নতুন উদ্ভাবন দেখে ওর বেঁচে থাকার জন্য একটা আগ্রহ জন্মে মনে ।

সুটকেস নিয়ে বেড় হতেই ওকে এক দঙ্গল সাংবাদিক ঘিড়ে ধরে। অজস্র ছেলেমেয়ে উৎসুক হয়ে হাত মেলাতে আসে । অমিতের নিজকে চিড়িয়া খানার কোন অবলুপ্ত প্রাণী হিসেবে মনে হয়।ও রাস্তায় নেমে আসে। ওদের জন্য অপেক্ষা করে আছে স্পেশাল বাস হোটেলে পৌঁছে দেবার জন্য। ইতোমধ্যে সন্ধ্যার আকাশে শতশত কৃত্রিম চাঁদ জেগে উঠেছে। শহরের রাস্তা গুলো আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। অমিত অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে স্ট্রীট লাইট বিহীন আলোকিত রাস্তাগুলো। কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান বৃহৎ বৃহৎ রিফ্লেক্টর সূর্য থেকে আলোকে বিভিন্ন শহরের উপর প্রক্ষেপণের মাধ্যমে স্ট্রীট লাইটের বিরাট এক খরচ সাশ্রয় করে চলেছে। অমিত বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে প্রকৃতির পানে, আকাশের পানে। এমন পূর্ণিমা সে জীবনে দেখেনি। বাসগুলো বিদ্যুৎ চালিত, কিন্তু আকাশে মাকড়শার জালের মতো বিদ্যুতের অবিন্যস্ত তার না দেখে অমিত ড্রাইভারকে বলতেই ড্রাইভার হেসে ওঠে বলে, তার উঠে গেছে অনেক আগেই। এখন সবই ওয়ারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশনে চলে। আকাশ ঐ সব লম্বা লম্বা খাম্বা থেকে মুক্তি পেয়েছে। খাম্বার কথা শুনে অমিতের মনের পর্দায় একটা চেহারা ভেসে ওঠে – লোকে তাকে খাম্বা বলে ডাকত। কিন্তু, কিছুতেই সে নামটা মনে করতে পারে না…

 

চলবে…


 

অমিত পর্ব-৮ |||| সুশীল কুমার পোদ্দারওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী ।  ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স,  মাস্টার্স,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,  ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।


 

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন