ঝুপড়ি থেকে পাকা ঘর আজ ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারকে ঘর হস্তান্তর
রফিকুল ইসলাম রনি ।। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুরের বাসিন্দা বিধবা কদমবানু (৬০) রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উপহারের পাকা বাড়িতে উঠবেন আজ। সরকারি খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে আধাপাকা বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে তাকে। তার আনন্দের যেন সীমা নেই। তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘মজুরি খেটে ঠিকমতো জীবনই চলে না । জমি কেনা আর বাড়ি বানানোর টাকা পামু কই। এ ঘর না পেলে বাকি জীবন হয়তো ঝুপড়িতে কাটাতে হতো।’ কদমবানুর মতো এখানকার আরেক নারী মিনারা খাতুন। ২০০৭-০৮ সালের দিকে তার স্বামীকে জলদস্যুরা হত্যা করে। মিনারা খাতুন স্বামীপরিত্যক্তা মেয়েকে নিয়ে সরকারি জমিতে জরাজীর্ণ ঝুপড়িতে থাকেন। তিনি ও তার মেয়েও পেয়েছেন মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উপহারের পাকা বাড়ি।
শরণখোলার কদমবানু, মিনারা খাতুনের মতো রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার যামিনী বালার মুখে হাসির ঝিলিক ফুটেছে। যামিনী বালা বললেন, ‘সারাটা জীবন শীতের সময় কাঁচা ঘরে ঘুমাতে পারতাম না, সামান্য বৃষ্টি এলে ভিজে যেতাম। এ বছর শেখ হাসিনা আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করি পাকা ঘর করে দিয়েছেন বলে আর কোনো দিন সেই দুঃসহ কষ্ট সহ্য করতে হবে না।’
কদমবানু, মিনারা, যামিনী বালার মতো বহু ঘরহীন ও ভূমিহীন আজ খুঁজে পাবেন আপন ঠিকানা। কারণ মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারকে সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করবেন। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন তিনি। সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, উপকারভোগীরা ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত থাকবেন। মুজিববর্ষে পর্যায়ক্রমে ৯ লাখ ঘরহীন পরিবারকে এ ঘর প্রদান করা হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারের মাঝে দুটি সেমিপাকা টিনশেড ঘর, একটি বসার ঘর, একটি রান্নার ঘর ও একটি টয়লেট হস্তান্তর করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সরকারের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ হবে দেশের অসহায় ভূমিহীন ও ঘরহীন ৯ লাখ পরিবারের।
সূত্র জানান, টানা এক যুগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কঠোর পরিশ্রম করছেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বেই গ্রামীণ অবকাঠামো, খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তিচুক্তি, সমুদ্রবিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। দেশে চলমান এমন উন্নয়নের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন ‘মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ (মুজিববর্ষ) ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন সরকারপ্রধান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, সারা দেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি ভূমিহীন-ঘরহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ ও সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি ঘরহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ ঘর, পরিবার ও রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ (মুজিববর্ষ) ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তালিকায় থাকা ওইসব ভূমিহীন-ঘরহীন পরিবারকে ঘর করে দিচ্ছে সরকার। ২১ জেলার ৩৬ উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্প গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। একই সঙ্গে একক ঘর ও ব্যারাকে মোট ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন-ঘরহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ২৪ হাজার ৫৩৮টি পরিবারের জন্য মোট বরাদ্দ ৪১৯ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ৩৮ হাজার ৫৮৬টি ঘর বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৯ দশমিক ৮২ কোটি টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ে সিভিআরপি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৬৫টি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ ৫২ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। অতিরিক্ত পরিবহন বাবদ বরাদ্দ (প্রতিটি ঘরের জন্য ৪ হাজার টাকা) মোট ২৬ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া সারা দেশের সব উপজেলায় জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ কোটি টাকা। মোট ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ১৬৮ দশমিক ৭১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প একক ঘর নির্মাণের সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে একক ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
তথ্যমতে, ১৯৯৭ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংখ্যা ২ হাজার ১৭২। নির্মিত ব্যারাক সংখ্যা ২২ হাজার ১৬৪। ব্যারাকে পুনর্বাসিত ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৮। জমি আছে কিন্তু ঘর তৈরির সামর্থ্য নেই এমন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৪ পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য নির্মিত বিশেষ ডিজাইনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ৫৮০টি। ২৩ বছরে পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২। এর আগে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে কক্সবাজারের খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত পাঁচ তলাবিশিষ্ট ২০টি বহুতল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ তলাবিশিষ্ট ১৩৯টি বহুতল ভবন তুলে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন প্রতিটি ভূমিহীন-ঘরহীনকে ঘর করে দেওয়া হবে। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ –বিডি-প্রতিদিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন