দেশের সংবাদ ফিচার্ড

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না দিলে কানাডার সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না দিলে কানাডার সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে ফেরত না দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেছেন, বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর দুজন খুনির অবস্থান আমরা জানি। তাদের একজন এ এম রাশেদ চৌধুরী, সে আছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যজন এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, সে আছে কানাডায়। নূরকে আনার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কানাডা সরকার তাকে ফেরত দিতে অপরাগতা জানাচ্ছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, কানাডা সরকার বলছে, তাদের আইন আছে, যদি কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দেওয়া হয় বা এমন কোনো মামলা আছে, যেটার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তখন তারা সেই ব্যক্তিকে ফেরত দিতে চান না। তারপরও আমরা অনবরত এটা নিয়ে তাগিদ দিচ্ছি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি তারা তাকে ফেরত না দেন, তাহলে তাদের (কানাডা) সঙ্গে আমাদের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটাও আমরা তাদের জানিয়ে দেবো।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘১৫ আগস্টের নেপথ্যের কুশীলব’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সম্মানীত অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বইটি লিখেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের যখন আমরা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কথাবার্তা বলেছি, কেউ কিন্তু এ প্রশ্নটা অন্তত তুলতে পারেননি যে, বিচার কার্যক্রম সঠিকভাবে হয়নি। কিংবা বিচারকে প্রভাবিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্যের মাধ্যমে আসলে বাংলার মাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ফলে ১০০ বছর পরেও কেউ এ মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না।

সাধারণ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হোক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমনটিই চাওয়া ছিল জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ইনডেমনিটি বাতিল করা হলো। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দিন থেকে চেয়েছিলেন যেন এ মামলার বিচারকাজটা সাধারণ আদালতে হয়। জনসম্মুখে যেন এ মামলার রায় হয়। বাংলার জনগণ যেন জাতির পিতার খুনিদের সাজা কার্যকর হওয়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে পারে।

তিনি বলেন, বিচারিক আদলতে এ মামলার রায় হলো। এরপর সেটা হাইকোর্টে এলো। তখনো কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারই দায়িত্বে। হাইকোর্টের সাতজন বিচারপতি তখন এ মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করেছিলেন। তারা কেন বিব্রতবোধ করেছিলেন, তা এখনো আমার বুঝে আসে না। আমি একজন আইনজীবী। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। আইনের পরিভাষায় বিব্রত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তাই এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি না।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, তবে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অর্থাৎ দেশের জনগণ এটা মনে করতেই পারেন যে, ওই বিচারপতিরা নিশ্চয়ই এ হত্যাকাণ্ডের (বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা) পক্ষের শক্তি। এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। এখন যে নেপথ্যের কুশীলব নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, সেখানে তো এদেরও আপনি নেপথ্যের কুশীলবের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবেন না। এটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের বিচারে কমিশন করা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, নেপথ্যের কুশীলব কারা, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তো এখন গত হয়েছেন (মারা গেছেন)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা নির্দেশনা আছে। সেটা আমি সংসদে দাঁড়িয়েও বলেছি, নেপথ্যের কুশীলবদের বিচারে একটা কমিশন হবে। কমিশনের প্রারম্ভিক কাজ হলো- আইনটা তৈরি করা। এটা করার চেষ্টা আমরা করছি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে এটা দ্রুত করে ফেলবো।

অনুষ্ঠানে সম্মানীত অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন- জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।

বিশেষ আলোচক ছিলেন ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং গবেষক, লেখক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ।



এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন