কমলগঞ্জের (মৌলভীবাজার) রকমারি সংবাদ
কমলগঞ্জে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি
ক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে হাট বাজারে বেড়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম। নতুন করে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারন ক্রেতারা। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কমলগঞ্জের কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
কমলগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজার গুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন জাতের চাল কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা করে বেড়ে গেছে। একই সাথে ভোজ্য তেল লিটার প্রতি বেড়েছে ৪ থেকে ৫টাকা করে। কয়েক দিন আগে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয়েছিল। ২ দিন আগে সে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমলেও গত ২৪ ঘন্টায় আবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা দরে। দেশী রসুন দাম বেড়ে ৮০ টাকা থেকে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। একই ভাবে সব ধরণের শাক সবজি কেজি প্রতি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভানুগাছ বাজারের পাইকারী ও খুচরা চাল বিক্রেতা আজাদ মিয়া বলেন, পাইকারী বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২ থেকে ৩’শ টাকা বেড়ে গেছে। ফলে খুচরা বাজারে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪টাকা করে। আসলে দেশের বড় বড় চালের আড়তে ও মিলে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। তার আগের মজুদ থাকায় তিনি এখনও আগের দামে চাল বিক্রি করছেন।
মোদী দোকানী তুহিন আহমদ বলেন, ২ দিন আগে ভোজ্য তেল সোয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা করে। আজ সেই তেল বিক্রি করতে হচ্ছে ১০৫ টাকা করে। দেশী রসুন ২ দিন আগে বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে। এখন সেই রসুন বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ টাকা করে।
এদিকে ক্রেতা হৃদয় ইসলাম, আলমগীর হোসেন, নিলু কুমার সিংহ অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই করোনার প্রভাবে তারা অর্থনৈতিক কষ্টে আছেন। এখন আবার চাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র মন্ডল বাজারে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে মুঠোফোনে বলেন, বাজার মনিটরিং করে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাজার দর প্রেরণ করা হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর সহকারী পরিচালক আল-আমিন বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে কোন রকম সিন্ডিকেট না করতে পারে, সে জন্য ভোক্তা অধিকারের অভিযান চলমান আছে।
নেশার টাকা না দেয়ায়
কমলগঞ্জে ছেলের হাতে পিতা নির্যাতিত / অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা
নেশার টাকা না দেয়ার দীর্ঘ দিন ধরে পিতা মাহমুদ আলীকে শারীরিক মারধোর ও বিভিন্নভাবে অপমান করে আসছিল ছেলে সুমন মিয়া (২৫)। গ্রামবাসী একাধিকবার সালিশ বিচার করলেও ছেলে মারধোর বন্ধ করেনি। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় নেশাখোর ছেলে আবারও বাবাকে নির্যাতন করলে মনের দুঃখে রশি দিয়ে রাস্তায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নির্যাতিত মাহমুদ আলী (৬২)। এলাকাবাসী দেখে তাকে রক্ষা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জামিরকোনা গ্রামে। এ ঘটনার পর নেশাগ্রস্ত ছেলে সুমন মিয়া রাতেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জামির কোনা গ্রামের মাহমুদ আলী একজন দরিদ্র কৃষক। কৃষি কাজ করে সংসার চলে। ছেলে সুমন মিয়া লেখাপড়া বাদ দিয়ে মায়ের আদরে নেশায় জড়িয়ে পড়ে। বাবা মাহমুদ আলী ছেলেকে শাসন করলে তার স্ত্রী ও ছেলে মিলে মারধোর করেন। দীর্ঘ দিন ধরে ছেলের এমন কর্মকান্ডে এলাকাবাসী একাধিকবার সালিশ বিচার করলেও কোন কাজ হয়নি। প্রতিনিয়ত নেশার টাকার জন্য বাবাকে নানাভাবে নির্যাতন করে বখাটে ছেলে সুমন মিয়া। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ছেলে সুমন মিয়া নেশার টাকার জন্য পিতা মাহমুদ আলীকে পেটালে মনের দুঃখে রশি নিয়ে আদমপুর সড়কের একটি গাছের সাথে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিলে রাস্তা দিয়ে যাবার পথে এলাকাবাসীর চোখে পড়লে মাহমুদ আলীকে আত্মহত্যার পথ থেকে রক্ষা করেন।
অপমানিত পিতা মাহমুদ আলী বলেন, ছেলে আমাকে তার মায়ের সহযোগীতায় প্রায়ই মারধোর করে। তাই কষ্টে আত্মহত্যা করতে চাচ্ছিলাম। এদিকে বাবার আত্মহত্যার চেষ্টার খবর শুনে রাতেই নেশাখোর ছেলে সুমন মিয়া বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, ছেলেটা খারাপ। বাবাকে মারধোর করার বিষয়ে একাধিক বিচার করা হয়।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহিভর্‚তের অভিযোগ
কমলগঞ্জে পুন:গঠিত বিএনপি’র সদস্য সচিবসহ ১৪ সদস্যের পদত্যাগ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র পুণঃগঠিত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিবসহ ১৪ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। স্বেচ্ছাচারিতা, ধানের শীষের বিরোধীতাকারীদের কমিটিতে স্থান দেয়া, অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহিভর্‚তসহ নানা অভিযোগ তুলে গত বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি সভাপতি বরাবরে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
বিএনপি’র লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ১৮ ফেব্রæয়ারী কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। আহবায়ক কমিটি উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে। গত ২০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের বাসভবনে বৈঠকে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রাহমান চৌধুরী, জেলা কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুন, জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দে উপস্থিতিতে পূণরায় জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এম এ মুকিতকে আহবায়ক, গোলাম কিবরিয়া শফিকে যুগ্ন আহবায়ক ও অলি আহমদ খানকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কমিটি ঘোষণার দু’দিন পরই অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতা, ধানের শীষের বিরোধীতাকারী এবং আওয়ামীলীগ সরকারের ধূসর অধিকাংশ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়ার অভিযোগ তুলে পদত্যাগপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
পুণ:গঠিত কমিটির পদত্যাগকৃত সদস্য মো. আবুল হোসেন পদত্যাগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসযোগে ২৩ সেপ্টেম্বরই পদত্যাগপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটি ঘোষণার ২ দিন পরই ২৩ সেপ্টেম্বর পুনঃগঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব অলি আহমদ খানসহ ১৪ জন সদস্য এক সাথে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগকারী অপর সদস্যরা হচ্ছেন মো. দুরুদ আহমদ, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. আবুল হোসেন, তোয়াবুর রহমান, আহমেদুর রহমান খোকন, আব্দুল মন্নান, ল²ী মোহন সিংহ, সফিকুল ইসলাম সুফি, মো. আব্দুল মন্নাফ, চান মিয়া, নজরুল ইসলাম মনির, সবুজ রহমান ও বীর বল।
কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি জানান, জেলা কমিটি আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে। কয়েকজন ছাড়া কারোরই রাজনৈতিক পরিচয় নাই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পদত্যাগকারীদের অনেকেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারনে দল থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন। তাই তাদের পদত্যাগে ব্যক্তিগত স্বার্থছাড়া দলে কোন প্রভাব ফেলবে না।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তৃণম‚ল নেতাকর্র্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে আহবায়ক কমিটি পুণঃগঠন করে দেয়া হয়েছে। করো একক ইচ্ছাধীন মানুষকেই সকল পদ দেয়া সম্ভব নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘এতে দলে কোন প্রভাব ফেলবেনা। কমিটির আরো ১৭ জন সদস্য আছেন, তারা নতুন নাম প্রস্তাব করলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হবে।’
কমলগঞ্জে পলাতক ৩ আসামী গ্রেফতার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সিআর এবং নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল মামলার পরওয়ানাভুক্ত ৩ পলাতক আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে এসআই অনীক বড়–য়া, এএসআই সুশেন দাশ ও এএসআই গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল আসামীদের গ্রেফতার করে।
জানা যায়, সিআর মামলা ২৩৪/২০-এর পরওয়ানাভুক্ত আসামী আদমপুর ইউনিয়নের আধকানি গ্রামের রেজান মিয়ার ছেলে শেখ মো. নুরুল ইসলাম ও সিআর মামলা নং ৫২/২০ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল মামলার আসামী কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সরই বাড়ি গ্রামের আহাদ মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়া ও একই গ্রামের আহমদ মিয়ার ছেলে মো. হায়দর আলী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই অনীক বড়–য়া, এএসআই সুষেন দাশ ও এএসআই গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
কমলগঞ্জ থানার এসআই অনীক বড়–য়া পরওয়ানাভুক্ত ৩ আসামীকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার তাদের আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
⇒এসএস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন