ফিচার্ড মত-মতান্তর

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেমন হবে আগামী দিন?

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেমন হবে আগামী দিন?
বিদ্যুৎ ভৌমিক।। গত ২০ জানুয়ারী সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলরোটুন্ডায় ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁকে শপথ পাঠ করান যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। এ সময় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তাঁর স্ত্রী জিল বাইডেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ বুশ ও বিল ক্লিনটনও শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে ক্ষমতায় বসা প্রেসিডেন্ট।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারী সোমবার তার অত্যাশ্চর্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করেছেন যখন তিনি ৪৭তম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসাবে ২য় বার শপথ নিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় (গ্রিনেচ মান সময় ১৭.০০ বা বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টা) শুরু হয়। গত বছরে ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে অভিষেক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন. “আমেরিকার সুবর্ণ যুগ শুরু হলো । একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান করে তোলার কথাও উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । আমেরিকা ফাস্ট কথা ব্যক্ত করেন। সারা বিশ্বে আবার সম্মান অর্জন করবে আমেরিকা । মার্কিনদের ব্যবহার করে কাউকে আর সুবিধা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার কথা বলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । তিনি বলেন যে, তিনি সীমান্তে সৈন্য পাঠাবেন এবং “অবৈধ” অভিবাসীদের বিতাড়ন শুরু করবেন। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন, যে ড্রাগ কার্টেলগুলিকে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে মনোনীত করবেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্যাংগুলিকে বহিষ্কার করতে ১৭৯৮ সালের এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্টের আহ্বান জানাবেন।ট্রাম্প উত্তর সীমান্তের কথা উল্লেখ করেননি, কারণ কানাডার রাজনীতিবিদরা আমদানিতে প্রেসিডেন্টের হুমকি দেওয়া শুল্কের প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে একই দিনে হোয়াইট হাউসে ফিরেই ‘অ্যাকশন’ শুরু করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দিনই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তিনি। এর মধ্যে বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ হচ্ছে দেড়শ বছরের পূরাতন জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব প্রোগাম বাতিল, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুরাও সিটিজেনশিপ পাবে না। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে হামলার সঙ্গে জড়িতদের ক্ষমা প্রদান অর্থাৎ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক হওয়া প্রায় দেড় হাজার মানুষকে ক্ষমা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। । ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায় ট্রাম্পের সমর্থক একদল মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পপন্থী বিক্ষোভকারীদের কংগ্রেস ভবনে ওই হামলার ঘটনায় অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছিলেন। এভাবে দাঙ্গাসৃষ্টিকারী ও হামলাকারীদের ক্ষমা প্রদান পছন্দ করছেনা ট্রাম্পের রিপাকলিকান পার্টির অনেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা W.H.O এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করার সিদ্বান্ত নিয়েছেন নূতন প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া সরকারের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন তিনি। আরও ১ হাজারের মতো ফেডারেল কর্মকর্তাকে বরখাস্তের হুমকি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা : নতুন প্রেসিডেন্ট আগামী ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা W.H.O থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করার পদক্ষেপ যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতের নেতৃত্বস্থানীয় দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং পরবর্তী মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করা আরও কঠিন করে তুলবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত সিদধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন বলে আশাকরি আন্তরিকভাবে। তবে সবার মুখে মুখে একই কথা ‘কেমন হবে আগামী দিন?
যুক্তরাষ্ট্র সহ সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে মহাশক্তিধর এ দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপের দিকে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর আগামী দিনগুলোতে নূতন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর Administration যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়ন,প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করি আন্তরিকভাবে।


লেখক, কলামিষ্ট ও CBNAএর উপদেষ্টা


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন