সোমবার রিপাবলিকান সম্মেলন শুরু
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। সোমবার ১৫ই জুলাই উইস্কন্সিনের মিলওয়াকি শহরে রিপাবলিকান সম্মেলন-২৪ শুরু হচ্ছে। চার-দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এক ভাষণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে দলের মনোনয়ন গ্রহণ করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন। দু’বার অভিশংসিত এবং ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনরায় একটি বড় দলের প্রার্থী হবার ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। প্রায় ৫০হাজার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন, মডেল অম্বর রোজ, টিমস্টার ইউনিয়ন নেতা সিন ও’ব্রিয়েন, ফ্লোরিডা গভর্নর রণ ডি-সান্টিস। নিকি হেলি থাকছেন না? সম্মেলনের চেয়ারম্যান মাইকেল হোয়াটলে এবং চেয়ারওমেন এনি হাথাওয়ে ২০২৪ আরএনসি কনভেনশনে সবাইকে স্বাগত জানিয়েছেন। এদিকে ট্রাম্প সুপ্রিমকোর্টের দায়মুক্তির বরাত দিয়ে নিউইয়র্কে ফৌজদারি মামলায় ‘দোষী সাব্যস্ত’ রায় বাতিল করার আর্জি জানিয়েছেন।
বাইডেনের বিদায় ঘন্টা বাজছে?
বৃহস্পতিবার রাতে ন্যাটো সম্মেলন নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘন্টাব্যাপী একক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রমান করতে সচেষ্ট ছিলেন যে, তিনি ফিট এবং আগামী চার বছর আমেরিকাকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। হয়তো তিনি কিছুটা সফল হয়েছেন। প্রথমে তিনি ৮মিনিট ভাষণ দেন, এবং এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন্। কিছুটা তোতলানো, বা কথা জড়িয়ে যাওয়া ছাড়া তিনি দুইটি বড় ভুল করেন। ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের স্থলে তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে জেলেনস্কির বদলে পুটিনের নাম বলেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বাইডেন তার বয়স ও ফিটনেস সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর এড়িয়ে যান। বাইডেন বলেছেন, যতক্ষণ আমার জয়ের সম্ভবনা বিদ্যমান ততক্ষন আমি রেসে আছি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হতে আমিই সবচেয়ে যোগ্য।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়ায় বাইডেনকে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘গ্রেটজব জো’। বাইডেনের ভাষণের পরপরই ইলিনয়েসের কংগ্রেসম্যান এরিখ সোরেনসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াবেন। তিনি বলেন, ২০২০-তে বাইডেন বলেছিলেন যে, দলের চেয়ে দেশ বড়, এবারো সরে দাঁড়িয়ে তিনি তা প্রমান করুন। কানেকটিকাট কংগ্রেসম্যান জিম হাইম্স বলেছেন, বাইডেনের সরে দাঁড়ানো উচিত। সাবেক স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি স্পষ্টত: বলেছেন যে, বাইডেনের উচিত নির্বাচনী রেসে থাকার তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। ভারমন্টের সিনেটর পিটার ওয়েলচ, ৭৭ ওয়াশিন্টন পোষ্টে লিখেছেন, বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর উচিত।
শুধু ডেমোক্রেটিক পার্টি নয়, ৭৩% আমেরিকান, ৬৭% নির্দলীয় ভোটার, ৫৬% ডেমোক্রেট চান বাইডেন সরে দাঁড়ান। ওয়াশিন্টন পোষ্ট-এবিসি নিউজ-ইপসস জরীপ বলেছে মাত্র ৪২% ডেমক্রেট এখনো বাইডেনকে সমর্থন করছেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ক’জনা উপদেষ্টা ভাবছেন কিভাবে বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে রাজি করানো যায়! টাইম ম্যাগাজিন বলেছে, বাইডেন ও তার ডেমক্রেটিক পাটির মধ্যে ফাইট তীব্রতর হচ্ছে, এবং চিত্রটি প্রেসিডেন্টের জন্যে সুখকর নয়। সপ্তাহের শুরুতে মনে হচ্ছিলো যে বাইডেন টিকে যাচ্ছেন। মধ্য-সপ্তাহে সাবেক স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি আবার বিতর্কটা চাঙ্গা করে দেন্। তিনি বলেন, বাইডেন থাকবেন কি যাবেন তা এখনো ফাইনাল হয়ে যায়নি। একই সময়ে অভিনেতা জর্জ ক্লোনে (Clooney) নিউইয়র্ক টাইমসে পরিষ্কারভাবে বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাইডেন থাকলে নভেম্বরে জেতা যাবেনা। অভিনেতা জর্জ ক্লোনে মাত্র ক’দিন আগে হলিউড থেকে মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার বাইডেনের জন্যে চাঁদা তুলে দিয়েছেন।
ডেমক্রেটদের দুই বড় নেতা সিনেট লিডার চাক শ্যুমার ও হাউস মাইনরিটি নেতা হেকিম জেফরী প্রকাশ্যে বাইডেনের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করলেও এখন শোনা যাচ্ছে, শ্যুমার তলে তলে ডোনারদের বলছেন, বিষয়টি মীমাংসিত নয় এবং এমনকি তিনি বাইডেনকে সরাতেও রাজি আছেন। ডেমক্রেট বড় বড় নেতারা প্রকাশ্যে বাইডেনের পক্ষে কথা বললেও ভেতরে ভেতরে তাঁর সমালোচনা করছেন। ডেমক্রেট নেতা, ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ চান বাইডেন প্রমান করুন তিনি ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন। এমনকি ডেমোক্রেট কিছু নির্বাচনী কর্মী বাইডেনকে নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন। আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হচ্ছেন। আগষ্টে ডেমক্রেটিক সম্মেলনে বাইডেন দলীয় প্রার্থী হবেনই একথা এখন আর জোর দিয়ে বলা যাচ্ছেনা। [email protected];