প্রবাসের সংবাদ

বিলেতে কমলগঞ্জের শতজন ।। আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা

দেশ হিতৈষী এক  লড়াকু ব্যবসায়ী আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা
দেশ হিতৈষী এক  লড়াকু ব্যবসায়ী আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা

দেশ হিতৈষী এক  লড়াকু ব্যবসায়ী আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা

বিলেতে কমলগঞ্জের শতজন ।। আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা । আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞার জন্ম ২৫শে ডিসেম্বর ১৯৬২ কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী রাজনগর উপজেলাধীন তেরাপাশা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মিঞা বাড়িতে।  বাবার নাম মরহুম আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ আকলু মিঞা। রাজনগরে জন্ম নিলেও ১৯৮০ সাল থেকেই কমলগঞ্জের শমসেরনগরের বাদে সিংরাউলিতে বসবাস করছেন। মোস্তফা মিঞা সাহেবের পিতা আকলু মিঞা সাহেব ষাটের  দশকের শুরু থেকেই লন্ডনে বসবাস করতেন। প্রথম দিকে পরিবার লন্ডনে নিয়ে না আসলেও ১৯৭৯সালে মোস্তফা মিঞাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসেন। বিলেতে কমলগঞ্জের শতজন ।। আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা ১৯৭১সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের আহবানে লন্ডনে বসবাসরত বাঙালীরা অর্থ সাহায্য প্রদানে এগিয়ে আসে। সেই সময়ে লন্ডনে বসবাসরত কমলগঞ্জ থানার রহিমপুর এলাকার জনাব ফারুক আহমেদ (জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইফ জনাব আব্দুস শহীদ সাহেবের চাচাতো ভাই ) ও শমসেরনগরের দুই ধনাঢ্য ব্যক্তি আকলু মিঞা ও হাজী আব্দুল গফুর প্বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে প্রচুর অর্থ সাহায্য প্রদান করেন। দেশ স্বাধীনের পর লন্ডনে বাংলাদেশ সেন্টার গঠনেও তাঁদের দান ও অবদান অনস্বীকার্য। সেই সময়ের তরুণ আকলু মিঞা দেশ স্বাধীনের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে মাঠে ময়দানেও কাজ করতেন।
নয় ভাই বোনের মধ্যে মোস্তফা মিঞা সাহেব হচ্ছেন সবার বড় আর তাঁর ভাই বোনদের মধ্যে সকলেই লন্ডনে স্থায়ী ভাবে বসবাসরত।
১৯৮১সালে জনাব মোস্তফা মিঞা শমসের নগরের চাতলাপুর রোডস্থ রশীদ মঞ্জিলের ডাক্তার আব্দুর রশীদ চৌধুরী সাহেবের মেয়ে উম্মুনারা চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
লন্ডনে এসে জনাব মিঞা কিছু দিন লেখাপড়া করার পর  বাবার পারিবারিক রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। আশির দশকে এই মিঞা পরিবারের রেস্টুরেন্ট লন্ডন ,এসেক্স ছাড়াও কেন্টেও বিস্তৃতি লাভ করে।নব্বইর দশকে এসে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার পরিমাণ ছিলো বারটিরও বেশি।
বিদেশে ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি জনাব মোস্তফা মিঞা বাংলাদেশেও ব্যবসায় প্রবৃত্ত হন। আশির দশকের শুরুতেই তিনি শমসেরনগরে ডেকোরেটার্স ব্যবসা শুরু করেন। লন্ডন ডেকোরেটার্স নামে খ্যাত তাঁর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম এক সময় কমলগঞ্জ থানার পরিধি ছাড়িয়ে সারা মৌলভীবাজার জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। । নব্বইর দশকে এসে জনাব মোস্তফা মিঞা শমসেরনগরের পশ্চিম বাজারে প্রতিষ্ঠা করেন হোটেল নিদ্ মহল। এছাড়া ঐ দশকেই তিনি দেশে অটোমোবাইল ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার সাথেও সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। জনাব মিঞা ২০০০সালের দিকে শমসেরনগরে প্রতিষ্ঠা করেন কমলগঞ্জ থানার সর্ব বৃহৎ বেসরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ইউনিক (প্রাইভেট )মেডিক্যাল হাসপাতাল।জনাব মিঞা ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আর কমলগঞ্জের প্রতিতোযশা চিকিৎসক মৌলভীবাজার জেলার সাবেক   সিভিল সার্জন ডাক্তার সুধাকর কৈরী  ম্যানেজিং ডাইরেক্টর।
অনিবার্য কারণবশত হাসপাতালটি দীর্ঘদিন না চললেও জনাব মোস্তফা মিঞা হাল ছাড়ার পাত্র নন। বছর দশেক আগে শমসেরনগর পশ্চিম বাজারে গড়ে তুলেছেন সু বিশাল মেটাল ইন্ড্রাস্টিজ।
অসংখ্য মানুষের কর্ম সংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করলেও দেশে ও বিদেশে তাঁর ব্যবসায়িক কর্মকান্ড গতিরুদ্ধ হয়নি।
শমসেরনগর এয়ারপোর্ট ও জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ শাহীন কলেজের খুব নিকটে মোগল সেনাপতি খাজা ওসমানের স্মৃতি বিজড়িত ওসমানগড়ে তিনি গড়ে তুলছেন সু বিশাল পার্ক হোটেল এন্ড কমিউনিটি সেন্টার।পর্যটকদের থাকার উপযোগী করে গড়ে তুলা এই প্রতিষ্ঠানটির আশি ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছর দু’একের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পূর্নতা পাবে।
ব্যক্তি জীবনে মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞা অতন্ত সদালাপী ও জনহিতৈষী মানুষ। দেশের মাটি আর মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রগাঢ়।
ব্রিটেনের মতো উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে বাস করেও জীবনে তাঁর খুব কম বছরই এসেছে যে বছর তিনি দেশে যাননি।
দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি আকর্ষণ প্রতিনিয়ত যেন তাঁর ধমনীকে শিহরিত করে।
অত্যন্ত স্বচ্ছল ও ধণাঢ্য ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে ও চলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
মানুষকে দান ও অনুদান প্রদানের চেয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর তিনি গুরুত্ব দেন সবচেয়ে বেশি।তাঁর ও তাঁর পরিবারের দান ও অনুদানের বর্ণনা এই স্বল্প পরিসরে দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
এলাকার রাস্তা নির্মাণ ,স্কুল ,মাদ্রাসা ,মক্তব ,এতিম খানা থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গন পর্যন্ত এমন কোন সেক্টর নেই যেটি  তাঁর অর্থ সাহাষ্য পায়নি। অসংখ্য মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া সহ গ্রামের অস্বচ্ছল যুবকদের অর্থ সাহায্য দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন কৃষি কাজে ও ব্যবসায়।
একেবারে হত দরিদ্র মানুষদের জন্য নিজ গ্রামে বছরে অন্তত দু ‘চারটি কাঙালী ভোজেরও আয়োজন করে থাকেন তিনি।
জনাব মোস্তফা মিঞার ভাই ও বোনরা সকলেই লন্ডনে সু প্রতিষ্ঠিত ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে জড়িত।
বড় ভাইয়ের মতো অন্যান্য ভাই বোনেরাও দেশের প্রতি টান অনুভব করেন এবং সকলেই দেশের জন্য কাজ করেন।
দেশে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন কেউ না থাকা সত্ত্বেও নিজ এলাকায়  প্রতিনিয়ত যাওয়া আসা ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার দৃষ্টান্ত ব্রিটিশ বাংলাদেশী পরিবার সমূহের মধ্যে খুব কম থাকলেও আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ মোস্তফা মিঞার পরিবারের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি ও তাঁর পরিবার অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম।
অত্যন্ত পরিশ্রমী ,পরোপকারী ও দেশ হিতৈষী এই মানুষটি লন্ডনের অভিজাত এলাকা ওয়েষ্ট মিনিষ্টারে চল্লিশ বছর ধরে বসবাস করছেন।তাঁর ছেলে মেয়েরাও সবাই সু-প্রতিষ্ঠিত।
চলবে …  বিলেতে কমলগঞ্জের শতজন..
সৈয়দ মাসুমঃ কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। যুক্তরাজ্য
সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 4 =