জয়িতা চট্টোপাধ্যায়-এর একগুচ্ছ কবিতা
খিদে
পালিয়ে পালিয়ে বেঁচে আছি মাথা নিচু করে
খিদের দেশ জন্মায় শরীরে
হীনমন্যতা ঘিরে ধরে
কবিতারা মরে যায়
মরে যায় কল্পনা
চোখে আঙুল দিয়ে খুঁজি শূন্যতা
নগ্ন শ্রম আল্পনা
মিটে গেছে খিদে কবে
ঘুম বিক্রি হয়ে যায়
স্বপ্ন জুড়ে হার জিরজিরে শিশু
ভাত জোটেনি অনাহারে হায়
এভাবেই কবিতায় যেন
খিদের দেশ লিখে যেতে পারি
সামনে একথালা ভাত, আরষ্ঠ গলা
কলম তবু চেনে না দাঁড়ি।।
আমার আত্মা ভেঙে পড়ে আয়নার কাঁচে
কত অবুঝ আনন্দ, মাটির শরীরে আছে
যত্ন করেছি রোজ, করেছি নিজ মনে সীমান্ত পার
আমার আয়নার ও কান্না পায়
একবার তোমায় পেতে চোখ মুছে নেয়
নিঃশেষে ঝাঁপায় আবার।।
একেবারে না জানিয়ে তুমি চলে গেলে
তোমার যাবার বেলায় আমিও পড়েছিলাম ঘুমিয়ে
আমার সাথে সযত্নে শুয়ে ছিল গোলাপ
জানি ফেরার সময় তাকাও নি ফিরে
তাকাও নি একবার ও নিশ্চয়ই।।
অভিশাপ
আমি এখানে বেঁচে নেই বহুকাল
সন্ঞ্জীবন মন্ত্রচলে রক্তের স্রোতে
আজ চাই কুড়ে কুড়ে খাক তোমার নিশ্চিন্ত ঘুম
খেয়ে নিক একটু একটু করে সাধ্য সাধনা।।
গ্রাম
আমার শরীর পাহাড় ঘেরা গ্রাম
রঙিন দিন চাপা পড়ে অতীতের নীচে
তোর ফুলে ফুলে আমার ফাল্গুন জ্বলে ওঠে
তোর পুরনো মানভূমে আমার মহুয়ার উদ্দাম নাচ
চাঁদনি রাতগুলো মিলে মিশে যায়
অশরীরী হাওয়া ভেসে আসে, ভেসে আসে গান।।
আমার দুঃখকে রেখেছি ঝুপ অন্ধকারে
তোমার শোকের নিভৃতিতে আমায় রাখো
জানি কবেকার নিভে গেছে আলো
তবু আজও প্রসিদ্ধ হয়ে আছে
আমাদের দেখা হয় জানলার কাছে
অতীত থেকে সে মাঝে মাঝে আসে
গাছের ছায়ায় বসে পাশে
শরীর জুড়ে আজ আর নেই কোনো শীত
দেহের কাছেই দেহ একলা থাকে দেহের অতীত।।