রোজিনা কারাগারে প্রতিবাদ ক্ষোভ
সিবিএনএ অনলাইন ডেস্ক / ১৮ মে, ২০২১। রোজিনা কারাগারে প্রতিবাদ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৫ই জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদন শুনানি হতে পারে। আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন, আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আশরাফ উল আলম, প্রশান্ত কুমার কর্মকার। এ ছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রশীদ, ব্লাস্টের পক্ষে আইনজীবী মশিউর রহমান এবং আইনজীবী সুমন কুমার রায় শুনানিতে ছিলেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে এজলাসে উঠানো হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। সাধারণত এজলাসে স্বজন ও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হলেও এদিন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তার আগে সকাল ৮টার দিকে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানির পর রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী গণমাধ্যমকে বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের নামে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি অ্যাবিউজ করা হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের ওপর এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক। মামলায় যা বলা হয়েছে তার আদৌ কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ সংবাদগুলো টপ সিক্রেট নয়, বরং ওপেন সিক্রেট। মামলার এজাহারে যে ডকুমেন্টের কথা বলা হয়েছে, তার কোনো বর্ণনা এজাহারে নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, যে জব্দ তালিকা আদালতে হাজির করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ডকুমেন্টমগুলো আসামির কাছ থেকে নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজেই উপস্থাপন করেছেন। তাই যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মানহানিকর এবং আপত্তিকর বলে জানান তিনি। আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, এই মামলার ৩৭৯ ধারাকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে ৩৭৯ ধারার উপাদান হচ্ছে, যেকোনো বিষয়বস্তু চুরি করার ক্ষেত্র প্রকাশ্য স্থানে, উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আর প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ অনুযায়ী যদি বিশ্বাস করেন, তবে কথিতমতে ঘটনাস্থলটি হচ্ছে সচিবালয়। সুতরাং পরস্পর বিরোধপূর্ণ দুটি ধারা বিজ্ঞ আদালতের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করে যে প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলটি কোথায়? আদৌ এই ঘটনা ঘটেছিল কিনা? আইনজীবী আরো বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তার মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আজ পরিস্থিতির শিকার। আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগ ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড মঞ্জুরের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আদালত এই বক্তব্য বিবেচনায় নিয়েছেন এবং তা বিবেচনায় নিয়ে রিমান্ডের আবেদন নাকচ করেছেন।
‘আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে’: আমি অসুস্থ। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে তারা অনেক অন্যায় করেছে। আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করার কারণে তারা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে।
এদিকে, রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার ও হেনস্তার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। জাতীয় প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, বিশিষ্ট নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। পাশপাশি রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও তাকে হেনস্তাকারীদের শাস্তি দাবি করা হয়।
গতকাল বিকালে কাওরান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে রোজিনা ইসলামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণেই তিনি আক্রোশের শিকার হয়েছেন। আমরা এর সঠিক বিচারের সঙ্গে সঙ্গে রোজিনাকে নির্যাতনকারীদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বিষয়টি এখন যেহেতু আইনের দিকে গেছে, আমরা আইনিভাবে এটাকে মোকাবিলা করবো। আমরা আদালতের ওপর ভরসা রাখি। আশা করি, আমরা ন্যায়বিচার পাবো।
‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে’: সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক। আনিসুল হক আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের একটি পবিত্র স্থানে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। গতকাল রিমান্ড শুনানি শেষে রোজিনাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর আনিসুল হক এমন মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে একটি ভবনের সিঁড়িতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনিসুল হক। তার কান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনিসুল হক ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে (ডিআরইউ) সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান এই ঘটনাকে উদ্বেগজনক, মুক্ত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর চরম আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, রোজিনা ইসলামকে পৈশাচিক নির্যাতন, নিপীড়ন করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বাকরুদ্ধ এবং সাংবাদিকদের কলম থামানো যাবে না। বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কলম আরো সোচ্চার থাকবে। তারা বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা ও নির্যাতনের যে চিত্র ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে- তাতে নিশ্চিত করে বলা যায়, রোজিনা ইসলামের দুর্নীতিবিরোধী সাংবাদিকতার ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে অবৈধ সুবিধা হারাচ্ছেন। এ কারণেই এমন ন্যক্কারজনক ও সুপরিকল্পিত নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয়েছে।
অতি দ্রুত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ বলেন, বিতর্কিত ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ সহ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এমনসব কালাকানুন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি না দিলে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)। সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সংবাদ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন।
সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার জন্য বসেন। তখন সাংবাদিকেরা এ সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেন।
মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিবাদ: রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে মহিলা আইনজীবী সমিতি। গতকাল সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবায়দা পারভিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী ও সব সদস্য রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত জামিন ও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছে এবং তার আইনগত সহায়তায় পাশে থাকবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবি করেছেন ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদারসহ বিশিষ্ট এই নাগরিকগণ রোজিনাকে হেনস্তার ঘটনা তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
এদিকে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার, জামিন নামঞ্জুরসহ অবিলম্বে সসম্মানে মুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে দুপুর ১টার দিকে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান বলেন, সংগঠনের দুই হাজার সদস্যদের মধ্যে হাতেগোনা যে কয়জন রিপোর্টার নিয়ে সংগঠন গর্ব করে তার মধ্যে রোজিনা ইসলাম একজন। তিনি আমাদের সম্পদ। তাই আমরা তার সঙ্গে থাকবো। যত ধরনের কঠোর কর্মসূচি দেয়া দরকার সেগুলো থেকে আমরা কোনোভাবে পিছপা হবো না। যে আইনে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তার বিরোধিতা করে এই সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়েছেন। এই আইন তারা বাতিল চেয়েছেন। কিন্তু রোজিনা ইসলামের মতো প্রথম সারির একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিতার্তিক আইন প্রয়োগ করেছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী বলেন, সংবাদ সংগ্রহের সময় রোজিনা ইসলামকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান মালিক বলেন, রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। এজন্য অনেক তথ্যর দরকার হয়। অনেক চেষ্টা ও যোগাযোগ করে যখন তিনি তথ্য পাননি হয়তো তার নিউজের স্বার্থে যেকোনোভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন। যে তথ্যটি রোজিনা আনতে চেয়েছিলেন তদন্ত কমিটি করে বের করা হয় সেটি কোনো দুুর্নীতির তথ্য ছিল কিনা। যে অতিরিক্ত সচিব দম্ভ দেখিয়েছেন তথ্যটি তার কোনো বিষয় ছিল কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হোক।
মানবাধিকার কমিশনের নিন্দা: সচিবালয়ে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটক রেখে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ‘হেনস্তা’র ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গতকাল মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা (বিকল্প দায়িত্ব) মো. আজহার হোসেনের স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে এভাবে আটক রাখার বিষয়কে ‘অমানবিক’ বলেও মনে করছে কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে গত সোমবার দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।
কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘ সময় ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে একজন সাংবাদিককে আটক রাখার বিষয়টি নিন্দনীয়।
সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তার ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠিত
সচিবালয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এ তদন্ত কমিটি গঠন করে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) মো. সাইফুল্লাহিল আজমকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন উপ-সচিব (প্রশাসন-২ শাখা) মো. আবদুছ সালাম ও উপ-সচিব (জনস্বাস্থ্য-১) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম-সচিব সাইফুল্লাহিল আজম গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি জেনেছি। তবে এ সংক্রান্ত আদেশ এখনো আমার হাতে আসেনি।
নির্যাতন ও মামলার নিন্দা ড. কামাল হোসেনের
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে হেনস্তা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা রোজিনার বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির রিপোর্ট সংগ্রহের কারণে তাকে এই অবস্থায় পড়তে হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্নীতিবাজ আমলারা কতটা বেপরোয়া এ ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তাকারী অতিরিক্ত সচিবসহ জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
‘রোজিনা যেভাবে দুর্নীতি তুলে ধরেছেন, তাকে আটক না স্বাধীনতা পদক দেয়া উচিত’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যেভাবে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি তুলে ধরেছেন সেজন্য তাকে আটক না করে বরং স্বাধীনতা পদক দেয়া উচিত। আমরা রোজিনা ইসলামের দ্রুত মুক্তি চাই। বোন রোজিনাকে বলতে চাই আমরা আপনার পাশে আছি।
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ। ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুর ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সমাবেশে ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও ছাত্র, যুব, শ্রমিক পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক নুর বলেন, অন্য সাংবাদিকদের মনে ভয় ঢুকাতেই রোজিনাকে হেনস্তা করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করে স্বাধীন গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতা পরিপন্থি বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদ সোচ্চার অবস্থানে আছে। রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে মুক্ত সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা দূর করে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান নুর।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আজকে বাংলাদেশে কেউ নিরাপদ নয়। সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী যারাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, লেখালেখি করে তাদেরকেই হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে আটক করে জেলে নেয়া হয়। ছাত্র অধিকার পরিষদ, সাংবাদিক রোজিনাকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় এবং অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের মুক্তি চায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মঞ্জুর মোর্শেদ এবং শ্রমিক পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান ও সদস্য সচিব আরিফ হোসেনসহ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের হয়রানির নিন্দায় ৫ আইনজীবী
দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানির নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৫ আইনজীবী। বিবৃতিদাতারা হলেন ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল করিম, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মেহেদী জামান (বনি), ব্যারিস্টার আহমেদ আল-রাজী ও ব্যারিস্টার মো. কাউছার। গতকাল তারা এ বিবৃতি দেন। দায়িত্ব পালন করতে গেলে রোজিনা ইসলামকে গত সোমবার কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্টাফদের বিরুদ্ধে। বিবৃতিদাতারা বলেন, এ ধরনের আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরোধী। তারা অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি করেন।
– মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান