দেশের সংবাদ ফিচার্ড

২ যুগেও শুকায়নি ক্ষত,আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণ

কমলগঞ্জের মাগুরছড়া ট্রাজেডি দিবস
২ যুগেও শুকায়নি ক্ষত,আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণ

আজ ১৪ই জুন। আবার ফিরে এসেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জবাসীর ভয়াল স্মৃতির দিন মাগুরছড়া ট্রাজেডির ২৪তম বার্ষিকী। ১৪ জুন আসলেই মৌলভীবাজার জেলাবাসীকে মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াল স্মৃতির কথা। সেদিন মানুষের মন কত ভীত ছিল। কখন এসে আগুনের লেলিহান শিখায় গ্রাস করে ফেলবে। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাত ১টা ৪৫ মিনিটে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণের প্রচন্ড শব্দে কেঁপে ওঠে ছিল গোটা কমলগঞ্জ। আগুনের লেলিহান শিখায় লাল হয়ে উঠেছিল মৌলভীবাজার জেলার সুনীল আকাশ। ভীত-সন্ত্রস্থ লোকজন ঘরের মালামাল রেখে প্রাণভয়ে ছুটে ছিল দিগি¦দিক। প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় লাফিয়ে উঠা আগুনের লেলিহান শিখায় লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। আগুনের শিখায় গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেষ্ট, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, জীববৈচিত্র্য, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ফুলবাড়ী চা বাগান, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট- চট্টগ্রাম রেলপথ এবং কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ২৪ বছরেও জনসম্মুখে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশ হয়নি, আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণ।
পরিবেশ সংরক্ষণবাদীদের তথ্য মতে, ৬৩ প্রজাতির পশু-পাখির বিনাশ সাধন হয়। সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ ১৬৩ দিন বন্ধ থাকে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। মার্কিন অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও বন বিভাগ কোন ক্ষতিপুরণ পায়নি। ফিরে আসেনি এখনো প্রাকৃতিক বনের স্বাভাবিক পরিবেশ। পূর্ণ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইউনিকলের কাছে হস্তান্তরের পর সর্বশেষ শেভরনের কাছে বিক্রি করেছে। শেভরন ২০০৮ সালে ওই বনে ত্রি-মাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। এতেও স্থানীয়ভাবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ২০১২ সনে শেভরন মৌলভীবাজার ১৪ নং ব্লকের অধীনে নূরজাহান, ফুলবাড়ি এবং জাগছড়া চা বাগানের সবুজ বেষ্টনি কেটে কূপ খননের পর এসব কূপ থেকে চা বাগানের ভেতর দিয়ে ড্রেন খনন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে উত্তোলিত গ্যাস কালাছড়ার মাধ্যমে রশীদপুর গ্রীডে স্থানান্তর চলছে। বিভিন্ন সংগঠন মাগুরছড়া দুর্ঘটনার যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে আন্দোলন পরিচালনা করে এলেও দীর্ঘ ২৪ বছরেও ক্ষতিগ্রস্থদের দাবিকৃত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তৎকালীন সরকার ক্ষতিপূরণ আদায়ের জোরালো ভূমিকা পালন করেনি। ফলে মাগুরছড়া দুর্ঘটনার ২৪তম বার্ষিকী পূর্ণ হলেও ক্ষতিপূরণ আদায় নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে আজো ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা নীরবে চোখের জল ফেলছে। এ নিয়ে মৌলভীবাজার তথা সিলেটের জনমনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরিত্যক্ত এলাকার উত্তর টিলায় সবুজায়ন করা হয়েছে। মূল কূপটি এখনো পুকুরের মতো ধারণ করে টিকে আছে। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করা হয়েছে। টিলার ওপর সবুজ বনায়নের উদ্যোগ নিলেও মাঝে মধ্যে আগুনের পোড়া ডালপালাবিহীন কালো রঙের গাছগুলো অগ্নিকান্ড দুর্ঘটনায় সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতরে লাউয়াছড়া ফরেষ্ট বিটের অভ্যন্তরে মাগুরছড়া এলাকায় ১৯৮৪-৮৬ ও ১৯৯৪ সালে সাইসলিক সার্ভেতে গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া যায়। এ প্রেক্ষিতে উৎপাদন ভাগাভাগির চুক্তিতে ১৯৯৫ সালের ১১ জানুয়ারী মার্কিন বহুজাতিক তেল ও গ্যাস উত্তোলণকারী কোম্পানী অক্সিডেন্টালের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং গ্যাস উত্তোলনের জন্য ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমতি প্রদান করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর অক্সিডেন্টাল কোম্পানী মাগুরছড়ায় গ্যাস ফিল্ডের ড্রিলিং কাজের জন্য সাবলিজ প্রদান করেছিল ডিউটেক নামের জার্মান কোম্পানীর কাছে। গ্যাস উত্তোলনে ১৪ নং ব্ল¬¬কের মাগুরছড়াস্থ মৌলভীবাজার-১ গ্যাসকূপের খননকালে ৮৫০ মিটার গভীরে যেতেই ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্য রাতে ঘটে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ। এ সময় শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ ১৫ কিঃমিঃ (৩৩ হাজার কেভি) উচ্চতাপ বৈদ্যুতিক লাইন পুড়ে নষ্ট হয়। কুলাউড়া, বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৫০ টি চাবাগানে দীর্ঘদিন স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। ৬৯৫ হেক্টর বনাঞ্চলের বৃক্ষ সম্পদ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ২৪৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে নষ্ট হয়, যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলার। গ্যাস বিস্ফোরনের পর অক্সিডেন্টাল তাদের সহোদর ইউনোকলের কাছে দায়িত্ব দিয়ে এ দেশ ত্যাগ করলে দুই বছর পর ফুলবাড়ি চা বাগান, পার্শ্ববর্তী মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাড়ি-ঘর, পান জুম এলাকার ক্ষয়ক্ষতি বাবদ আংশিক টাকা প্রদান করে ইউনোকল। অন্যদিকে দূর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়ক ধারে সামাজিক বনায়নের রোপিত গাছের জন্য ৩ ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ ৬ মাস কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতি পূরণ বাবত বাস মালিক সমিতিকে ২৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে কিছু ক্ষতিপুরন দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ও গ্যাস বাবত কোন ক্ষতিপূরণ করা হয়নি এবং কোন সরকারই ক্ষতিপূরণ আদায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জনমনে সন্দেহ বিরাজ করছে। দুর্ঘটনার পর তৎকালীন সরকারের খনিজ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী অক্সিডেন্টালের দায়ীত্বহীনতাকেই দায়ী করা হয়।
২০০৩ সালের ১১ মে ইউনোকলের ওপর রুলনিশি জারি করেছে হাইকোর্ট। কেন সম্পূরক চুক্তি বাতিল করা হবে না এবং মাগুরছড়া গ্যাস ফিল্ডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের আগে গ্যাস-তেল উত্তোলন বন্ধ রাখতে কেন ইউনোকলকে নির্দেশ দেয়া হবে না- এ মর্মে ২ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। একই সাথে সরকার ও পেট্রো বাংলাকেও কারণ দর্শাতে বলা হয়। বিচারপতি মোঃ আব্দুর রশীদ ও বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। চট্টগ্রামের বিআইটির ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের প্রধান প্রফেসর এম শামসুল আলমের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রুলনিশি জারি হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের সাথে মার্কিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি অক্সিডেন্টালের চুক্তি হয়। এরপর ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডে বিপুল অংকের ক্ষতি হয়। এ ব্যাপারে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। রিপোর্টে বলা হয় ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনার জন্যে কোম্পানি দায়ী। ওদিকে ১৯৯৮ সালের ২৫ নভেম্বর ক্ষতিপূরণের কোন শর্ত না রেখেই ২য় দফায় সম্পূরক চুক্তি হয়। এ কারণে ওই চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন দাখিল করা হয়। শুনানীতে আইনজীবীরা বলেছেন, অক্সিডেন্টাল দেশের প্রচলিত পেট্রোলিয়াম ও পরিবেশ আইন না মেনে কাজ শুরু করে। এছাড়া, তারা কোম্পানির সকল দায়-দায়িত্ব ইউনোকলকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে ইউনোকলের প্রতি রুলনিশি জারির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রুলনিশির কোনো সন্তোষজনক জবাব ইউনোকল দেয়নি। সরকার কর্তৃক আইসিসি কোর্টে মামলা করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া ২০০৪ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদে গোলাম হাবিবের এক প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ডে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিপূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করবে বলে জানায়। ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোনো সুরাহা এখনো পর্যন্ত হয়নি। মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ আদায়সহ ৫ দফা দাবিতে ঢাকার পল্টন ময়দান থেকে বৃহত্তর সিলেটের বিবিয়ানা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-খুলনা-মংলা অভিমুখে লংমার্চ করা হয়েছে। এতো আন্দোলনের পরও জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মার্কিন বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী ইউনোকল মাগুরছড়া গ্যাসকূপ ব্লো-আউটের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ না দিয়েই বিস্ফোরিত গ্যাসকূপের কাছাকাছি ১৪ নং ব্লকের এমবি-৪ ও এমবি-৫ নামে ২টি কূপ খনন কিভাবে সম্পন্ন হলো এবং কিভাবে এই ২টির গ্যাস কালাপুরে স্থাপিত প্রসেসিং প্লান্টে সঞ্চালনের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের লাল তালিকাভূক্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান-রিজার্ভ ফরেষ্টের ভেতর দিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনাশী গ্যাস গ্যাদারিং পাইপ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করে।
পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মো: সালাউদ্দিন জানান, ১৪ জুন দুপুরে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির উদ্যোগে মাগুরছড়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মাগুরছড়া গ্যাস কূপে আগুনে পুড়ে ছাই হওয়ার ২৪ বছর অতিক্রম হলে এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ আদায়, কমলগঞ্জ উপজেলাবাসীর ঘরে ঘরে গ্যাস লাইন সরবরাহসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে এই মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করা হবে।।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়াং এর মতে, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রাকৃতিক বনের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারবে না। আমরা যারা এই বনে বসবাস করছি তা বুঝতে পারছি। বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বনের ১৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপন করে দেয়া হলে এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কোন সময়ে পুষিয়ে উঠার নয়।
মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ২৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। অক্সিডেন্টালের পর মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী শেভরন বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে ক্ষতিপূরণের কী হবে? তাই সরকারকেই এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাগুরছড়া ব্লে¬া-আউটে গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আমরা ১০ দফা দাবীতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আজ পর্যন্ত একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়নি।” ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোনো প্রক্রিয়া আছে কি না- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমার কাছে এ বিষয়ে সর্বশেষ কোনো তথ্য নেই। এটি অধিদপ্তরের বিষয়।”
লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, বনের ক্ষতি নিরূপন করে দেয়া হলে এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কোন সময়ে পুষিয়ে উঠার নয়। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরনে ক্ষতিপূরন প্রদানে কোন অগ্রগতি নেই। পূর্বে যে অবস্থায় ছিল এখনও সে অবস্থা।
এদিকে, ক্ষতিপূরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে পরিবেশবাদীসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন। দাবি আদায়ে মানববন্ধন, পদযাত্রা, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচির পালন করছে। এবারও বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

কমলগঞ্জে আত্মীয় বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা \ পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে ননাশের (স্বামীর বড় বোনের) বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে দীপা চৌধুরী (২৮) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যাকারীর পরিবার সদস্যরা বলেন এটি আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত হত্যা। রোববার (১৩ জুন) ভোর রাতে গোবিন্দপুর গ্রামের মঈনুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। শমশেরনগর ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

জানা যায়, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিক্রমকলস গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী দীপা চৌধুরী। সে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতো। সেখানে তার প্রথম স্বামী ও প্রথম পক্ষের এক ছেলেও রয়েছে। প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে সাইফুল ইসলামের সাথে আদালতের মাধ্যমে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল। এ বিয়ে নিয়ে সাইফুল ইসলামের পারিবারিকি দ্বন্দ শুরু হলে সে স্ত্রী দীপা চৌধুরীকে গোবিন্দপুর গ্রামের স্বামীর বড় বোন শেফী বেগমের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন দীপা চৌধুরী। রোববার ভোর রাতের কোন এক সময় গৃহবধূ দীপা চৌধুরী রান্না ঘরের চালার সাথে পরনের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে রোববার সকালে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক শাহ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূ দীপা চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি মৌলভীবাজার সদর পাসপাতালে পাঠায়।
তবে গৃহবধূর বোন মৌমিতা জানায়, সাইফুল প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে তার বোন প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে সাইফুলের সাথে বিয়ে হয়। সে মনে করে এটি আত্মহত্যা নয় এটি পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনায় তারা থানায় মামলা করবে বলেও জানায়।
এদিকে স্বামী সাইফুলের বোন শেফি বেগম বলেন, গত রমজানের আগে সাইফুল মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তার স্ত্রী দীপাকে নিয়ে এ বাড়িতে আসে। সেই থেকে দীপা একানেই অবস্থান করছিলেন। সে তার সাথে (শেফী বেগমের সাথে) একই বিছানায় থাকতো। রোববার ভোর রাতে সবার অগোচরে রান্না ঘরের চালার সাথে গাযের ওড়না পেচিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে এসে জানতে পেরেছেন গৃহবধূ স্বামীর বোনের বাড়িতে এসে আত্মহত্যা করেছে। আর স্বামীর বাড়ি মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিক্রমকলস গ্রামে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখবে বলেও তিনি জানান।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হবে এবং ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধুর মোবাইল ফোন, ব্যাগ ভর্তি কাপড় জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় কোন অভিযোগ হলে তদন্তক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান
সংবাদটি শেয়ার করুন