কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগানে ৩০ জন দলিত নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে ‘দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ হোক পেশাগত বৈষম্য নিরসনের হাতিয়ার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা “নাগরিক উদ্যোগ”র পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০ জন দলিত নারীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় শমশেরনগর চা বাগানে চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এসব সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও নাগরিক উদ্যোগের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোহন রবিদাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমেদ, শমশেরনগর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো: কাউসারুজ্জামান, ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী, চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি শ্রীকান্তÍ কানু গোপাল, মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বিন, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, শমশেরনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মাদ্রাজী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উত্তম যাদব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উন্নয়ন পরিষদের কর্মকর্তা, চা বাগানের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশিক্ষনার্থীরা। অনুষ্ঠানে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। তার আগে কমলগঞ্জ উপজেলা চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ থেকে ৫০দিন দলিত নারীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন প্রশিক্ষক অসীম পাল।
উল্লেখ্য, কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে আত্মকর্মসংস্থানের পথে পা রেখেছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিবন্ধী চা শ্রমিক সন্তান উত্তম যাদবের নিজ উদ্যোগে গত দুই বছর ধরে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এতে প্রতিবন্ধী নারীরা আত্মকর্মসংস্থানে নিজেরা পথ খুঁজছেন। ইতোমধ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম ধাপে চা বাগানের ৩০ জন নারী নিজ নিজ বাসায় কাজ করছেন।
শমশেরনগর চা জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ সুত্রে জানা যায়, চা বাগানে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় ২৪টি চা বাগানে ৫১৩ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তারা অসহায় অবস্থায় জীবন ধারণ করছেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে ও আত্মপ্রতিষ্ঠায় সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জন নারীকে নিয়ে ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
সংগঠনটির সভাপতি উত্তম যাদব বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনেকেই বোঝা মনে করে। আমি নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পর থেকে চা বাগানের প্রতিবন্ধীরা যাতে ঘরে বসে আয় করতে পারেন সেজন্য সেলাই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। যাতে প্রতিবন্ধী প্রত্যেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে। প্রতিষ্ঠানে ১০টি সেলাই মেশিনে প্রতিদিন ১৫ জন করে দুই শিফটে ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শমশের নগর চা বাগানের শ্রমিক সন্তান অসীম পাল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। পরিষদ থেকে তাকে প্রায় ৬/৭ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী প্রদান করা হয়। তিনি আরো জানান, অর্থাভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে আরও নতুন সেলাই মেশিন কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। স্থানীয় জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবিদাসের প্রচেষ্টায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ কর্তৃক ৩০টি সেলাই মেশিন প্রদান করায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানে আমরা সচেষ্ট আছি। সেলাই প্রশিক্ষণ নেওয়া চা শ্রমিক প্রতিবন্ধী নারীরা সংগ্রামী ও ত্যাগী। তাদের সাফল্য সমাজের অন্য নারীদের পথ দেখাবে। সবাইকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীরা বোঝা নয়, তারা একদিন সম্পদে পরিণত হবে।
এস.এস/সিএ
সর্বশেষ সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান