ট্রাম্পের যত কাণ্ড
সাইফ ইমন || গোটা বিশ্বের জন্যই বিস্ময়কর ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদকাল। সেই মেয়াদকালের বাইরেও তার অঘটনগুলো জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্ক। কখনো তিনি বিরোধীপক্ষ বা ব্যক্তিকে অবিশ্বাস্যভাবে কাছে টেনেছেন। আবার আপনজনদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন…
ছোট থেকেই দুষ্টুমিতে সেরা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, ‘তার (ট্রাম্পের) অধীন ওভাল অফিস বিশৃঙ্খল ঝড়ের কেন্দ্রস্থল। অথচ এটা নির্দেশনা কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্পের কাছে প্রেসিডেন্টের কাজ হচ্ছে দিনে কয়েক ঘণ্টা বসে টেলিভিশন দেখা ও সামাজিক মাধ্যমে লোকজনকে সমালোচনা করা।’ এই হলো ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছোটবেলা থেকেই অনেক দুষ্টু ছিলেন তিনি। নিউইয়র্কে বিত্তশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অর্ধেক স্কটিশ। কারণ তার মা মেরি ম্যাকলয়েডের জন্ম স্কটল্যান্ডে। ১৯৩০ সালে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে মেরি ম্যাকলয়েড চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে প্রথমে পরিচয় ও পরে পরিণয় হয় একজন উচ্চাকাক্সক্ষী বিল্ডার ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পের সঙ্গে। অত্যন্ত পরিশ্রমী এই দম্পতির ঘরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম নিউইয়র্ক শহরে, ১৯৪৬ সালে। পরিবারের অঢেল সম্পত্তি সত্ত্বেও তার পিতা চেয়েছিলেন তার সন্তানরাও তাদেরই কোম্পানিতে অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে কাজ করবেন। স্কুলে দুষ্টুমি করতে শুরু করলে ১৩ বছর বয়সে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সামরিক একাডেমিতে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেছেন মি. ট্রাম্প।
রাষ্ট্রপ্রধানকে ধাক্কা দিয়েও বিতর্কে
একবার রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘ধাক্কা’ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রধান কার্যালয়ে ২৭টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ট্রাম্পও হাজির হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটাই ছিল ট্রাম্পের প্রথম ন্যাটো সফর। এখানেও সবসময়ের মতো ব্যতিক্রমী ট্রাম্প ক্যামেরাবন্দী হন। সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন একসঙ্গে হেঁটে আসছিলেন, হঠাৎ করেই পেছনের সারিতে থাকা ট্রাম্প এগিয়ে এসে সামনের সারিতে থাকা মন্টেনেগ্রোর প্রধানমন্ত্রী দুসকো মারকোভিচকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। আচমকা ধাক্কা খেয়ে প্রথমে স্তম্ভিত হলেও পুরো পরিস্থিতিটাই হালকা মেজাজে সামলে নিতে দেখা যায় মারকোভিচকে। এমন ঘটনা আরও আছে ট্রাম্পের। এর কয়েক দিন আগেও তিনি বিতর্কের জন্ম দেন। তিনি সদ্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক প্রকার জোর করেই করমর্দন করেন।
ধনকুবের তবুও নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা
প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এমন কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন- নেক-টাই থেকে শুরু করে বোতলজাত পানি বিক্রি করে। কী নেই তার নামে- ট্রাম্প মর্টগেজ, ট্রাম্প শাটল, অনলাইন ট্রাভেল ওয়েবসাইট- গো ট্রাম্প, ট্রাম্প রেস্তোরাঁ, ডোনাল্ড ট্রাম্প ডলস ইত্যাদি ইত্যাদি!
ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থবিত্তের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলার। যদিও মি. ট্রাম্পের হিসাবে এর পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার। তবে এর মধ্যে নিজেকে তিনি কয়েকবার অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন।
একবার ১৯৮০-এর দশকের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি ফিফথ এভিনিউ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। টিফানির (কন্যা) সামনে ছিল এক ব্যক্তি। তার হাতে ছিল একটি ক্যান। আমি তখন তাকে বললাম তুমি কি জানো যে এই লোকটি আমার চেয়েও বিত্তশালী। আমার দিকে তাকিয়ে সে বলল তুমি কী বলছ? আমি বললাম রাস্তার ওপাশে যে লোকটি তার এখন আমার চেয়েও ৯০০ মিলিয়ন ডলার বেশি অর্থ আছে। তবে তার এই সম্পদের পরিমাণ তার মেজাজ-মর্জির মতোই ওঠা-নামা করেছে।
টেলিভিশনে উপস্থাপনা
বিনোদন জগতের ব্যবসাতেও ট্রাম্প এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এ নিয়ে আগ্রহ ছিল তার ছোটবেলা থেকেই।
তাই জীবনের একটা পর্যায়ে এসে টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করেন তিনি। এর মাধ্যমেই রাতারাতি পরিচিত হয়ে উঠেন এই ধনকুবের। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএসএ সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে তিনি এনবিসি টেলিভিশনে দ্য অ্যাপ্রেনটিস নামের একটি রিয়েলিটি শো চালু করেন। ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন। এই শো দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই শোয়ের বেশ কিছু অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। শো ম্যান থেকে শোবিজেও সফল হয়েছেন তিনি। পরে তিনি ঘোষণা করেন যে, এই অনুষ্ঠান করে তিনি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ (২১৩ মিলিয়ন ডলার) পেয়েছিলেন।
অভিযোগ ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি ও মিথ্যাবাদী
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি। তিনি একজন মিথ্যাবাদী। এ কথা বলেছেন বিশ্বের অনেকেই। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি একই মন্তব্য করেন। ন্যান্সি পেলোসি বলেন, মিথ্যা বলেন ট্রাম্প। সংবিধানের প্রতি তার কোনো শ্রদ্ধা নেই। তিনি শিশুদের ক্ষতি করেন। ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ট্রাম্পের পুনর্র্নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন পেলোসি। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও চার বছরের জন্য ট্রাম্পকে সহ্য করতে পারবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত পেলোসি। মার্কিন জনগণ ঠিকই নির্বাচনে ট্রাম্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপেরও নিন্দা জানিয়েছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বার্ষিক ভাষণের অনুষ্ঠানে ন্যান্সি পেলোসি রীতি অনুযায়ী সৌজন্য দেখানোর জন্য করমর্দনের উদ্দেশে ট্রাম্পের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সঙ্গে করমর্দন করেননি। এই ঘটনার প্রতিবাদে ট্রাম্পের ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেলোসি ক্যামেরার সামনে ওই ভাষণের অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।
জাতীয় সংগীতের সময়ও অসতর্ক
জাতীয় সংগীতের সময়ও ট্রাম্প ছিলেন অসতর্ক। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটা মেনে নিতে পারেননি কেউই। ইস্টার এগ অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউসে হাজারো মানুষের সামনে জাতীয় সংগীত বেজে উঠেছিল। সস্ত্রীক ট্রাম্পও ছিলেন সেখানে। জাতীয় সংগীতের সময় সবাই যখন সম্মান জানাতে বুকে হাত রেখে গেয়ে উঠেছিলেন, ট্রাম্প কিন্তু সেদিনও ব্যতিক্রম। তিনি বুকে হাত না রাখায় পাশেই দাঁড়ানো তার স্ত্রী মেলানিয়া সবার অলক্ষ্যে খোঁচা মেরে বুকে হাত রাখার জন্য ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করেন। তার পরই ট্রাম্প বুকে হাত রেখে জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন। সেদিন মেলানিয়া অলক্ষ্যে বিষয়টি সামাল দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে দৃশ্যও ধরা পড়ে গিয়েছিল উপস্থিত কোনো অতিথির ক্যামেরায়। এদিকে সদ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ট্রাম্প ফলাফল না মেনে নেওয়ায় তাকে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি এসেছে। নির্বাচনের ফলে হার না মানতে পারলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জনগণই একেবারে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেবেন। এমনভাবেই ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের প্রচার দল হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বারবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল মেনে নিতে চাইছেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরিপ্রেক্ষিতে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাইডেনের প্রচার দল।
হ্যান্ডশেক নয় যেন যুদ্ধজয়
বিশ্বনেতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দুই হাত উল্টো দিকে নিয়ে দুই পাশের দুই নেতার সঙ্গে হাত মেলাবেন। কিন্তু ট্রাম্প হাত মেলাতে গিয়ে দুই হাতই ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নয়ন উং পুংয়ের দিকে বাড়িয়ে দেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট বা প্রার্থীরা খুব কম বিষয়ই গোপন রাখতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। অনেক সময় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলোও জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। মার্কিন ধনকুবের ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য ও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা যেন এসব কিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদ্বেষীরা ইতিমধ্যে এমন কিছু গোপন বিষয় প্রকাশ করেছেন যা রীতিমতো মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের অন্য এক চেহারা সামনে এনেছে বারবার।
হ্যান্ডশেক নয় যেন যুদ্ধজয়ের ঘটনা তার মধ্যে একটি। গ্রুপ হ্যান্ডশেকে অঘটন ঘটিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান ন্যাশন’স ম্যানিলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে রীতিমতো মল্লযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কথা ছিল, বিশ্বনেতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দুই হাত উল্টো দিকে নিয়ে দুই পাশের দুই নেতার সঙ্গে হাত মেলাবেন। কিন্তু ট্রাম্প হাত মেলাতে গিয়ে দুই হাতই ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নয়ন উং পুংয়ের দিকে বাড়িয়ে দেন। ততক্ষণে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তে ট্রাম্পের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছেন। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে কিছুটা হতভম্ব হন ট্রাম্প। এরপর ব্যতিব্যস্ত হয়ে সঠিকভাবে দুই নেতার সঙ্গে হাত মেলান। হাত মেলানোর পর ট্রাম্পের মুখে দেখা যায় বিজয়ের হাসি। যেন যুদ্ধ জয় করলেন তিনি।
বারবার উঠেছে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ
ট্রাম্পের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেক নারী। ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। পর্নো স্টার স্টর্মির সঙ্গে ট্রাম্পের সেক্স স্ক্যান্ডাল হয় সবচেয়ে আলোচিত। প্রথম নির্বাচনের বছরে স্টর্মির সঙ্গে যৌনমিলনের ব্যাপারটি গোপন রাখতে ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে যখন তার বয়স ২৬ ছিল, তখন ট্রাম্পের সঙ্গে তার ১০ মাস প্রেম চলেছে এবং এর মধ্যে একবার তাদের যৌনমিলনও হয়। আর ঘটনাটি চাপা রাখতেই তাকে অর্থ দেওয়া হয়। ট্রাম্প অবশ্য এটা অস্বীকার করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিও ব্লগে জেসিকা লিডস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। বলেন, ১৯৮০ সালের কোনো একসময় নিউইয়র্কগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার পর পাশের সিটে বসা ট্রাম্প তার স্তন চেপে ধরেন এবং স্কার্টের ভিতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করেন। সে সময় জেসিকার বয়স ছিল ৩৮ বছর। রিয়াল স্টেট কোম্পানির ‘রিসিপশনিস্ট’ হিসেবে কাজ করার সময় ট্রাম্প র্যাচেলকে বিনা অনুমতিতে সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তিনি এই অভিযোগ করে জানান যে, ঘটনাটি ২০০৫ সালের এবং তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। সামান্থা ২০০৬ সালে মিস ক্যারোলিনা হয়েছিলেন। আমেরিকার বিউটি কনটেস্টেও তিনি অংশ নেন। এনবিসি টিভির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলার সময় ট্রাম্প সরাসরি প্রতিযোগীদের পোশাক বদলের কক্ষে ঢোকেন। তখন তাদের বেশির ভাগই নগ্ন ছিলেন বা বাথরোব পরেছিলেন। সিএনএনকে সামান্থা বলেন, ট্রাম্প আমাদের এমনভাবে দেখছিলেন যেন আমরা এক-একটি ‘মাংসপি-’ ২০০৬ সালে ট্রাম্পের রিয়েলিটি শো ‘দ্য প্রিন্টিস’-এ কাজ করতেন সামার জারভোস। ২০০৭ সালে একটি কাজের ব্যাপারে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর ট্রাম্প তাকে বিছানায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। সামারের অভিযোগ তিনি বিছানায় যাওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ‘ট্রাম্প আমার কাঁধে জোরে চাপ দিয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকেন। শুধু তাই নয়, আমার বুকে হাত দিয়ে পিষতে থাকেন তিনি।’ ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে ক্রিস্টিন বলেন, ১৯৯০ সালে একটি নাইট ক্লাবে ট্রাম্প তার স্কার্টের মধ্যে জোরপূর্বক হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ‘সে সময় তিনি আমার যোনি পর্যন্ত স্পর্শ করেছিলেন, অভিযোগ ক্রিস্টিনের। ট্রাম্পের দেওয়া এক পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন লিসা ১৯৯০ সালে। সেখানে ট্রাম্পের সামনে একটা টেবিলে তাকে নাচ করতে বাধ্য করা হয়। নিচে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প পোশাকে উঁকি দিয়ে ভিতরটা দেখছিলেন আর ঠিক কী দেখতে পারছেন তা অশ্লীলভাবে বলছিলেন। ‘সিক্সটিন উইমেন অ্যান্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নামের এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে এসব কথা জানান লিসা। পর্নো তারকা জেসিকা ড্রেইক ২০১৬ সালে লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে দাবি করেন যে, ১১ বছর আগে ট্রাম্প তাকে জোর করে ধর্ষণ করেন। এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিজনেস পার্টনার’ ছিলেন জিল হার্থ। জিলের অভিযোগ ট্রাম্প তার দাঁতে জোর করে চুমু খেয়েছেন। নিজের ঠোঁট বুকে ঘষেছেন এবং যৌনাঙ্গে হাত দিয়েছেন। স্বামী, তিন সন্তান এবং শাশুড়ির সামনে ট্রাম্প তাকে চুমু খেয়েছিলেন বলে ক্যাথির অভিযোগ। ১৯৯৭ সালে ট্রাম্পের রিয়ালিটি শোতে পরিচিত হওয়ার সময় ট্রাম্প নাকি সবার উপস্থিতিতেই ক্যাথির সঙ্গে ওই কান্ড ঘটান। সাবেক মিস ফিনল্যান্ড নিনি লাকসোনেনের অভিযোগ, ডেভিড লেটারম্যানের সঙ্গে ‘দ্য লেট শো’ নামের একটি অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ফটোশুটের সময় ট্রাম্প তার নিতম্বে চাপ দেন। ২০১৬ সালে মেলিন্ডা পাম বিচ পোস্ট পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে একটি অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তখন ট্রাম্প তার নিতম্বে হাত দেয়। ঘটনার সময় মেলিন্ডার বয়স ছিল ২৩ বছর। ২০০৫ সালে ‘পিপলস’ ম্যাগাজিনের ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যান স্টোয়নফ। সে সময় ট্রাম্প তাকে বিনা অনুমতিতে চুমু খান। সাংবাদিক নাতাশার অভিযোগ, ট্রাম্প তাকে দেয়ালের সঙ্গে জোর করে চেপে ধরেন এবং জিভটা ঠোঁটের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমেরিকার উটা রাজ্যের সাবেক ‘মিস উটা’-র অভিযোগ, ট্রাম্প জোর করে তাকে দুইবার চুমু খেয়েছেন। ১৯৯৭ সালের মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় একবার এবং আরেকবার ট্রাম্প টাওয়ারে ওই কীর্তি করেন তিনি, অভিযোগ ট্যাগার্টের। তখন তার বয়স ২১ বছর। ভার্জিনিয়া ১৯৯৮ সালে ইউএস ওপেন টেনিস খেলা দেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কারিনা। তখন ট্রাম্প নিজের গাড়ি থেকে নেমে কারিনার বাহু ধরেন এবং বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। সূত্রঃ বিডিপ্রতিদিন
এসএস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন