বাইডেনের দূতকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ঐক্যপরিষদ অস্তিত্ব সংকটে সংখ্যালঘুরা
সফরের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত রাশাদ হোসাইন। চার দিনের সফরে রোববার তিনি ঢাকায় এসেছেন। ইন-পারসন বা সশরীরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ঐক্যপরিষদের নেতারা এখানকার ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে বাইডেন প্রশাসনের ওই প্রতিনিধিকে ব্রিফ করেন। রোববার পড়ন্ত বিকালের ওই বৈঠক বিষয়ে ঐক্যপরিষদ আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। এতে বলা হয়, পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে মিস্টার হোসাইন বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে ঐক্যপরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বাইডেনের দূতকে জানান, ক্রমবর্ধমান সামপ্রদায়িকতা ও মৌলবাদী তৎপরতা বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে অস্তিত্বের সংকটে নিক্ষেপ করেছে। ভবিষ্যতের নির্বাচনী পরিস্থিতি তাদের শঙ্কাগ্রস্ত করে তুলছে। বিজ্ঞপ্তি মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা (ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম-আইআরএফ) বিষয়ক দূত (অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ) রাশাদ হোসাইন বাংলাদেশের নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. পিটার হাসকে নিয়ে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর পল্টন টাওয়ারস্থ ঐক্যপরিষদ কার্যালয়ে পৌঁছান।
সেখানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ নেতৃবৃন্দ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ঐক্যপরিষদ কার্যালয়েই মিস্টার হোসাইন নামাজ আদায় করেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে রাশাদ হোসাইন বলেন, আমি ও আমার পরিবার ভারতের বিহার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছি এবং নাগরিকত্ব পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টিকে সকল নাগরিকের জন্য সমান রেখেছে। ধর্ম চর্চায় সবার সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করেছে। বিধায় আমি আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হয়ে এ জায়গায় আসতে পেরেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার সমুন্নত রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমাজের মনোজাগতিক বিষয়ের পরিবর্তন কেবল সরকারের একার নয়। ধর্মীয় সম্প্রদায়, জাতি-গোষ্ঠী এবং সুশীল সমাজকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সারা বিশ্বে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশে দেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবহিত এবং যথাসম্ভব পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এ সময় চীনে মুসলমান নিগ্রহ ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের বিষয়গুলোও উল্লেখ করেন তিনি। এই অবস্থার অবসানে বিশ্বে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বিকাশে মার্কিন প্রচেষ্টা চলমান থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ দূত। অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভবিষ্যতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ঐক্যপরিষদের অন্যতম নেতা ঊষাতন তালুকদার এমপি, সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, দীপেন চ্যাটার্জি, অশোক বড়ুয়া, মনীন্দ্র কুমার নাথ, নির্মল চ্যাটার্জি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত রাশাদ হোসাইন তার চার দিনের বাংলাদেশ সফরে সরকারের মন্ত্রী-সচিব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবেন। আগামীকাল এবং পরশু তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন, হোস্ট কমিউনিটি এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ২০শে এপ্রিল ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আখতার হোসেনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। বিশ্বের দেশে দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কাজে উৎসাহ প্রদান এবং তদারকিতে জোর রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং এ সংক্রান্ত বিশেষ দূত তদারকির কাজটি করেন। চলতি বছরের সূচনাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক দূত হিসেবে রাশাদ হোসাইনের নিয়োগ অনুমোদন করে সিনেট। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুসলিম যিনি গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে আসীন হন। তাছাড়া তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রথম কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান। ওয়াশিংটন সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত (অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ) হওয়ার পর ভারতীয় উপমহাদেশে এটিই রাশাদের প্রথম সফর। আর তিনি প্রথম এলেন মডারেট মুসলিম কান্ট্রি বাংলাদেশে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য মতে, বৈশ্বিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে মার্কিন নীতি প্রণয়নে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন রাশাদ। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতার অপব্যবহার, নিপীড়ন এবং বৈষম্য নিরীক্ষণে মার্কিন প্রশাসনে বিদ্যমান মেকানিজমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। উপরোল্লিখিত উদ্বেগগুলো নিরসনে গৃহীত কর্মসূচির তত্ত্বাবধান এবং বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা ধর্ম-বিশ্বাসের লোকজনের ন্যায়সঙ্গত এবং অর্থপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিতে কাজ করেন তিনি। পাশাপাশি নাগরিক সমাজে বিস্তৃত পরিসরে বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল অংশীদারিত্ব গড়ার প্রয়াস চালান। বহুগুণের অধিকারী মিস্টার হোসাইন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত হওয়ার আগে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অংশীদারিত্ব এবং গ্লোবাল এনগেজমেন্ট ডিরেক্টরেটের পরিচালক ছিলেন। সেখানে দীর্ঘ সময় তিনি সিনিয়র কাউন্সেল হিসেবেও কাজ করেছেন। তার আগে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)তে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কৌশলগত সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত এবং হোয়াইট হাউসের ডেপুটি এসোসিয়েট কাউন্সেলর হিসেবেও হোসাইন দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনের ওপর নিয়মিত পড়াশোনা শেষ করা হোসাইন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং দর্শনেও স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে তার। অ্যাটর্নি, প্রফেসর এবং ডিপ্লোমেট- ত্রিমাত্রিক ক্যারিয়ারের অধিকারী রাশাদের বাস্কেটবলের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। যুবকদের ক্রীড়া প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি কিছুদিন কাজ করেছেন।
-সূত্রঃ মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান