অভিশপ্ত একুশ |||| মাহমুদ হাসান
নিরাভরণ ট্রাকের মাস্তুল পেরিয়ে তাঁর ছন্দময়
কণ্ঠ শরতের হাওয়ায় মেশার আগেই হঠাৎ
গ্রেনেডের চোখ রাঙানি। দিগবিদিক ছোটাছুটি।
মৃত্যুর আস্ফালন। রক্তধারায় ভাসে লণ্ডভণ্ড মানুষ
শান্তিকর্মীর বিচ্ছিন্ন পদযুগল, চুলের বেণী থেকে
খসেপড়া রঙিন ক্লিপ; স্যান্ডেল-জুতা একাকার
গাঢ় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ঘাতকের কদাকার মুখ।
নিমিষেই লাশের মিছিল নামে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর
সরবজমিনে। শান্তিমিছিলের সব স্বপ্ন মুছে দিয়ে
নগ্ন উল্লাসে মেতে ওঠে গ্রেনেডবৃষ্টি। রক্তঅশ্রুতে
হাহাকার করে ওঠে শরতের নরম বিকেল।
ওরা এসেছিল শান্তিমিছিলে, ঘরে ফেরেনি-
প্রিয়দর্শিনী আইভি রহমান সেদিনও উজ্জ্বল সমহিমায়;
তারা ঘরে ফেরেনি- সভাসমাবেশের সেই প্রিয়মুখ
পরনে ধূসর পাঞ্জাবি হাতে বিবর্ণ ছাতা আর
পুরুলেন্সের চশমার ‘আদাচাচা’ রফিকুল ইসলাম।
তারা ফেরেনি মিছিলের নিত্যসাথী হাসিনা মমতাজ
গৃহবধূ রিজিয়া বেগম, ব্যবসায়ী রতন শিকদার
হাজারীবাগের নাসির সরদার একাত্তরের মুক্তিসেনা
হানিফ মিয়া গুচ্ছগুচ্ছ নাম হারিয়ে গেছে
অভিশপ্ত একুশের ভয়াবহতায়। কন্যাজায়াজননীর
স্নেহসোহাগে মায়ামমতায় কখনো ফিরবে না আর
মোস্তাক সেন্টু, লিটন মুন্সি, কলেজছাত্র মামুন মৃধা
ষাটোর্ধ্ব আবুল কাসেম যে যৌবনে সাতই মার্চ
বাঁশের লাঠির ডগায় নতুন নিশান উড়িয়ে কাঁপিয়েছিল
রমনার রেসকোর্স ময়দান। আর ফিরবে না
তরুণ স্বেচ্ছাসেবক কুদ্দুস পাটোয়ারি আতিক সরকার
ল্যান্স কর্পোরাল মাহবুবুর রশিদ নেত্রীকে বাঁচাতে
স্পিন্টারে বিদীর্ণ যার বুক। আর্জেসের বিষাক্ত ছোবলে
বিলীন সব স্বপ্ন তাঁর চোখভরা অশ্রু ; ভগ্নহৃদয় ; তবু
নতুন স্বপ্নে দ্বিধাহীন সফেদ-উচ্চারণ দিগবিদিক ভাসে
শান্তির বাণী যেন কালের খেয়া।
লেখক: উপসম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
অভিশপ্ত একুশ