কর্মের আলোয় অমর: অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম ||| বশির আহমদ জুয়েল
সিলেটের টুকের বাজার ইউনিয়নের শাহপুর তালুকদার পাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন এক আলোকিত মানুষ—অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম। তাঁর জন্ম যেন ছিল জ্ঞান আর মানবতার এক নীরব আহ্বান। যে সময় গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা ছিল সীমিত, সেই সময়ই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন—“শিক্ষাই মুক্তির পথ, জ্ঞানই মানুষের প্রকৃত সম্পদ।”
ছেলেবেলায় তিনি ছিলেন মননশীল, অধ্যবসায়ী এবং গভীরভাবে ন্যায়পরায়ণ। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গনে পড়াশোনা শেষে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন—কিন্তু তাঁর কাছে শিক্ষকতা ছিল শুধু চাকরি নয়, এক পবিত্র দায়িত্ব। তিনি বিশ্বাস করতেন, একজন শিক্ষক শুধু পাঠ দেন না—তিনি সমাজ গড়েন, মানুষ গড়েন।
অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের জীবন ছিল সাদাসিধে অথচ গভীরতাপূর্ণ। তিনি অল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন, কিন্তু নীতিতে কখনো আপস করেননি। সত্য, পরিশ্রম আর শৃঙ্খলার মিশেলে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজের চারপাশে এক মানবিক পরিমণ্ডল। ছাত্ররা তাঁর কাছে শুধু শিক্ষা নয়, পেতেন জীবনের দিকনির্দেশনা, কীভাবে মানুষ হতে হয়, কীভাবে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হয়, তা তিনি শেখাতেন উদাহরণ দিয়ে।
সহকর্মীরা তাঁকে বলতেন এক “নীরব বিপ্লবী”—যিনি উচ্চকণ্ঠ ছিলেন না, কিন্তু কাজের মাধ্যমে বদলে দিয়েছিলেন বহু মানুষের জীবন। যেখানে অন্যরা বাধা দেখতেন, তিনি সেখানেই দেখতেন সম্ভাবনা। একজন দরিদ্র ছাত্রের ফি মাফ করা থেকে শুরু করে কোনো অসহায় শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানো—এইসব ছোট ছোট মানবিক কাজই তাঁকে মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান দিয়েছে। কলেজের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ছিলেন বিপদের আপদ হিসেবে।
তিনি ছিলেন শৃঙ্খলা ও সততার প্রতীক। অফিসে সময়মতো উপস্থিত হওয়া, শিক্ষার্থীদের সাথে বিনয়ী আচরণ, আর প্রতিটি সিদ্ধান্তে ন্যায়ের পথ বেছে নেওয়া ছিল তাঁর অভ্যাস। তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পেয়েছিল নতুন দিশা, আর তাঁর ছাত্ররা আজও স্মরণ করে বলেন— “স্যার শুধু পাঠ শেখাতেন না, আমাদের মানুষ হতে শিখিয়েছিলেন।”
অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম কোনো দিন প্রচারের আলো খোঁজেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, কাজই মানুষের পরিচয়। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে ছিল একটাই লক্ষ্য—শিক্ষা ও নৈতিকতার মাধ্যমে সমাজে আলোর সঞ্চার। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর প্রতিটি পদচিহ্ন এখনো টের পাওয়া যায় তাঁর ছাত্রদের জীবনে,
তাঁর সহকর্মীদের স্মৃতিতে, এমনকি সিলেটের শিক্ষাঙ্গনের বাতাসেও যেন ভেসে আসে তাঁর কণ্ঠস্বর—“সত্যের পথে থাকো, জ্ঞানের আলোয় বাঁচো।” তাঁর চলে যাওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যু নয়—এ যেন এক যুগের অবসান। কিন্তু তিনি রয়ে যাবেন সেই শিক্ষার্থীর চোখে, যাদের তিনি গড়েছেন পরম যতনে। তাঁর নাম আজীবন শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হবে—কারণ তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি প্রমাণ করে গেছেন —“একজন শিক্ষক মৃত্যুহীন, যদি তাঁর আলো থেকে যায় মানুষের মনে।”

CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।
—



