৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস
প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে।। ৪ ডিসেম্বর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এইদিনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে চতুর্মুখি আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানী খানসেনাদের হাতে অবরুদ্ধ ফুলবাড়ীকে মুক্ত করেন। পরে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর উপস্থিতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলো চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ফুলবাড়ীর মানুষের কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন।
সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার নিরীহ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি খানসেনাদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের সংবাদে ২৬ মার্চ ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ফুলবাড়ী। স্বাধীনতাকামী হাজারো মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেলস্টেশন ঘুরে কাঁটাবাড়ী বিহারিপট্টি হয়ে বাজার এলাকায় আসার পথে মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হলে কয়েকজন মিছিলকারি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন বাঙালি ও অবাঙালির (বিহারি) মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ মুক্তিকামী মানুষ ওই এলাকার অবাঙালি চিকিৎসক শওকত আলীর বাড়িতে আগুন দেয়। এতে ডা. শওকত আলীসহ স্বপরিবারের অন্য সদস্যরা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। ২ এপ্রিল পাকিস্তানি খানসেনারা ফুলবাড়ী দখলে নিয়ে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ থানার সমন্বয়ে ফুলবাড়ীতে তাদের হেড কোয়ার্টার গড়ে তোলে। একই সাথে স্থানীয় পাকিস্তান পন্থি ব্যক্তিদের নিয়ে রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামস বাহিনী গঠন করে। এইসব রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামস বাহিনীর সহযোগিতায় শুরু হয় বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ হত্যাযজ্ঞ।
এদিকে পাকিস্তানী খানসেনা ও তাদের দোসরদের নির্যাতন থেকে রক্ষাসহ দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে মুক্তিকামী যুবকরা দলে দলে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। দীর্ঘ সময় ধরে ফুলবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় খন্ড খন্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে আজকের এইদিনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী ফুলবাড়ীর রাণীনগর, রুদ্রানী, আমড়া, জলপাইতলী, পানিকাটা, বানাহার ও জগন্নাথপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে চতুর্মুখি সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় খানসেনাদের ওপর। আক্রমণে টিকতে না পেরে নিজেদের জীবন বাঁচাতে খানসেনারা ফুলবাড়ী ছোট যমুনা নদীর লোহার ব্রিজটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে ট্রেন ও মেঠোপথে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী অবরুদ্ধ ফুলবাড়ীকে মুক্ত করেন।
দিনটিকে স্মরণ করতে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকতা করলেও এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান