কমলগঞ্জে চলছে শতবর্ষী মনিপুরী কুম্ভমেলা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিলকপুর গ্রামে উদযাপন করা হচ্ছে শতবর্ষী কুম্ভমেলা। মনিপুরী যুব কল্যাণ সমিতি তিলকপুরের উদ্যোগে ১৬ ফেব্রুয়ারি(বুধবার) থেকে ৩দিন ব্যাপী শতবর্ষ “কুম্ভমেলা” আয়োজন করা হয়েছে। চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি(শুক্রবার) পর্যন্ত।
জানা যায়, প্রায় শতবর্ষ পূর্বে কমলগঞ্জের তিলকপুরে শ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির সংলগ্ন স্থানে প্রথম কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। যার মাধ্যম ছিলো হিন্দু ধর্মের সাধু, সন্ন্যাসী ও ভক্তদের মাঝে আত্মার শুদ্ধি এবং পরম আত্মার অমৃতবাণী ছড়িয়ে দেওয়া। তৎকালিন সময়ে এই উৎসবের ব্যাপ্তী ছিল সাত দিন। ১৯২০ সালে প্রয়াত আনান্তল শর্মা মাধবাচার্য অধিকারী তিলকপুর শ্রী গোপীনাথ মন্দির সংলগ্ন স্থানে প্রতীকী কুম্ভ বানিয়ে বাংলাদেশের মনিপুরী সমাজে প্রথম কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেন। যা পরবর্তী সময়ে হিন্দুদের ধর্মীয় তীর্থ স্থানে রূপ নেয়। ১৯২০-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত একটানা চলার পর বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারনে তা আর উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। হারানো ঐতিহ্যকে পুণঃরূপ দিতে প্রায় ৫৫বছর পরে আবারও আয়োজন করা হয়েছে শতবর্ষ কুম্ভ মেলার।
কুম্ভমেলা হিন্দুদের এক অন্যতম উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে যুগে যুগে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা তীর্থস্নান করেন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে টঘঊঝঈঙ এর স্বীকৃতি লাভ করেছে। কুম্ভ অর্থ কলস (অমৃতের কলস) আর মেলা অর্থ মেল (একত্র)অর্থাৎ অমৃতের কলস হতে অমৃত গ্রহণের জন্য ভক্তবৃন্দের একত্র হওয়ার নামই কুম্ভমেলা। পুরাণ বলেছে, ‘কার্তিকে সহস্র বার ও মাঘ মাসে শতবার গঙ্গাস্নানে এবং বৈশাখ মাসে কোটি নর্মদা স্নানে যে ফললাভ হয়, সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ ও শত রাজসূয় যজ্ঞে যে ফললাভ হয়, লক্ষ পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলে যে ফললাভ হয়, একবার কুম্ভ স্নানেই তা পাওয়া যায়।
পুরাণে বর্ণিত কুম্ভমেলার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানা যায়, দেবরাজ ইন্দ্রের তপস্যায় প্রীত হলেন নারায়ণ। সিন্ধু কন্যা রূপে লক্ষ্মী দেবীকে জন্মগ্রহণ করতে আদেশ দিলেন তিনি। তারপর দেবতাদের নিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে বললেন পিতামহ ব্রহ্মাকে। এ বিশাল কাজ শুধু দেবতাদের পক্ষে করা কিছুতেই সম্ভব নয় বলে সঙ্গে অসুরদেরও নিতে বললেন। মন্থন শেষ হলে দেবী লক্ষ্মী আর ধন্বন্তরি উঠে আসবেন সমুদ্র থেকে। দেবতাদের বৈদ্য ধন্বন্তরি। তিনিই আসবেন অমৃতের কুম্ভ নিয়ে। কথা হল, মন্থনে যা কিছু সম্পদ উঠবে তা সমানভাবে ভাগ করে নেবেন দেবতা ও অসুরেরা। সমুদ্র মন্থন শুরু হল। এবার ধীরে ধীরে দেব-বৈদ্য ধন্বন্তরি উঠে এলেন অমৃত ভরা কুম্ভ নিয়ে। দেবতাদের পরমধন অমৃত কুম্ভের কথা জানতেন ইন্দ্র। ওই কুম্ভ যাতে দেবতাদের হাতছাড়া না হয়, অসুরদের হাতে না পড়ে, তার জন্য দেব-বৈদ্যের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পালাতে বললেন পুত্র জয়ন্তকে। পিতা ইন্দ্রের আদেশ পাওয়া মাত্রই অমৃত ভরা কুম্ভ নিয়ে ছুটতে লাগলেন জয়ন্ত। সমুদ্র মন্থনের একমাত্র সার বস্তুই যে অমৃত, যা পান করলে অমরত্ব লাভ করা যায়। অসুর গুরু শুক্রাচার্য ব্যাপারটা লক্ষ করে অসুরদের আদেশ দিলেন জয়ন্তকে ধরতে। আগে জয়ন্ত ছুটছেন অমৃত কুম্ভ নিয়ে- পিছনে ছুটছে অসুররা। এইভাবে সমানে তিনদিন ছোটার পর একটু বিশ্রামের প্রয়োজন ভেবে জয়ন্ত বিশ্রাম নিতে বসলেন অমৃত কুম্ভটি মাটিতে রেখে। দেখলেন অসুররা এসে পড়েছে। আবার ছুটতে শুরু করলেন ইন্দ্রপুত্র। টানা তিনদিন ছুটে বসলেন বিশ্রাম নিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হলেন অসুররা। আবার কুম্ভ নিয়ে ছুটতে লাগলেন জয়ন্ত। এইভাবে জয়ন্ত তিনদিন পরে পরে অমৃতপূর্ণ কুম্ভ নামিয়ে রেখেছিলেন চার জায়গায় এবং বারোদিন পরে ফিরে এলেন সমুদ্র মন্থন ক্ষেত্রে। কুম্ভ নিয়ে পালানোর সময় জয়ন্ত হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক আর উজ্জয়িনীতে অমৃত কুম্ভ নামিয়ে রেখে বিশ্রাম করেছিলেন। কুম্ভ নামানোর সময় কয়েক ফোঁটা পড়েছিল হরিদ্বার ও প্রয়াগে। একটানা তিনদিন ছোটার পর জয়ন্ত এক একটি জায়গায় উপস্থিত হয়েছিলেন এবং ফিরে এসেছিলেন বারোদিন পরে। সময়ের হিসাবে দেবতাদের কাছে মাত্র একদিন হলেও মানুষের কাছে তা এক বছর। সে জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর চার জায়গায় কুম্ভমেলা হয়, গড়ে পূর্ণ কুম্ভ হয় বারো বছর পরে। হরিদ্বার আর প্রয়াগে পূর্ণ অমৃত কুম্ভ হয় এই দু-জায়গায় কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল বলে।
আয়োজকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রায় অর্ধশত বছর পরে এই কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়েছে। শতবর্ষ পূর্বে এখানে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হতো। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক ১৯৬৫সালের দিকে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ মনিপুরী যুবকল্যাণ সমিতি, তিলকপুর শাখার উদ্যোগে প্রায় আবারো সেই একই স্থানে শতবর্ষ কুম্ভমেলার পুনঃ উদযাপন করা হচ্ছে। তিন দিন ব্যাপী এই কুম্ভমেলায় ধর্মীয় সভা, লীলা কীর্তন, মনিপুরীদের ঐতিহ্য পালা কীর্তন ও হলি প্রতিযোগিতা, কুম্ভহোম যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কুম্ভমেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানের সাধু সন্নাসীসহ ভারত থেকে সাধুরা আসছেন এখানে।
শ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির কমিটির সভাপতি জিতেন্দ্র শর্মা বলেন, ১৯২০ সালে তার দাদু প্রয়াত আনান্তল শর্মা মাধবাচার্য অধিকারী তিলকপুর শ্রী গোপীনাথ মন্দির সংলগ্ন স্থানে প্রতীকী কুম্ভ বানিয়ে বাংলাদেশের মনিপুরী সমাজে প্রথম কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেন। এর পর থেকেই ব্যাপক পরিসরে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারনে ১৯৬৫ সালের পর থেকে এই মেলার বন্ধ হয়ে যায়। সেই হারানো ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রায় ৫৫বছর পর এবছর আবারো শতবর্ষ কুম্ভমেলার আয়োজন করেছে মনিপুরী যুব কল্যাণ সমিতি তিলকপুর শাখা। এই বছর তিন দিন ব্যাপী অনুষ্টানের আয়োজন করা হলেও আগামীতে এটি আরো বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করা হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাংলাদেশ মণিপুরি যুবকল্যাণ সমিতি, তিলকপুর শাখার সভাপতি সঞ্জু কুমার সিংহ জানান, তিলকপুর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্য দিয়ে ৩দিন ব্যাপী “শতবর্ষ কুম্ভমেলা” উদযাপন করা হচ্ছে।
কমলগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ ও খেলাধূলা সামগ্রী বিতরণ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ ও খেলাধূলা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কমলগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে পৌর মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এসব সামগ্রী বিতরণ করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা স্কাউটস সম্পাদক মোসাহীদ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, কমলগঞ্জ সরকারি গণ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান মিয়া, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পৌর কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান