মোহাম্মদ নাসিম – ফাইল ছবি
প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহ রোববার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
শনিবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সদ্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় তাকে জানিয়েছেন, তারা তার বাবাকে রোববার বনানী কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী জামে মসজিদে মোহাম্মদ নাসিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে জনগণের স্বাস্থ্য বিধি ও স্বাস্থ্যসচেতনতার দিকটি বিবেচনায় রেখে তার লাশ সিরাজগঞ্জে নিজ জন্মভূমিতে নেওয়া হবে না বলেও জানান তারা।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুরসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে মারা যান মোহাম্মদ নাসিম। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।
গত ১ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর পরীক্ষায় তার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। প্লাজমা থেরাপিতে কিছুটা সুস্থ হলে ৫ জুন তাকে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়ার কথা ছিল। তবে ওইদিনই ভোরে তার ব্রেইন স্ট্রোক হলে সকালে ওই হাসপাতালেই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।
করোনা থেকে সেরে উঠলেও মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর থেকেই ডিপ কোমায় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ডিপ কোমায় থাকা অবস্থাতেই চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শনিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
১৯৭৫ সালে কারাগারে হত্যা করা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যমোহাম্মদ নাসিম এমপি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর ডিপ কোমায় থাকা অবস্থাতেই শনিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।
মোহাম্মদ নাসিমের বর্ণাঢ্য জীবন
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ডের শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন। নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্মাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।
১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পরে ওয়ান ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে কারাবন্দি ও নির্যাতিত হন। এই কারা নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০০৮ এর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজােট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি একাদশ সংসদে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মধ্য দিয়ে ছাত্রজীবনেই রাজনীতি শুরু মোহাম্মদ নাসিমের। পরে যুবলীগ হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। দলের গত তিনটি জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু ওই পদে ছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্বেও ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নাসিম, ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে টানা নয় দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকা নাসিমকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সকল ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সি/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন