ই-কমার্স লেনদেনে প্রতারণা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নীতিমালা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসক্রো সার্ভিস নামের বিশেষ সেবা চালু করেছে। এটি ৫ হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি মূল্যের একক কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এতে বিক্রেতা সরাসরি টাকা পাবে না। বরং ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দিয়ে বিক্রেতা প্রাপ্তি রসিদ দেখালে তখন এসক্রো সেবা থেকে বিক্রেতার ব্যাংক হিসাবে পণ্যমূল্য পাঠিয়ে দেয়া হবে।
আবার পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে কুরিয়ার থেকে পণ্য গ্রহণ না করার মানসিকতা অনেক ক্রেতার মধ্যেও আছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সুরক্ষা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে এই নীতিমালা করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবা নিয়ে কাজ করবে, তারা নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এসক্রো সেবার মাধ্যমে কোনো ই-কমার্স থেকে ৫ হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি মূল্যের একক কেনাকাটার অর্থ সরাসরি বিক্রেতার কাছে যাবে না। ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করলে তা ব্যাংক, এমএফএস বা অর্থ পরিশোধের পরিষেবা (পিএসও/পিএসপি) প্রতিষ্ঠানের কাছে যাবে। টাকা সংরক্ষিত থাকবে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে। বিক্রেতাকে নিশ্চয়তা দেয়া হবে ক্রেতা কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য বুঝে পেলে টাকা পাওয়া যাবে। ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দিয়ে বিক্রেতা প্রাপ্তি রসিদ দেখালে তখন এসক্রো সেবা থেকে বিক্রেতার ব্যাংক হিসাবে পণ্যমূল্য পাঠিয়ে দেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘মার্চেন্ট অ্যাকোয়ারিং ও এসক্রো সেবা নীতিমালা ২০২৩’ শীর্ষক নীতিমালায় এমন শর্তের কথা বলা হয়েছে। মূলত অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কে সুরক্ষা দেয়ার জন্য তৈরি হয়েছে এই নীতিমালা। এতে বলা হয়, ই-কমার্সে এমন লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক, এমএফএস, পিএসও ও পিএসপি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকে কোনো মাশুল নিতে পারবে না। এই সেবায় অংশগ্রহণকারী কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবশ্যিকভাবে বাংলাদেশ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।
সরকার কর্তৃক সেন্ট্রাল বা কেন্দ্রীয় কুরিয়ার হাব প্রতিষ্ঠার পর সব কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় কুরিয়ার হাবে যুক্ত হবে। শুধু কেন্দ্রীয় কুরিয়ার হাব কর্তৃক ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে। এসক্রো সেবা নিশ্চিত করতে অর্থ পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চেন্ট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে। তাদের পক্ষে গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য বা সেবামূল্য সংগ্রহ করবে। এ ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট অ্যাকোয়ারের বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সেবার আওতায় নিয়ে আসতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
প্রধানত তিন ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিশোধ পরিষেবাগুলো চুক্তিবদ্ধ হয়ে মার্চেন্ট হিসাব খুলে দেবে। সেগুলো হলো- ফিজিক্যাল স্টোরভিত্তিক মার্চেন্ট, অনলাইনভিত্তিক মার্চেন্ট এবং ফিজিক্যাল স্টোর ও অনলাইন উভয়ভিত্তিক মার্চেন্ট। এই উদ্যোগ ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থার প্রসারে ভূমিকা রাখবে। কারণ ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সশরীর উপস্থিত থেকে লেনদেন না করতে পারায় অনেক বিক্রেতা সুযোগ গ্রহণ করে। টাকা নিয়ে পণ্য দেয় না।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা