ফিচার্ড মুখোমুখি

ভ্যাকসিন না নিলে সিম ব্লক

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা
জিডিপির গ্রোথ অব্যাহত রাখতে জীবন-জীবিকার যুদ্ধ করে যেতে হবে

ভ্যাকসিন না নিলে সিম ব্লক

চুয়াডাঙ্গা থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যের নেতৃত্বে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন স্বনামধন্য উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। দেশে গোল্ড ব্যাংক চালু এবং অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে চলেছেন তিনি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এবং স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। বাংলাদেশে ডায়মন্ড জুয়েলারি জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য করে তোলার পেছনে দিলীপ কুমার আগারওয়ালার ভূমিকা অগ্রগণ্য। তিনি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। করোনা মহামারিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এ আহাদ শাহীন

করোনার কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য ধুঁকছে। আপনারা এ যুদ্ধ কীভাবে সামলাচ্ছেন?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : এইযুদ্ধ সারা পৃথিবী যেভাবে সামলাচ্ছে আমরাও সেভাবে সামলাচ্ছি। কোভিডকালীন সময়ে যেখানে শতভাগ লকডাউন এই জায়গায় মনে হয় না পজেটিভ ম্যাসেজ আমার কাছ থেকে বের হবে। জুয়েলারি সেক্টরের অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছে। অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। আমাদের সিজন তো চারটি। একটি সিজন হলো পহেলা বৈশাখ। সেটা পায়নি। ঈদ সেটাও পায়নি। এবার কোরবানিতে ব্যবসার জন্য কোনো রকম পাঁচদিন সুযোগ দিয়েছিল বলে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এ কারণে কিছুটা হলেও মানুষ ঘর থেকে বের হয়েছিল। এই ঈদটা হলো মানুষ কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত থাকে বেশি। জুয়েলারি হলো হাই রেন্ট প্রোডাক্ট। সমস্ত দ্রব্য যখন মানুষের কাছে ফিলআপ থাকে, তারপরে গিয়ে মানুষ জুয়েলারির চিন্তা করে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলে আপনারা কী করবেন?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : আমরা যেটুকু পত্র-পত্রিকায় পড়ি। বিদেশি যতগুলো নিউজ দেখি এতে মনে হয় না সমস্যা হবে। তিনটা জিনিস প্রথম দরকার এদেশের মানুষের জন্যে। নিজে সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। লকডাউন স্থায়ী সমাধান নয়। টিকা স্থায়ী সমাধান। যত বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারবো ততই ভালো। ভ্যাকসিনের জন্যে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এখনো সরকারের কাছে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পড়ে রয়েছে সেই পরিমাণ কিন্তু প্রেসার হাসপাতালে নাই। পৃথিবীর বহু দেশে রেস্টুরেন্টে খাবার দেয়া হচ্ছে না যদি যে ভ্যাকসিনের কাগজ দেখাতে না পারে। জার্মান, চীন, এয়ারলেন্সসহ একেক রকম পলিসি ব্যবহার হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, সরকারকে এদেশের সিম ব্লক করে দিতে হবে। যদি কেউ ভ্যাকসিন না নেয় তাইলে সিম ইজ ব্লকড।

অনেকের মতে করোনা বিনিয়োগের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : করোনাকালীন সময়ে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করছে। হেলথ সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে। আগামী প্রজন্ম বলবে আমরা তো ১৯২০ পাইনি ২০২০ পেয়েছি। হেলথ সেক্টরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে অবকাঠামো তৈরি হবে। ওই অবকাঠামোর পাশাপাশি একটা অবকাঠামো তৈরি করতে হলে তো যেমন ধরেন সরকার কতগুলো মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এখন ধরেন অক্সিজেন তৈরির প্রজেক্ট আসবে, আইসিইউ তৈরির প্রজেক্ট আসবে, মেডিকেল তৈরির ইকুইপমেন্টস যেগুলোতে আমরা পিছিয়ে ছিলাম সেগুলো আসবে। ইনভেস্টমেন্ট হয়তো এভাবে হবে। আর আমাদের জিডিপিতে যে গ্রোথ আছে এই গ্রোথকে অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের জীবন জীবিকা দুটুর সাথেই যুদ্ধ করে যেতে হবে। তাহলে আমরা জিডিপির গ্রোথটাকে ধরে রাখতে পারবো।

সামনে বিনিয়োগের পরিস্থিতি কেমন দেখতে পাচ্ছেন?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : এটা তো সময় বলে দেবে। কোভিডে কত মানুষ মারা যাবে তা আপনি বলতে পারবেন না আমি বলতে পারবো? আমরা অপেক্ষা করছি সামনে কি হয় দেখার জন্য। আমরা কি করতে পারি, বিশ্ব কি করতে পারে এটা দেখার জন্য।

বলা হয়, করোনার কারণে বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে? বাস্তব চিত্র কী?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : পত্রিকায় দেখলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সরকার প্রধান ও বিভিন্ন রাজ্যের প্রধানদের আম পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমেই বুঝা যায় সম্পর্কটা কেমন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকেও আম পাঠিয়েছেন…

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : এটা বোধহয় পলিটিকাল নেতারা তারা বলতে পারবেন, যারা কূটনীতির সাথে জড়িত। প্রকৃত পক্ষে পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কি না মোমেন ভাই (একেএম আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ভালো বলতে পারবেন। আমরা ব্যবসা করি। ব্যবসায়ীক মানুষ। ব্যবসার ব্যাপারে হয়তো আপনাকে কোনো কিছু মন্তব্য করতে পারবো।

করোনাকালীন বাজেট নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। আপনার দৃষ্টিতে কেমন হলো বাজেট?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : বাজেট চমৎকার। বাজেটে দেশীয় শিল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তখনই দেশ উন্নত হয় যেখানে দেশীয় শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে সরকার। যেমন প্রধানমন্ত্রী এক সময় স্বপ্নে দেখেছিলেন ১০ কোটি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। অনুরূপভাবে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, এদেশের প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে একটা টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন হবে। আমার মনে হয় এই ইন্ডাস্ট্রিকে সাবসিডি দেয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জুয়েলারিতে ভ্যাট কমানোসহ কিছু দাবি ছিলো সেগুলো হয়নি। সরকার চিন্তাভাবনা করছে হয়তো ভবিষ্যতে কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে পারে।

আগামী দিনে কি কি চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা : আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ তো অনেক বড়। সবচেয়ে বড় হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংককিং সেক্টরকে রিসাবলিং করা। আগামী দিন সারা বিশ্বের জন্য চ্যালেঞ্জ। দুদিন আগে ইসকন মন্দিরে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার একটা কথা খুব ভালো লেগেছিল, সেটা হচ্ছে— বেঁচে থাকলে সেটা তোমার আগামীকাল, আর যদি তুমি চলে যাও সেটা তোমার পরকাল। আর আমরা নিজেরা কিন্তু বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছি। চ্যালেঞ্জ আসবে, সমাধান করতে হবে। ভবিষ্যতের বিষয়ে এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করা মনে হয় ঠিক হবে না। -আমারসংবাদ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন