Flu | | নৈশব্দের পংক্তিমালা ।। ধারাবাহিক ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
পথের অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে, তুষার ঝড়ের ভয়াবহতা পেরিয়ে যখন বাসায় এলাম তখন আমি যে এক অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিকে সাথে নিয়ে ঘরে ফিরেছি বুঝতে পারিনি। আমার মাথায় শুধু একি চিন্তা সকাল হলে বরফের পাহাড় সরিয়ে কেমন করে গাড়ী বেড় করব, কেমন করে বরফ কেটে বানাবো পায়ে চলার পথ। রাতে কে যেন জাগিয়ে দেয় আমায়। একি আমি কাঁপছি কেন! পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্দয় ভাবে সর্বাঙ্গ পিটিয়ে কে যেন ফেলে রেখে গেছে। আমি অপ্রতিরোধ্য কাঁপুনিতে কেপে যাচ্ছি। বুঝতে বাকী রইলো না আমি flu তে আক্রান্ত হয়েছি। নিশ্চিত হলাম যখন ডাক্তার অজস্র প্রশ্ন করে, শুইয়ে বসিয়ে, হ্যাঁ করে, জিভ দেখে আমায় বলে দিলেন influenza।
আমি সারাজীবনের সঞ্চিত ক্লান্তি, শ্রান্তি নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার চেষ্টা করে যাই। শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন পারস্পরিক যোগাযোগ বিহীন হয়ে পড়েছে। একে অন্যকে সাহায্য করতে গেছে ভুলে। মাথায় বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা – কখনো কোন কবিতার খণ্ডাংশ, কখনো particle in a box , box in a particle, Heisenberg uncertainty theory, আবার কখনো recursive programming এর কোন এক জটিল লুপ মাথার মধ্যে ঘিন ঘিন করে। আমি প্রাণপণে ঐ জটিল চিন্তা জগত থেকে বেড় হয়ে আসার চেষ্টা করে যাই। মনে পড়ে মনকে শান্ত করতে মেডিটেশনের কথা। আমি চোখ বুজে অনুভব করার চেষ্টা করি অনন্ত মহাশূন্যতাকে।
আমার মনের আকাশে আস্তে আস্তে ভেসে ওঠে চাঁদ, তারা, সূর্য। মিটমিট করে তারা জ্বলে দূরে বহু দূরে। চাঁদের আলোয় ভেসে যায় চরাচর। আমি চাঁদকে বলি আমায় প্রশান্ত কর তোমার সেই স্নিগ্ধ আলো দিয়ে। চাঁদ একটু আভাস দিয়ে কোথায় হারিয়ে যায়। আমার মনের আকাশে সূর্য আরও দীপ্তিময় হয়ে ওঠে। আমি ক্রমাগত সূর্যের দিকে এগিয়ে চলি। চরম উত্তাপে আমার গা পুড়ে যায়। মনের সাথে যুদ্ধ করে আমি হেরে যাই। আমি ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে থাকি নিঝুম রাত্রির অন্ধকারে। শরীরে হয়তো অনেক জ্বর, মাথা যন্ত্রণায় দপদপ করে। আমি আবারো চেষ্টা করে যাই মনকে শান্ত করতে। এবার আকাশ থেকে নেমে আসি মহাসমুদ্রে।
আমার সামনে এক বিস্তীর্ণ আদিম সমুদ্র। ভেঙ্গে পড়ছে উত্তুঙ্গু ঢেউ খণ্ড বিখণ্ড হয়ে। এই তো সেই জন্মদাত্রী সমুদ্র, যার গর্ভ হতে শত কোটি বছর আগে জন্ম নিয়েছিল প্রথম প্রাণ। এক সরল প্রাণ। কোটি কোটি বছরের জটিল মিথস্ক্রিয়ায় সেই প্রাণ বিকশিত হয়ে আজকের জটিল আমি। সৃষ্টির সেই ঊষা লগ্নে, মানুষের আবির্ভাবের অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছিল একপ্রকার অতিক্ষুদ্র অণুজীব। এই অতি-আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয় জৈব কণা আজ আমার শরীরে বাসা বেঁধেছে। প্রতি মুহূর্তে আমার আক্রান্ত কোষ গুলোকে হুকুম দিচ্ছে তার প্রতিলিপি তৈরি করতে। আমার আক্রান্ত কোষগুলো হুকুম মেনে তৈরি করছে মিলিয়ন মিলিয়ন অণুজীব। আর এই প্রক্রিয়ার বলী আমার শ্বসনতন্ত্রের নিরীহ কোষগুলি। আমি কল্পনায় ওদের অপমৃত্যু প্রত্যক্ষ করি। মনে মনে বলি, হে মহা পরাক্রমশালী influenza, কে তোমাদের নাম দিয়েছে influenza আমার জানা নেই। এই যে তোমরা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে আস, কেড়ে নাও লক্ষ জীবন, সৃষ্টির আদি পর্বে তোমরা ভাইরাসরা তো এমন ছিলে না ! শুনেছি তোমরা না থাকলে আজ আমরাও থাকতাম না। তোমরাই নাকি শত মিলিয়ন বর্ষ পূর্বে আমাদের পূর্বজ স্তন্যপায়ী প্রাণীকুলকে এক ব্যাপক আক্রমণের মাঝ দিয়ে দান করেছে অজস্র প্রয়োজনীয় জীন – যেখান থেকে উদ্ভব হয়েছে প্লাসেন্টা, যার মাধ্যমে সন্তান গর্ভাবস্থায় মায়ের কাছ থেকে পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ। তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ হে ভাইরাস। যদিও তোমরা আমাদের শরীরে, প্রকৃতিতে আজও নানা ভাবে উপকার করে চলেছ কিন্তু তোমাদের ধ্বংসযজ্ঞের অসীম ক্ষমতা দেখে শিহরিত হই।
ভোর অত্যাসন্ন। আমার ঘুম পাচ্ছে । আমি আমার নাসিকাতে, গলার স্ফীত গ্রন্থিতে ওদের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি। দেখে যাই শ্লেষ্মা জড়িত সবুজাভ অণুজীব বিশ্রী দাঁত বেড় করে ক্রমাগত হেসে চলেছে। আমি অসহায় হয়ে বলি আচ্ছা তোমরা আমায় কেন ধরলে? ওরা একে অপরের গায়ে হেসে লুটিয়ে পড়ে, আর বলে flu shot নিসনি ক্যান?
Flu | | নৈশব্দের পংক্তিমালা ।। ধারাবাহিক ।। সুশীল কুমার পোদ্দার , ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী । ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স, মাস্টার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স, ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি, ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স, ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান