অপেক্ষা করছি ।।। সুমিত মোদক
– এখন তুমি কোথায় আছো?
– মনিকর্ণিকার ঘাটে;
– কেনও!
– এ সময়ে তো এখানেই থাকার কথা;
তোমারও তো আসার কথা ছিল;
এর মধ্যে ভুলে গেলে!
– ওখানে কি!
– নিজেকে দেখছি, দেখছি একের পর এক
চিতাকাঠে সাজানো মৃতদেহ;
দাউ দাউ করে পুড়ে যাওয়া, পড়ে থাকা ছাই …
আমার আমিত্বকে;
– হঠাৎ করে তোমার কি হলো যে
একে বারে মনিকর্ণিকার ঘাটে গিয়ে দাঁড়িয়ে
আছো!
– অপেক্ষা করছি;
–কার!
– ডোম হরিশচন্দ্রের, যে কিনা আমাকে দাহ করবে;
অপেক্ষা করছি সেই অঘোরীর,
যে কিনা আমার আধপোড়া মাংস খাবে,
জ্বলন্ত চিতা থেকে নিয়েগিয়ে তার শৈব সাধনায়;
অপেক্ষা করছি তোমার জন্যও;
তুমি তো আমার নাভিকুণ্ডটুকু পুঁতে দেবে
বারাণসীর মাটিতে গঙ্গার পাড়ে;
তার পর আমি ফিরে পাবো আমার ওম;
– এখন কি এ সব ভাবার সময়!
– সময় কি আমার জন্য স্থির থাকবে!
সে তো চলমান মহাজাগতিক সংসারের মতো;
কালভৈরবের মতো;
– ওসব কথা বাদ দাও, ফিরে এসো;
– কোথায় ফিরবো ! ফেরার পথে তো দাঁড়িয়ে আছি;
আমার অহংকার, আমার ঔদ্ধত্য, আমার আকাঙ্খা
একটু একটু করে পুড়ছে আমারই সামনে,
আমার ভিতরে;
– সেই থেকে এক কথা বকেই চলেছো;
জীবনের কথা বলো;
নতুন করে বাঁচার কথা ভাবো;
– ভাবা অনেক আগেই হয়ে গেছে;
যেদিন সংসার থেকে, সমাজ থেকে,
এ সভ্যতা থেকে চাওয়া ও পাওয়ার হিসাব
শেষ হয়ে গেছে,
সেদিন থেকে ছুঁয়ে আছি তোমাকে,
আমার আমিকে;
এর পর বাকিটুকু নাফেরার দেশের জন্য রেখে দিলাম;
– এ মুহূর্তে তুমি কোথায় আছো!
– গঙ্গার পাড় ধরে হাঁটছি মহামুম্ভের দিকে।