বিশ্ব

একশ দিনের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন বাইডেন

ভ্যাকসিন দেয়ার
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন বলেছেন, দায়িত্ব নেয়ার ১০০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসের  ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্য পূরণ করবেন তিনি।

তিনি বলেন, তার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম মাসগুলোতে হয়তো মহামারি শেষ হয়ে যাবে না, কিছু কৌশলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতিপথ পরিবর্তন করে দেবেন তিনি।

স্বাস্থ্য বিষয়ক দলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ারপর পুরো আমেরিকা যেন “১০০ দিনের জন্য মাস্কে মোড়া থাকবে।”

মঙ্গলবারের একটি রিপোর্টের পর ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন অনুমোদন এবং আমেরিকানদের জন্য সরবরাহের পথ সূচিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মধ্যে হোয়াইট হাউসে কোভিড ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচী, যেটি অপারেশন ওয়ার্প স্পিড নামে পরিচিত সেটির সদস্যদের সাথে বৈঠক করেছেন এবং ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১৫ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে কোভিডের সংক্রমণ পাওয়া গেছে এবং ২ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। দুই ক্ষেত্রে যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

দেশটির অনেক এলাকাই এখন সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়ায় আছে, অনেক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষের ভ্রমণকেই এর জন্য দায়ী করছেন।

বাইডেন কী বলেছেন?

প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডেলাওয়ারে একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন যেখানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল জেভিয়ার বেসেরাকে তার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে এবং রোশেল ওয়ালেনস্কিকে জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান হিসেবে মনোনয়ন দেন।

 

মি. বাইডেন বলেন, “আমার প্রথম ১০০ দিনে কোভিড-১৯ ভাইরাস শেষ হয়ে যাবে না। সেটা আমি ওয়াদা করতে পারবো না। আমরা হঠাৎ করেই এই বিপদে জড়াইনি আর তাই হঠাৎ করেই উঠেও আসা যাবে না।”

তিনি বলেন, প্রথম ১০০ দিনে আমরা রোগের গতিপথ বদলে দিতে পারি এবং আরো ভাল কিছুর জন্য আমেরিকার জীবন পাল্টে দিতে পারি।

তিনি সতর্ক করে বলেন যে,কংগ্রেস যদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সমাপ্তি টেনে জরুরি ভিত্তিতে তহবিলের ব্যবস্থা না করে তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সব প্রচেষ্টা “মন্থর আর আটকে” যেতে পারে।

তিনি বলেন, শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে নেয়াটাও অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকবে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই ভ্যাকসিন কর্মসূচী কেমন হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু জানাননি মি. বাইডেন।

গত সপ্তাহে তিনি অভিযোগ করেন যে, ক্ষমতা ছাড়ার বিষয়ে তার কাছে কোন পরিকল্পনা তুলে ধরেননি ট্রাম্প প্রশাসন। অপারেশন ওয়ার্প স্পিড নামে ভ্যাকসিন কর্মসূচীর প্রধান বিজ্ঞানী মনসেফ স্লাউই এখনও বাইডেন টিমের সাথে দেখা করেননি। তবে এ সপ্তাহে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মি. বাইডেনের অন্যান্য উপদেষ্টাদের মধ্যে ডা. অ্যান্থনি ফাউচি হচ্ছে প্রধান কোভিড মেডিকেল উপদেষ্টা।

হোয়াইট হাউসে কী ঘটেছে?

আমেরিকার জনগণের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার কারণে অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের একটি উদযাপন অনুষ্ঠান ছিল এটি। যদি এই কর্মসূচীর মূল কাজ চলবে জো বাইডেনের শাসনামলে।

 

টিকার অনুমোদন সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন: “তারা বলছে যে এটা অলৌকিক ঘটনা আর আমারও সেটাই মনে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “প্রতিটি আমেরিকান ভ্যাকসিন পেতে চায় এবং আমরা মনে করি বসন্ত নাগাদ আমরা এমন একটি অবস্থানে থাকবো যেটা হয়তো কিছুদিন আগ পর্যন্ত কেউ বিশ্বাসও করতে পারেনি।”

জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ২৪ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার যাবে বলে আশা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এরইমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশেও সই করেছেন যা আমেরিকানরাই যাতে প্রথমে ভ্যাকসিন পায় সেটা নিশ্চিত করবে। একে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুযায়ী পদক্ষেপ বলে দেখা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে ১০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা কিনতে ফাইজার/বায়োএনটেকের সাথে চুক্তি করেছে মি. ট্রাম্পের প্রশাসন। কিন্তু ফাইজার বোর্ডের এক সদস্য বলেছেন এর চেয়ে বেশি ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব কয়েকবার নাকচ করে দেয়া হয়েছে এবং জুনের আগ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়নের বেশি ডোজও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য প্রথম দেশ হিসেবে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করে।

 

ভ্যাকসিন নিয়ে কোন অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র?

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ৯৫% পর্যন্ত কার্যকর। তার মানে এটি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার করা যাবে।

দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ভ্যাকসিনটির অনুমোদন রুখে দেয়ার মতো কোন স্বাস্থ্য-ঝুঁকি পায়নি এবং এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে।

যদিও পূর্ণ সুরক্ষা পেতে দুটি ডোজ দরকার হবে তবুও একটি ডোজ নিলেও ঝুঁকির ক্ষেত্রে অন্তত ৮৯% সুরক্ষা পাওয়া যাবে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে লাল দানা বা র‍্যাশ, ইনজেকশন দেয়ার জায়গায় জ্বালাপোড়া, সাময়িক ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, এবং পেশী ব্যথা হতে পারে। তবে এগুলো গুরুতর নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ফার্ম মডার্নাও বলেছে যে তাদের ভ্যাকসিনও একই রকম সুরক্ষা দেবে এবং বড়দিনের আগেই এফডিএ এর অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্রঃ বিবিসি

বাঅ/এমএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন