প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠকারী কার্যকলাপ গনতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি চরম হুমকীসরুপ
গত বছর ২০২০ খ্রী: ৩ নভেম্ভরের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এমন মতামত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা বা অফিশিয়ালরা, কাউন্টি এবং অঙ্গরাজ্য পর্য্যায়ের ডেমোক্র্যাট দলের নেতৃবৃন্দ। এমনকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতৃবৃন্দ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। । ৩ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী ফলাফল প্রকশের পর পপুলার ভোটেই জো বাইডেন সাত মিলিয়ন বা ৭০ লাখেরও ভোটের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে । যুক্তবাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে ৫৩৮ ভোটের মধ্যে ২৭০ টি ভোট অর্জন হল ম্যাজিক নাম্বার অর্থাৎ ২৭০ ভোট যিনি পাবেন তিনিই হবেন আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেনট ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেনট জো বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬ টি ইলেক্টোরাল ভোট অন্যদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন- ২৩২ টি ইলেক্টোরাল ভোট. । প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩ নভেম্ভরের নির্বাচনে পপুলার ভোট ও ইলেক্টোরাল উভয় ক্ষেএেই ভোটে প্রেসিডেনট ইলেক্ট জো বাইডেনের কাছে গো হারা হেরেছেন।
কিনতু অত্যধিক দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠকারী কার্যকলাপ গনতান্ত্রিক মতাদর্শকে বৃৃদ্যাঙ্গূলি দেখিয়ে ছলে বলে কৌশলে, মিথ্যা প্রহসন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যেমন করেই হোক ক্ষমতা ও হোয়াইট হাউজের গদি তার দখলে রাখার অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতারক ও মিথ্যুক প্রেসিডেন্ট: ট্রাম্প তার পক্ষে তার প্রতারক আইনজীবী রুডলফ জুলিয়ানী ৬০টির মত ভূয়া মিথ্যা মামলা দায়ের করলো। ট্রাম্প যেমন করেই হউক নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেবেন এমন প্রচার চালিয়ে ট্রাম্প তার উগ্র/অন্ধ ভক্ত ও অনুরক্তদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে নির্বাচনের পর ২০০ মিলিয়নেরও বেশী ডলার তুলে নিয়েছেন । প্রতারক আইনজীবীর দায়েরকৃত মামলাগুলো একে একে ভন্ডুল হয়ে গেল। প্রতারক আইনজীবী প্রতিশ্রুতি দিল ট্রাম্পকে -সে মামলা করে বিজয় এনে দিবে। কিন্তু বাধ সাধলেন আমেরিকার নির্ভিক ও নিরপেক্ষ বিচারকরা। তিরস্কারের ভাষা দিয়ে মামলাগুলো প্রত্যাখ্যান করলেন নির্ভীক বিচারকরা যাদের – অনেকেই ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক এবং ট্রাম্প দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, জর্জিয়া, মিনেসোটা, নেভাদা এবং আরিজোনার বিচারকদের লোভ ও ভীতি প্রদর্শন করা হোল। কিন্তু গনতন্ত্র ও ন্যায় বিচারের বৃহওর স্বার্থে নির্ভীক বিচারকেরা একাট্রা হয়ে ট্রাম্পের ভুয়া ও ভিওিহীন মামলাগুলো প্রত্যখ্যান করলেন। এমনকি কেন্দ্রীয় বিচারকরা মামলাগুলোর অন্তঃসারশূন্যতা বর্ণনা করে কঠিন ভাষায় নাকচ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রতিটি আদালতই বলছেন, এসব মামলার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর আবেদনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। একে বিস্ময়কর আখ্যা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশ্ন রাখেন, ‘এ কেমন আদালত?’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছলে বলে কলা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার রিপাবলিকান পার্টিকেই হুমকি দিচ্ছেন। চাপ দিয়ে আইনপ্রণেতাদের নিজের পক্ষে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে পরাজয় না–মানা ট্রাম্প ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে একদিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করছেন একের পর এক, অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জ্ন্য অবৈধ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বেপরোয়া হয়ে অপচেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। মানসিকভাবে রুগ্ন,দূর্নীতিবাজ ও বেপরোয়া ট্রাম্প বুঝতে পারল না – বেআইনিভাবে জনগণের দেওয়া ভোট আমেরিকার মত গনতান্ত্রিক দেশে পাল্টাতে পারবে না। তবু তার অসৎ ও অশুভ চেষ্টার শেষ নেই। সে আমেরিকার এটর্নি জেনারেল বা বিচার মন্ত্রী উইলিয়াম বারকে চাপ দিল। সে যেন এফবিআই ও অন্যান্য এজেন্সির সাহায্যে অবৈধভাবে জনগণের ভোটকে নস্যাৎ করে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দেয় ২য় বারের জন্য। আমেরিকার এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ট্রাম্পের খুবই ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত ছিল কিন্তু তাকে পর্যন্ত রাজী করানো গেল না। এতো বড় অন্যায় করলে এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারেরও একদিন বিচার হতে পারে। তাই এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বললেন, নির্বাচনে এমন কোন ভুয়া ভোটের প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার ভিত্তিতে ফলাফল (অর্থাৎ বাইডেন বিজয়ী) উল্টে দেওয়া যাবে। ১৫ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর মাত্র ১৫ দিন সময় রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। আমেরিকার আইন অনুসারে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় রয়েছেন এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ইলেকটেড প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর ১৫ দিনের মধ্যেই ২০ জানুয়ারী শপথ নেবেন ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে নবনির্বাচিত প্রসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন। কিন্তু শেষ প্রহরেও ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে সব রকমের অবৈধ ও বেআইনীভাবে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। অবৈধভবে ক্ষমতায় থাকতে Martial law জারীর কথাও শোনা যাচছে । এদিকে, বিদায় বেলায় বাইডেনকে ফাঁসিয়ে যেতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ‘বেপরোয়া’ সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানে ‘ভয়াবহ হামলা’ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এরই মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পারস্য উপসাগরে তিন দফায় মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান উড়িয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবারও পারস্য উপসাগরে ওড়ে এই বিমান। আবার ইরান কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রথম বর্ষপূর্তির আগে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইরান কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছে। সব মিলিয়ে মুখোমুখি অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।
ট্রাম্পের অপকর্মেরআরেকটি উদাহরণ এখানে দেওয়া হল ।গত শনিবার অপ্রত্যাশিত এক টেলিফোনে কল এল White House থেকে। এক প্রান্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপর প্রান্তে দেশটির জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচনী কর্মকর্তা। তার কাছে ট্রাম্প অবৈধভাবে তাকে বলেন ১১,৭৮০টি ভোটের ‘ব্যবস্থা’ করে দিতে হবে। আর এতে জো বাইডেনের কাছে পরাজয় এড়ানো সম্ভব। আর এটা করতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে টোপ দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে হুমকিও। কিন্তু ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা রবিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জর্জিয়ার শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা, রিপাবলিকান দলীয় রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট, ব্র্যাড রেফেনস্পেরজের’র মধ্যেকার ফোনালাপের অডিও ফাঁস করে দিয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, রেফেনস্পেরজের’র ওপর অব্যাহত চাপ সৃষ্টি, সমালোচনা ও কটাক্ষ করা অব্যাহত রাখেন। ব্র্যাড রেফেনস্পেরজের টুইটার বার্তায় পরে বলেন, ‘স্যার, অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে আপনাকে জানাচ্ছি, আপনি যা বলছেন, তা সঠিক নয় ও যা সত্য, তা বেরিয়ে আসবে।’ ট্রাম্পকে সেই কলে বলতে শোনা যায়, “জানেন কি এই কাজ না করা অপরাধ। একটি ফৌজদারি অপরাধ। আশা করি সেটা আপনারা হতে দেবেন না। এটি আপনাদের পক্ষে বড় ঝুঁকি। বেশ বড় ঝুঁকি।”যদিও কর্মকর্তাকে খুব ঠাণ্ডা স্বরেই সাহসিকতার সসেই পেসিডেন্টর নির্দেশ খারিজ করতে শোনা যায়। বলতে শোনা যায়, ”শুনুন প্রেসিডেন্ট, আপনার হাতে যে তথ্য রয়েছে তা ঠিক নয়। আমরা মানছি না যে আপনিই জিতেছেন।”
আমেরিকার প্রয়াত প্রাক্তন বিখ্যাত প্রেসিডেন্টবৃন্দ যেমন আমেরিকার প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, সংবিধানপ্রনেতা ৩য় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন, ১৬তম প্রেসিডেন্ট গনতন্ত্রের বিশ্বখ্যাত সংজ্ঞাদাতা আব্রাহাম লিংকন, লীগ অব নেশনস্ এর প্রবক্তা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন, আমেরিকার ৩২তম পরিএাতা ও মানবতাবাদী প্রেসিডেন্ট ফ্রেকলিন ডিলানো রুজভেল্ট (FDR) এবং ৩৫তম গতিশীল প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি জীবিত থাকলে তারা অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনৈতিক, অগনতান্ত্রিক, বেআইনি, মানসিকভাবে রুগ্ন কারযকলাপে অবশ্যই লজ্জা বোধ করতেন ।আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টবৃন্দ যারা এখনও বেঁচে আছেন যেমন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, প্রে: জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা, নবনির্বাচিত প্রেসিডেনট জো বাইডেন – এরা সকলেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ, হতবাক ও বিস্মিত । প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকী, বেআইনী ও অগনতান্ত্রিক কার্যকলাপ গনতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি চরম হুমকীসরুপ। আমরা গনতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যাশা করবো আগামী ২০ জানুয়ারী আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেন শপথ গ্রহন করবেন এবং এ Transition of power এ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গনতন্ত্রের ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে Transition এ সহযোগীতা করবেন ও শান্তি পূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে বিদায় হবেন। ২০২১ খ্রী: দিকে দিকে দেশে দেশে সত্য, সুন্দর, ন্যায়, গনতন্ত্র ও মানবতার জয় সূচিত হউক-এ প্রার্থনা, প্রত্যাশা ও কামনা করছি ।
লেখক, কলামিষ্ট ও CBNAএর উপদেষ্টা,
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ৫ জানুয়ারী ২০২১
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন