ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

জয়িতা চট্টোপাধ্যায় -এর চারটি কবিতা

জয়িতা চট্টোপাধ্যায় -এর চারটি কবিতা


কবিতার ছায়া:
নীল সমুদ্র আমাকে গোগ্রাসে খেয়ে নিচ্ছে
খেয়ে নিচ্ছে গাছের শিকড় শিরা ধমনী
পাঠকরা খুঁজছে আমার লেখার খাতা
তুমি ও আমাকে একটু একটু করে খাও
আমার ভেতর স্রোত জন্মানোর আগে মৃত ছায়াপথ খেয়ে ফেলছে  আমার হৃৎপিন্ড, জিভের ভেতর জড়িয়ে যাচ্ছে শিকল, কল্পনা ছাড়া আমি কবিতার থেকে ছিন্ন, প্রত্যক্ষ নাম আমার সামনে চলে আসে
চলে আসে বোঝাপড়ায় শেষ না হওয়া মায়া
আমার রক্ত শুষে নিয়ে বাস্তব বাঁচে দিন রাত
আহত বিশ্বের গোঙানির ভেতর দাঁড়ায় এসে আমার কবিতার ছায়া।।


ঘর ২:
চাঁদের কলঙ্কের মতো অসহ্য তোমার উপস্থিতি
মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তে দেখেছি
আমাকে ধরার সত্যিই কেউ নেই
যেমন করে ফুটন্ত গলন্ত পিচ ঢালা হয় রাস্তায়
তেমন করে তোমাকে ঢেলে দিলো অদৃষ্ট আমার ওপর, শুরু হল চলা শুরু হল গতি, আজ ভাবি ঈশ্বর ও হয়তো সে পথে পা বাড়াতে ভয় পান, আর সেই ভয়ের হাত ধরেই গড়ে উঠেছিল তুমি নামের ঘর
আমার চরাচরে নেমে আসছিল কলঙ্কের থেকেও ঘন একটা রাত, যার একদিকে চূড়ান্ত উত্তাপ, অন্যদিকে কালবৈশাখী চাইছে আমার ঘরের ছাদ।।


 

উপন্যাস:
আজ আমাদের মুখে কোনো সংলাপ নেই পাক খেয়ে উঠছে আমাদের ভেতর নাটক
আবর্তিত হয়ে উঠছে গল্প গড়ে উঠছে সমান্তরাল লাইন, আবার কখনো একটা বাহু ছাপিয়ে যাচ্ছে অন্য বাহুকে, কখনও বা হারিয়ে যাচ্ছে একটা বাহু অন্য বাহুর আড়ালে, গোটা জীবন জুড়ে একটা টান টান প্রেমের উপন্যাস, তবু আমরা একটা কথাও বলি না।।


আত্মসমর্পণ:

(বাবাকে উৎসর্গ)


আগুনের ঝাঁপি খুলে তুমি উঠে এলে
ছুঁড়ে ফেলে দিলে বিলাসের পোশাক
দুঃখের সব গোপনীয় ব্যথা তুমি জানো
ক্ষুধিত বিড়ালের নখে ফালাফালা ডালপালা
সমস্ত আর্তনাদ জানি জেগে থাকে ঘুমের ভেতর
তুমি আছো তাই দেখতে পাই সমুদ্রের ঢেউগুলো দরজার কাছে এখন, মেঘের পাখিরা আলতা রং মাখে, শিয়রের কাছে দাঁড়িয়েছ তুমি দেবতার মতন
নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পৃথিবীর খনিগর্ভ থেকে
অতর্কিতে হাসি এনে দিলে জানলার আকাশে,
আকাঙ্ক্ষার ঝাঁপি খুলে দিলে আমার সামনে
তুমি যুদ্ধে যাও রোজ হিম হাওয়া, অন্ধকার, কাঁটাতার, রক্ত হাসি ঠেলে, প্রতিটা ব্যথিত গাছে লাগাও আলোর লন্ঠন, তোমাকে ভরে দিতে চাই বাবা, আত্মসমর্পণের বিজয় উৎসবে।।
সংবাদটি শেয়ার করুন