শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে কোর্স শেষের আগেই তিন শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় প্রধানকে শোকজ করেছে একাডেমিক কাউন্সিল।
জানা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ (স্নাতকোত্তর) সেশনের তিন শিক্ষার্থী মাস্টার্স চলাকালেই তৃতীয় সেমিস্টারে থিসিসের জন্য ভর্তি হন। থিসিস চলাকালে তারা অ্যাপেয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষক পদে আবেদনও করেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। শিক্ষার্থীরা হলেন- সামিয়া আক্তার (শামিমা চুমকি), আকাশ সাহা ও চাঁদ মিয়া।
কোর্স অসম্পূর্ণ রেখেই পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভার কার্ড পান এই তিনজন। ভাইভার আগমুহূর্তে বিষয়টি শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের নজরে এলে তিনি তাদের ভাইভা নেননি।
এই ঘটনার কিছুদিন পরে আবার মাস্টার্সের সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেন তিন শিক্ষার্থী। তাদের কোর্স ‘অসম্পূর্ণ’ থাকলেও বিভাগ থেকে প্রেরিত ফলাফল শিটে ‘সম্পূর্ণ’ দেখানোয় তাদেরকে সার্টিফিকেটও প্রদান করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভাগীয় প্রধানকে শোকজ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শোকজের জবাব মনঃপূত না হওয়ায় ১৮ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের ১৬১তম সভায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। কোর্স শেষ করার আগেই সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়টি ‘ভুল’ হয়েছে বলে সভায় জানান পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
‘এ ধরনের ভুল কেন হয়েছে, তা আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য’ বিভাগকে পুনরায় শোকজ করে একাডেমিক কাউন্সিল।
কোর্স শেষের আগেই সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, পছন্দের শিক্ষার্থী হওয়ায় কোর্স শেষের আগে সার্টিফিকেট দেয়া পুরোপুরিই নিয়মবহির্ভূত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। কাউকে কোনো ধরনের সুবিধা দেয়ার জন্য বিষয়টি করা হয়নি। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের বিষয়টি ‘ক্রস চেক’ করা উচিত ছিল।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মুজিবুর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, বিভাগ যেখানে ফলাফল শিটে কোর্স ‘সম্পূর্ণ’ লেখে পাঠায়, সেখানে পরবর্তী সেমিস্টারে থিসিস কে করবে, তা জানার সুযোগ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের নেই।
এমনকি চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ১৪ দিন পরে বিভাগ বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজে জানায় যে তিনজন থিসিস করবে। পুরো বিষয়টিতে বিভাগের ‘ভুল’ ও কোর্স শেষ না করেই সার্টিফিকেট তোলার মনমানসিকতাই দায়ী।
এ বিষয়ে তিন শিক্ষার্থীর বক্তব্য হল- পুরো বিষয়টিতে প্রশাসনের ভুল ছিল। তবে মাস্টার্স শেষ করার আগেই কেন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করলেন এ বিষয়ে কেউই কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে পারেননি। শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, ‘জানি না কীভাবে আমরা তুলতে পারছিলাম। তোলা গিয়েছিল আরকি।’
সার্বিক বিষয়ে শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। এ ধরনের ভুল কীভাবে হল, তা জানতে শোকজ করা হয়েছিল। শোকজের জবাব মনঃপূত না হওয়ায় পুনরায় শোকজ করা হয়। শোকজের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে সামনের একাডেমিক কাউন্সিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন