ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

গুচ্ছ কবিতায় সুদীপ্ত বিশ্বাস 

গুচ্ছ কবিতায় সুদীপ্ত বিশ্বাস 
————————————————————
১. পুনরুত্থান

নিভু নিভু আকাশে যেই ঘনিয়ে এল মেঘ
তোমার চোখের তারায় তারায় দেখেছি উদ্বেগ।
অনেক চেনা কেমন করে খুব অচেনা হয়
জীবনখাতা গোলকধাঁধা সরলরেখা নয়।
শান্ত জলে হঠাৎ হঠাৎ ছলকে ওঠে ঢেউ
ঘুমের মাঝে চমকে দেখি পাশেতে নেই কেউ।
নেই তাতে কী? একলা বাঁচি, একাই টানি দাঁড়
স্বপ্ন দেখি আকাশ ছোঁব, সমুদ্দুরের পার…
————————————————————
২. রাতভোর বৃষ্টি
ভালোবাসা আর অভিমান পাশাপাশি
হাতে হাত ধরে, কাঁধে কাঁধ রেখে চলে
কত অভিমান কত অভিযোগ আসে
ভালোবাসা তবু ফিসফিস কথা বলে।

দূরে চলে যাব,যেদিকে দুচোখ, অনেক দূর
অভিমান কাঁদে,দুই চোখে তার গভীর শোক
আকাশে জমলে মেঘের পাহাড় ধূসর কালো
ভালেবাসা বলে আজ রাতভোর বৃষ্টি হোক।
————————————————————
৩. ফেরা

মেঘ চাইতেই জল আসে না
জীবন বড় শুখা
অসম্ভবও চাইনি কিছু আমি।
যা ছিল তাও হারিয়ে গেল
হঠাৎ মরুঝড়ে
এখন চোখে স্বপ্নও নেই দামি।
অতীত এখন আকাশকুসুম
মন খারাপের খাতা
বর্তমানও দেয়াল হয়ে খাড়া,
অন্ধকূপে বন্দী হয়ে
মিথ্যে ছুটে মরি
হাজার ডেকেও পাই না কারও সাড়া।
মুখোশধারী বন্ধুরা সব
ট্রিগার দিল টিপে
বন্ধুতো নয়, বন্দুক সব আজ।
স্বার্থ লোভের হিংস্র থাবায়
মানুষ এখন পশু,
এখন মানুষ বড়ই ধাপ্পাবাজ।
চাইতে চাইতে পাথর হয়ে
চাই না রে আর কিছু
ভুলেই গেছি চেয়েছিলাম কি যে!
ঘুরতে ঘুরতে হন্যে হয়ে
আর ঘুরি না আমি
ফিরেও গেছি নিজের কাছে নিজে।
————————————————————

৪. চিত্রপট


নদীতেও সেই নাব্যতা আর নেই,
কপট মানুষ মুখোশ তো পরবেই;
মিথ্যে ভেজালে ভরে গেছে গোটা দেশ
আধমরা হয়ে তবুও তো আছি বেশ!
বন্ধুরা সব বন্দুক নিয়ে খাড়া
সুযোগ পেলেই শ্যুট করে দেবে তারা,
চিয়ার্স বলে বাড়ায় মদের গ্লাস
খাঁটি অভিনয়ে চেনায় নিজের ক্লাস!
প্রেমিকাও জানে কিভাবে টানলে তবে
মাথা থেকে ধড় এখনি আলাদা হবে।
ভাই এর হাতেও লুকানো রয়েছে ছুরি
ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, জোচ্চুরি
বেড়েই চলেছে দিনরাত অবিরত,
সবার মনেই মনখারাপের ক্ষত।
————————————————————

৫.ভালোবাসা


এখন হৃদয় জুড়ে শুধুই বিস্মৃতি।
হাঁচড়-পাঁচড় শেষে অবসন্ন কালে
তীরভূমি ছুঁয়ে দেখি, হাসে মহাকাল;
সবকিছু মিশে যায় দিকচক্রবালে
অবিরাম বেজে চলে কালের সেতার!
অতীতেরা চুপচাপ ফেরে বারবার,
সময়ের গাছ থেকে খসে পড়ে পাতা
মিশরের মমি থেকে উঠে আসে কেউ!
আগামীর বুক থেকে ভাটির সাঁতারে
প্রতিদিন চুপচাপ ফিরে আসে ঢেউ।
যেটুকু দেখছ তুমি তাও শুধু নয়,
যতটুকু রাখা আছে চোখের আড়ালে
যেটুকু মরেও গেছি সবটুকু পাবে
ভালোবেসে অভিমানী হাতটা বাড়ালে।
————————————————————
৬. যাও পাখি

প্রেম মানে তো ‘অন্ধ’,জেনেও থমকে থাকি প্রেমে!
আমার পাশে থাকতে তুমি যদি;
একলা একা পথ চলেছি নিতান্ত নির্জনে-
সঙ্গী শুধু বিষাদরঙা নদী।
উদাস বাউল যায় হারিয়ে দূরের থেকে দূরে
চেনা শহর, গাছপালা সব ছেড়ে,
বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখে দগদগে সব ক্ষত
আলোর রঙে নিশান জ্বেলে ফেরে।
ফেরা মানেই স্মৃতির পাতায় ভিড়ের মাঝে একা
অশ্রুফোঁটা, দুঃখ মেখে থাকি
বদ্ধ বাতাস আটকে ধরে, কষ্ট বয়ে আনে
মুক্ত আকাশ, যা উড়ে যা পাখি…
————————————————————
৭. অনুরাগ
যে ফুল ঝরেই গেছে
কী হবে তাকে মনে রেখে?
নতুন কুঁড়ি ফুটুক
নতুন সূর্য উঠুক
নতুন ভোরের ছবি নাও এঁকে।
বয়ে চলুক নদী
সেই ঝরা ফুলের স্মৃতি
তবু্ও ফিরে ফিরে আসে যদি
যতই জ্বলুক আগুন দাউ দাউ
ঝরা ফুল বেঁচে থাকে
কোথাও না কোথাও…
————————————————————
পরিচিতিঃ গুচ্ছ কবিতায় সুদীপ্ত বিশ্বাস  , বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বারোটি। ছড়া ও কবিতা লিখছেন দীর্ঘ সময় ধরে ছোট বড় অজস্র পত্রিকাতে।কবি পেশাতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
সংবাদটি শেয়ার করুন