৯৫তম অস্কার: কে জিতবে, কারা ফেভারিট
চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি অস্কার। এবারের কারা জিতবেন, সেই ফয়সালা হতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। রাত পোহালেই জানা যাবে সব। হলিউডের তাৎপর্যপূর্ণ এই পুরস্কার নিয়ে গোটা বিশ্বে এখন কৌতূহল তুঙ্গে। হলিউডের প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা-পরিবেশনা সংস্থা এবং পুরস্কারের কাঙাল ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ইতোমধ্যে অস্কারের প্রচারণায় কাড়ি কাড়ি ডলার ব্যয় করেছে।
হলিউডের ডলবি থিয়েটারে বাংলাদেশ সময় ১৩ মার্চ সকাল ৮টায় শুরু হবে অস্কার অনুষ্ঠান। কোন বিভাগে কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি চলুন ভবিষ্যদ্বাণী করা যাক। যদিও উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের কারণে এবারের আসরের বিজয়ী নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন!
সেরা চলচ্চিত্র
অস্কারের স্পটলাইটে থাকা ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ পরিষ্কার এগিয়ে আছে। বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পুরস্কার জিতেছে ছবিটি। এরমধ্যে রয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড এবং প্রডিউচার্স গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডস। অসাধারণ পুরস্কার মৌসুম কাটানোর পর এবার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে মাল্টিভার্স অ্যাডভেঞ্চার ধাঁচের কুংফু কমেডি ছবিটি। এর বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পী এশিয়ান।
তবে সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে চমকে দিতে পারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। বাফটায় সেরা ছবি হয়েছে এটি। বাজিকরদের দ্বিতীয় ফেভারিট জার্মান ভাষার এই ছবি। ফেভারিটের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে গোল্ডেন গ্লোব জয়ী ‘দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন’। এছাড়া একই বিভাগে আছে ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’, ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’, ‘এলভিস’, ‘দ্য ফেবলম্যানস’, ‘টার’, ‘ট্রায়াঙ্গেল অব স্যাডনেস’ এবং ‘উইমেন টকিং’।
সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচনে অ্যাকাডেমি সদস্যদের ব্যালটে মনোনীত ১০টি ছবিকে র্যাংকিং দিতে বলা হয়। তাদের মধ্যে যে ছবি সবচেয়ে সদস্যের ব্যালটে ১ নম্বরে থাকে সেটাই পুরস্কার পেয়ে থাকে। ফলে কোনও চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা বেশি হলে কিংবা সমর্থন বেশি পেলে বিপুলসংখ্যক ভোটারের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দর্শকনন্দিত ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’ সেরা চলচ্চিত্র বিভাগের দৌড়ে ডার্ক হর্স হতে পারে। কারণ এটি বেশিরভাগ ভোটারের ব্যালটে দুই কিংবা তিন নম্বরে থাকলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার ভোট দিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার অভিনয়শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক ও পেশাদার চলচ্চিত্রকর্মী।
সেরা অভিনেতা
অভিনয়শিল্পী চারটি বিভাগের তিনটিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। তাদের কেউই নিরঙ্কুশ ফেভারিট নন। সবারই জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আইরিশ তারকা কলিন ফ্যারেল (দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন) গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডস (মিউজিক্যাল অথবা কমেডি) ও ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে সম্ভাবনা জাগিয়েছেন। তবে গোল্ডেন গ্লোব (ড্রামা) ও বাফটা জিতে দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে অস্টিন বাটলার (এলভিস)। স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও ক্রিটিকস চয়েস মুভি অ্যাওয়ার্ডস জিতে নেওয়া ব্রেন্ডন ফ্রেজার (দ্য হোয়েল) পিছিয়ে নেই। তিন জনের মধ্যে যে কেউ সেরা অভিনেতার সম্মান পেতে পারেন। ফলে বিল নাই (লিভিং) এবং পল মেসকালকে (আফটারসান) খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে!
সেরা অভিনেত্রী
এবারের আসরে সেরা অভিনেত্রী বিভাগেও রয়েছে প্রতিযোগিতার উত্তাপ। ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবির জন্য মালয়েশিয়ান এবং চীনা বংশোদ্ভূত প্রথম নারী হিসেবে অস্কারের সেরা অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন মিশেল ইয়ো। গোল্ডেন গ্লোব (মিউজিক্যাল অথবা কমেডি), ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডস জিতে বাজিকরদের কাছে তিনিই প্রথম ফেভারিট। একজন ক্লান্ত লন্ড্রি মালিক ইভলিন ওয়াং চরিত্রে দেখা গেছে তাকে, যিনি কেবল নিজের কর জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে আছেন কেট ব্ল্যানচেট। ‘টার’ ছবির জন্য ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বাফটা, গোল্ডেন গ্লোব (ড্রামা) ও ক্রিটিকস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন তিনি। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার এই দুই তারকার মধ্যে একজনের হাতেই উঠতে যাচ্ছে। একই বিভাগে মনোনীত আন্ড্রেয়া রাইজবরা (টু লেসলি), মিশেল উইলিয়ামস (দ্য ফেবলম্যানস) এবং আনা ডে আরমাস (ব্লন্ড) সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে হয় না।
৯৫তম অস্কারের সেরা পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগ নিয়েই কেবল জোর গলায় ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। আপসেট না ঘটলে ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবির জন্য এই সম্মান পেতে যাচ্ছেন ভিয়েতনামের কে হুই কোয়ান। গোল্ডেন গ্লোব, ক্রিটিকস চয়েস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট এবং স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডস জিতে অনেক এগিয়ে তিনি। একই বিভাগে মনোনীত ব্রেন্ডন গ্লিসন (দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন), ব্যারি কিওগ্যান (দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন), জাড হার্শ (দ্য ফেবলম্যানস) এবং ব্রায়ান টাইরি হেনরির (কজওয়ে) সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আরেকটি বিভাগ হলো সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী। এতে মনোনীতদের মধ্যে যে কেউ জিততে পারেন। যদিও অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেট (ব্ল্যাক প্যান্থার: ওয়াকান্ডা ফরেভার), কেরি কনডন (দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন) ও জেমি লি কার্টিসের (এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স) মধ্যেই মূল লড়াই হচ্ছে। অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেট জিতেছেন গোল্ডেন গ্লোব ও ক্রিটিকস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস। অন্যদিকে জেমি লি কার্টিস পেয়েছেন স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড। কেরি কনডন বাফটা জিতে সম্ভাবনা কিছুটা জাগিয়ে রেখেছেন। এছাড়া হং চাও (দ্য হোয়েল) এবং স্টেফানি সু (এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স) জিতলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সেরা পরিচালক
‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবির পরিচালক জুটি ড্যানিয়েল কোয়ান ও ড্যানিয়েল শাইনার্ট এই বিভাগে ফেভারিট। তারা ইতোমধ্যে ক্রিটিকস চয়েস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট এবং ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন। তাদের হাতেই উঠতে যাচ্ছে এই সম্মান। তবে মার্টিন ম্যাকডোনা (দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন) বাফটা জিতে এবং স্টিভেন স্পিলবার্গ (দ্য ফেবলম্যানস) গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডস ঘরে তুলে কিছুটা সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছেন। সেরা পরিচালক বিভাগে আরও মনোনীত হয়েছেন টড ফিল্ড (টার) এবং কান উৎসবে স্বর্ণপামজয়ী রুবেন অস্টলান্ড (ট্রায়াঙ্গেল অব স্যাডনেস)
সেরা মৌলিক গান
এসএস রাজামৌলি পরিচালিত ‘আরআরআর’ ছবির ‘নাটু নাটু’ সেরা মৌলিক গান বিভাগে পুরস্কার জিতে ভারতের হয়ে ইতিহাস গড়তে পারে। গোল্ডেন গ্লোব, ক্রিটিকস চয়েস এবং হলিউড ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডস জিতে অনেক এগিয়ে আছে গানটি। একই বিভাগে মনোনীত লেডি গাগার ‘হোল্ড মাই হ্যান্ড’ (টপ গান: ম্যাভেরিক), রিয়ানার ‘লিফট মি আপ’ (ব্ল্যাক প্যান্থার: ওয়াকান্ডা ফরেভার), ডায়েন ওয়ারেনের ‘অ্যাপ্লজ’ (টেল ইট লাইক অ্যা ওম্যান) এবং ডেভিড বায়ার্ন ও সান লুক্সের ‘দিস ইজ অ্যা লাইফ’ (এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স) মনে হয় না সুবিধা করতে পারবে।
সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র
নেটফ্লিক্সের জন্য সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বিভাগের পুরস্কারটা অবধারিত বলা চলে। “গিয়ের্মো দেল তোরো’স পিনোকিও” এটি জিততে যাচ্ছে। বাফটা, অ্যানি অ্যাওয়ার্ডস, ক্রিটিকস চয়েস, প্রডিউচার্স গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডস জিতেছে এই ছবি। একই বিভাগে আরও মনোনীত হয়েছে ‘মারসেল দ্য শেল উইথ শুজ অন’ (এ২৪), ‘পুস ইন বুটস: দ্য লাস্ট উইশ’ (ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন), ‘দ্য সি বিস্ট’ (নেটফ্লিক্স) এবং ‘টার্নিং রেড’ (ডিজনি)।
সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র
জার্মানির ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে নিরঙ্কুশ ফেভারিট। বাফটায় সেরা চলচ্চিত্র এবং সেরা অ-ইংরেজি ছবির পুরস্কার জিতেছে এটি। একই বিভাগে মনোনীত অন্য ছবিগুলো হলো ‘আর্জেন্টিনা ১৯৮৫’ (আর্জেন্টিনা), ‘ক্লোজ’ (বেলজিয়াম), ‘ইও’ (পোল্যান্ড) এবং ‘দ্য কোয়ায়েট গার্ল’ (আয়ারল্যান্ড)।
এগিয়ে থাকা প্রযোজনা-পরিবেশনা সংস্থা
সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনীত ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ও ‘দ্য হোয়েল’, সেরা অ্যানিমেটেড ছবির বিভাগে মনোনীত ‘মারসেল দ্য শেল উইথ শুজ অন’ এবং সেরা আন্তর্জাতিক কাহিনিচিত্র বিভাগে মনোনীত ‘ক্লোজ’সহ মোট ছয়টি ছবির মাধ্যমে ১৮টি মনোনয়ন এসেছে এ২৪-এর ঘরে। ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির নামের পাশে আছে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন।
-জনি হক, বাংলা ট্রিবিউন