এ কারণে রোববার বিকেলে এয়ার এম্বুলেন্সযোগে কামরানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকায়। বিকেল তখন ৫টা। সিলেটের করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের একটি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনা আক্রান্ত কামরান। আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের কিছু সংখ্যক নেতা হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে। একটি এম্বুলেন্সও হাসপাতালের ফটকের কাছে প্রস্তুত করা। পাশেই কালো রঙ্গে আরো একটি এম্বুলেন্স। ওই এম্বুলেন্সে রয়েছেন করোনা আক্রান্ত স্ত্রী আসমা কামরান। বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু ছুটোছুটি করছিলেন। শামসুদ্দিনের চিকিৎসাপত্র নিয়ে তিনি ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা ছিলেন কামরানের সঙ্গে। এমন সময় সেখানে গেলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি ভেতরে চলে গেলেন। দেখা করলেন কামরানের সঙ্গে। সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। বাইরে এসে আবেগ আপ্লুত আসাদ উদ্দিন আহমদও। মানবজমিনকে জানালেন- ‘সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে কথা হয়েছে।
প্রটেকশন নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা করেছি। মোটামুটি ভালো আছেন। তবে- তিনি একাধিক রোগে ভুগছেন। এ কারণে ডাক্তাররাও তাকে নিয়ে চিন্তিত। তবে- মনোবল শক্ত রয়েছে তার। আমরা আশা করি তিনি ঢাকা থেকে সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মধ্যে ফিরবেন।’ এ সময় আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের চিকিৎসা ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞতাও জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একটি হুইল চেয়ারে করে কামরানকে নিয়ে আসা হয় বাইরে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো তাকে। কথা বলতে পারছিলেন না। শুধু দুই হাত তুলে দোয়া চেয়েছেন সবার কাছে। ডাক্তার বেষ্টিত অবস্থায় কামরানকে যখন বাইরে নিয়ে আসা হয় তখন তাকে দেখতে আসা নেতাকর্মীরা দূরে ছিলেন। এগিয়ে যান কামরানের এক ভাই। দূরে দাঁড়িয়ে কামরানের সঙ্গে কথা বলেন। কোনো চিন্তা না করতে তিনি কামরানকে অভয় দেন। এরপর ডাক্তাররা ধরাধরি করে কামরানকে এম্বুলেন্সে তুলেন। এম্বুলেন্সে উঠার পরও কামরান দু’হাত তুলে সবার কাছে দোয়া চান। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা দূরে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বড় মেয়ে আশা পিতাকে দেখে অঝোরে কাঁদছিলো। দৌড়ে কাছে যেতে চাইলে স্বজনরা তাকে সরিয়ে নেন। গাড়ির ছাড়ার প্রাক্কালে পরিবারের এক স্বজন উপস্থিত সবার কাছে কামরানের জন্য দোয়া চান। একটু পরে কামরানকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লো এম্বুলেন্স। এয়ার এম্বুলেন্সটি এসেছিলো সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, সেখানেই নিয়ে যাওয়া হলো কামরানকে। যাওয়ার আগে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন বড় ছেলে আরমান আহমদ শিপলু। জানালেন- ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার পিতাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল- সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানান।’ তিনি সিলেটবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন- ‘আজ আমার পিতা-মাতা করোনা আক্রান্ত। তাদের নিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সিলেটবাসীর কাছে দোয়া চাই। সবাই যেনো প্রাণভরে আমার আব্বা আম্মুর জন্য দোয়া করেন।’ এদিকে- সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কামরানকে নিয়ে এয়ার এম্বুলেন্সের ফ্লাইটটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানববন্দর ছেড়ে গেছে। কামরানের সঙ্গে ঢাকায় গেছেন তার করোনা আক্রান্ত স্ত্রী আসমা কামরান, ভাই এনাম আহমদ ও বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সাবেক মেয়র কামরানের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে বলেছেন- কামরান করোনা আক্রান্ত। পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্টও রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তিনি। ডায়াবেটিস রয়েছে। তার লিভারেও সমস্যা। লাঞ্চে ইফফেক্শন আছে। সুতরাং তার শারীরিক অবস্থা যেকোনো মুহূর্তে খারাপ হতে পারে। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে থাকার সময় সার্বক্ষণিক তাকে মনিটরিং করা হয়। ডাক্তাররা তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছেন।