প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

আইএস বধূ শামীমাকে পাচার করেন কানাডার গোয়েন্দা গুপ্তচর

আইএস বধূ শামীমাকে পাচার করেন কানাডার গোয়েন্দা গুপ্তচর

আইসিস বধূ হিসেবে পরিচিত শামীমা বেগম ও তার দুই বান্ধবীকে সিরিয়ায় পাচার করেছিলেন কানাডার এক স্পাই বা গুপ্তচর। তিনি ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। একদিকে তিনি কানাডাকে এসব বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য দিতেন। অন্যদিকে শামীমাদের মতো অনেক মানুষকে সিরিয়ায় আইএসের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছেন। তিনি হলেন কানাডিয়ান গুপ্তচর মোহাম্মদ আল রশিদ। বোম্বশেলের মতো এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে নতুন এক বইতে। বইটির নাম ‘দ্য সিক্রেট হিস্টরি অব দ্য ফাইভ আইস’। সানডে টাইমসের সাবেক নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিক রিচার্ড কারবাজ লিখেছেন এ বই। তা প্রকাশ হওয়ার কথা আজ বুধবার।
অনলাইন মেট্রো এ খবর দিয়ে বলেছে, ওই সময় বৃটিশ মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলা হয়েছিল যে, ওই তিন বালিকা- তখন তারা তিনজনই টিনেজার, তাদেরকে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের কাছে পাচার করেছে। কিন্তু কানাডা যতদিন জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাইভেটভাবে স্বীকার না করেছে, ততদিন তা গোপন রাখা হয়।

উপরন্তু বৃটেনকে তারা অনুরোধ করে যাতে বিষয়টি প্রকাশ করা না হয়।

২০১৫ সালে লন্ডন থেকে পালিয়ে গিয়ে আইএসে যোগ দেন শামীমা বেগম। তখন তার বয়স ১৫ বছর। সঙ্গে যান তার দুই বান্ধবী আমিরা আব্বাস ও খাদিজা সুলতানা। তাদের বয়স তখন যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ বছর। এখন শামীমার বয়স ২৩ বছর। কয়েক বছর ধরে তার অধিকারের বিষয়টি আলোচনায় ফিরেছে। তিনি বৃটেনে ফিরে নতুন জীবন শুরু করতে চান। কিন্তু তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে বৃটিশ সরকার। তাকে বলা হয়েছে, আর কখনো বৃটেনে ফিরতে পারবেন না।

এখন জানা যাচ্ছে, তারা লন্ডন থেকে পালিয়ে যখন তুরস্কে পৌঁছেন সেখানে ইস্তাম্বুল ট্রেন স্টেশনে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে মোহাম্মদ আল রশিদ নামে একজনের। তিনিই তাদেরকে আইএসের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন। ওদিকে বৃটেনের মেট্রোপলিশন পুলিশ নিখোঁজ এসব বালিকার জন্য আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু কানাডা থেকে যায় নীরব, যদিও তারা জানতো এ বালিকাদের কি ঘটেছে। অবশেষে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে সন্ধান মেলে শামীমা বেগমের। তখন তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এসব কাহিনীই ওই বইয়ে লিখেছেন সাংবাদিক রিচার্ড কারবাজ।

ওদিকে সিনিয়র এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে আরও তথ্য। ওই কর্মকর্তা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, মোহাম্মদ আল রশিদ যখন একদিকে লোকজনকে আইএসের কাছে পাচার করছিলেন, তখন তিনি কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এসব বিষয়ে তথ্য দিচ্ছিলেন। ‘আই অ্যাম নট এ মনস্টার’ শীর্ষক বিবিসির এক পডকাস্টে শামীমা বেগম বলেছেন- তিনি (রশিদ) তুরস্ক থেকে সিরিয়া পর্যন্ত পুরো সফরের আয়োজন করেন। পাচারকারীদের সহায়তা ছাড়া কেউ সিরিয়া যেতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি না। তিনি প্রচুর মানুষকে সিরিয়া যেতে সহায়তা করেছেন। তিনি আমাদেরকে যা যা বলেছেন, আমরা তার সবটাই করেছি। কারণ, তিনি সবকিছু জানেন। আর আমরা কিছুই জানিনা।

যদি এটা নিশ্চিত হয় যে, পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষে কাজ করা একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এসব ভ্রমণে তাদেরকে সহায়তা করেছেন, তাহলে নতুন এই তথ্য শামীমা বেগমের নাগকিত্বের বিতর্ককে আবার উস্কে দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে শামীমা বলেছিলেন, নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। কিন্তু তারপরই তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, তাকে পটানো হয়েছিল। তিনি সন্ত্রাসী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সিরিয়ায় আইএসের কাছে পৌঁছার ১০ দিন পরেই ডাচ নাগরিক ইয়াগো রেদিজককে বিয়ে করেন। ইয়াগো রেদিজক ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছিলেন।

এর আগে দ্য টাইমসকে শামীমা বলেছিলেন, স্বামী ও তার সন্তানদের নিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সিরিয়ার রাকা ত্যাগ করেন। ওই দুই সন্তানের মধ্যে একটি ছিল এক বছর বয়সী মেয়ে। অন্যটি তিন মাস বয়সী ছেলে। তারা দু’জনেই মারা গেছে। এরপর ২০১৯ সালের মার্চে আল রোজ ক্যাম্পে জন্ম হওয়ার পর পরই মারা যায় তার তৃতীয় সন্তান।

এ বিষয়ে কানাডা ও বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বৃটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এটা আমাদের দীর্ঘদিনের নীতি যে, অপারেশনাল ইন্টেলিজেন্স অথবা নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।
এখন পর্যন্ত শামীমার সন্ধান মিলেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন তার বান্ধবী খাদিজা সুলতানা। আর নিখোঁজ রয়েছেন আমিরা আব্বাস।

-সূত্র: মানবজমিন

 

 

এসএস/সিএ

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন