দেশের সংবাদ

সড়ক দুর্ঘটনা : কুয়াশায় পথ দুর্ঘটনা রোধে যা করা যেতে পারে

সড়ক দুর্ঘটনা
ছবিঃ সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনা : কুয়াশায় পথ দুর্ঘটনা রোধে যা করা যেতে পারেঃ 

বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় ট্রাক ও পিক-আপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন দুটি পরস্পরকে দেখতে না পাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে শীতকালে সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হচ্ছে ঘন কুয়াশা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও কখনোই যান চলাচল বন্ধ করা হয় না।

অথচ ফেরির তুলনায় সড়কে যান চলাচল আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

প্রতি বছরই কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ে উল্লেখ করে মি. তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে তেমন কোন গবেষণা না থাকার কারণে এর পরিসংখ্যানটা জানা যায় না।

কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা কেন ঘটে?

অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, কুয়াশার কারণে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে সামনের গাড়ি দেখা বা এর দূরত্ব আঁচ করা যায় না। যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

এছাড়া বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকরা গাড়ি চালানোর নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলেন না। কুয়াশায় দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ বলে মনে করেন তিনি।

“দেখা যায় যে, দুটি লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে কিন্তু ড্রাইভার হয়তো একটি লাইট জ্বালিয়েই গাড়ি চালাচ্ছে।”

 

কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে গেলে গাড়ি না চালিয়ে রাস্তার পাশে নিরাপদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটা জরুরি। কুয়াশা পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে দৃষ্টিসীমা স্বাভাবিক হলে তারপর গাড়ি চালানো উচিত। তবে এগুলোও মানা হয় না বলে জানান মি. তালুকদার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সকালের দিকে কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেশি হয়। কারণ এ সময়ে চালকদের ঘুম না হওয়ার কারণে ঝিমঝিম ভাব থাকে আর সেই সাথে কুয়াশা থাকার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে।

মি. তালুকদার বলেন, তাদের করা গবেষণার অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন চালকদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, কুয়াশায় গাড়ি ধীরে চালানোর নিয়ম থাকলেও যাত্রী বেশি পাওয়ার লোভে কিংবা যাত্রীদের চাপ থাকার কারণে অনেক সময় তাদের গাড়ির গতি কমানো হয় না। যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

এছাড়া বাংলাদেশে মালবাহী যানবাহন রাত এবং সকালের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শহরাঞ্চলে প্রবেশ ও বের হওয়ার নিয়ম থাকার কারণেও অনেক সময় চালকরা গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে আগ্রহী হয় না।

তিনি বলেন, গাড়ি চালনাকে যারা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, বেশিরভাগ সময়েই তাদের মধ্যে জীবন নিয়ে হতাশাবোধ থাকে। যার কারণে তারা অনেক সময় সাবধানতা এড়িয়ে যান। দুর্ঘটনার এটিও একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে কী ধরণের নির্দেশনা রয়েছে?

ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালানোর বিষয়ে নানা ধরণের সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানী।

তিনি বলেন, শীতকালে ঘন কুয়াশায় নিরাপদে গাড়ি চালনার বিষয়ে চালকদের উদ্বুদ্ধ করতে তাদেরকে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এসব লিফলেটে বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।

এসব নিয়ম কানুনের মধ্যে রয়েছে-

  • কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন ধীর গতিতে সব সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে।
  • ফগ লাইট এবং পার্কিং লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
  • লেন পরিবর্তন বা ওভারটেকিং করা যাবে না। কারণ পেছনের গাড়ি ঘন কুয়াশায় সামনের গাড়িকে নাও দেখতে পারে।
  • হাই বিম কুয়াশাকে আরো বেশি ঘন করে বিধায় হাই বিমে গাড়ি চালানো যাবে না। সব সময় লো-বিমে গাড়ি চালাতে হবে।

শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানী অবশ্য বলেন যে, মূলত গাড়ি চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে এগুলো না মানলে কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নেই।

তবে অনুমোদনহীন লেন পরিবর্তন বা ওভারটেকিং বেআইনি হওয়ায় এটি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানান তিনি।

 

কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব?

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাস্তার সংখ্যা কম থাকায় এবং একই গন্তব্যের বিকল্প রাস্তা না থাকার কারণে কুয়াশা হবে জেনেও সেগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করা যায় না বলে উল্লেখ করেন বিআরটিএর কর্মকর্তা শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানী।

“আমাদের দেশে তো এখনো রাস্তা-ঘাটই হয় নাই, কী বন্ধ করবেন? ঢাকা-থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কি বিকল্প কোন রাস্তা আছে? তাহলে এটা তো বন্ধ করা যাবে না,” তিনি বলেন।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে কুয়াশার ধরণ একেক সময় একেক রকম হয়ে থাকে। কখনো ঘন কুয়াশা, আবার কখনো হালকা কুয়াশা দেখা যায়। এ কারণে ব্যবস্থা নেয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ে।

কুয়াশা যেহেতু একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে হয় তাই সবার আগে আবহাওয়া কুয়াশার বিষয়ে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তথ্য নিতে হবে।

তবে দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে হলে অতিরিক্ত ঘন কুয়াশা কোন রাস্তায় দেখা গেলে সেটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে।

“শীতের সময়ে কুয়াশা যখন বেশি থাকে তখন রাস্তায় যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখাটা জরুরি।”

এ বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেমন জেলা প্রশাসন, উপজেলা কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে সহজেই ব্যবস্থা নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

মি. তালুকদার বলেন, এ নিয়ে গাড়ি বা যান চালকদের ঘন কুয়াশায় কী ধরণের নিয়ম মেনে চলা উচিত সে বিষয়ে পরিষ্কার কোন আইন বা নির্দেশনা নেই।

যা আছে সেগুলোরও তেমন কোন বাস্তবায়ন নেই বলে মনে করেন বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এই শিক্ষক।

তিনি মনে করেন, আইন বা জরিমানা করে সড়ক দুর্ঘটনা পুরোপুরি রোধ সম্ভব নয়। বরং আইন ও নিয়ম-কানুন যাতে মানুষ মেনে চলে সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।

“শুধু চালক নয় বরং মালিক পক্ষ, যাত্রী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে যে, ফগি ওয়েদারে (কুয়াশায়) গাড়ির গতি কমিয়ে সাবধানে চালাতে হবে।”

তিনি বলেন, কুয়াশায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কী ধরণের ব্যবস্থা নেয় সেগুলো বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সূত্রঃ বিবিসি

বাঅ/এমএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন