আজকের আমাজন কার টাকায় গড়ে উঠেছে?
মা-বাবা সন্তানের জন্য কত কিছু করেন। তাঁদের নিজস্ব গচ্ছিত সম্পদ সন্তানের পেছনে বিনিয়োগ করতে পিছপা হননি। সেই তালিকায় আছেন আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মা-বাবাও।
যদি প্রশ্ন করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে? এ প্রশ্ন করা হলে কিছুদিন আগেও উত্তর হতো মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। কিন্তু এখন সবাই বলে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের নাম। করোনা মহামারিতে অনলাইন ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে প্রচুর সম্পদ বেড়েছে বেজোসের।
ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনী অনলাইনে কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ এখন ১৯৪ বিলিয়ন (১৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) মার্কিন ডলার। তাঁর থেকে অনেকটা পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বিল গেটস, যাঁর সম্পদের পরিমাণ ১২৩ বিলিয়ন ডলার।
বিবিসি অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেজোস প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি আমাজন একসময় ছিল অনলাইনে পুরোনো বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান। কী করে এত ধনী হলেন তিনি? মাত্র দুই দশক আগেও তিনি ছিলেন সাধারণ এক উদ্যোক্তা।
মা-বাবার দেওয়া সামান্য কিছু টাকায় শুরু করেছিলেন নিজের ব্যবসা। তাও বড় প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, এমন এক যুগ আসছে, যখন কম্পিউটারের এক ক্লিকে যেকোনো জিনিস কেনা যাবে, শপিং মলের জনপ্রিয়তা কমে যাবে, দোকানগুলো ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ভিন্ন পথে হাঁটবে।
জেফ বেজোস ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটারবিজ্ঞান পড়েন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর নিউইয়র্কে গিয়ে চাকরি করেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে এ সময়ই পরিচয় হয় তাঁর। গত বছরে ছাড়াছাড়ি হওয়া ম্যাকেঞ্জি এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
বেজোসের বয়স যখন ৩০, তখন একটা পরিসংখ্যান চোখে পড়ে তাঁর। এতে বলা হয়েছিল ইন্টারনেটের দ্রুত বৃদ্ধির কথা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, চাকরি নয়, নিজেই কিছু একটা করবেন। বেজোস চলে গেলেন আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তের শহর সিয়াটলে।
তাঁর নিজের জমানো কিছু টাকার সঙ্গে মা–বাবার কিছু টাকায় শুরু করেন ব্যবসা।
১৯৯৪ সালের সেই শুরুর দিনের গল্প এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন বেজোস। মার্কিন সংবাদমাধ্যম কিং-টিভিস ইভিনিং ম্যাগাজিনের সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছে।
তাতে বেজোস বলেন, তাঁর মা-বাবা ব্যবসা করার জন্য ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৩ মার্কিন ডলার তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু শুরুর দিকে তিনি ব্যবসা করতে গিয়ে মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করেন। তিনি মা-বাবাকে বলেন, ব্যবসা ঠিকঠাক মতো চলবে কি না, তা তিনি নিশ্চিত নন। তাঁর মা-বাবার ওই বিনিয়োগ পুরোটাই জলে যেতে পারে।
মা-বাবা আর্থিক সহযোগিতা করলেও ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাই বেজোসের মা তাঁকে চাকরি ছাড়তে নিষেধ করেন। তাঁর মা বলেন, চাকরি না ছেড়ে ব্যবসা করতে চাইলে ছুটির দিন বা রাতে যদি করা যায়, তবে তাঁর জন্য ভালো হবে।
সাক্ষাৎকারে বেজোস বলেন, ব্যবসায় সফলতা নিয়ে তাঁর মা–বাবাও প্রথমে সন্দেহ করেছিলেন। কেউই ভাবতে পারেননি যে আমাজন সফল একটা কোম্পানি হবে। তাঁর নিজের কাছে মনে হয়েছিল, কোম্পানির সফলতা বড়জোর ৩০ শতাংশের মতো। কোম্পানির সফলতা দেখে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হওয়া মানুষদের মধ্যে একজন।
বেজোস নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। নিজের নিরাপদ চাকরির কথা না ভেবেই নিজস্ব উদ্যোগের পেছনে ছোটার মনস্থির করে ফেলেন। নিউইয়র্কের হেজফান্ডের চাকরি ছেড়ে সিয়াটলে চলে আসেন এবং একটি গ্যারেজ থেকে চালু করেন আমাজন। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাঁর ব্যবসা হু হু করে বাড়তে লাগল।
এক মাসের মধ্যে আমাজন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সব কটিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ৪৫টি দেশে অর্ডার পাঠাল। পাঁচ বছর পর আমাজনের ক্রেতার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১ কোটি ৭০ লাখে। বিক্রি শুরুতে ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ডলার, আর পাঁচ বছর পর তা দাঁড়াল ১৬০ কোটি ডলারে। বড় বড় কোম্পানি আমাজনের দরজায় ছুটে আসতে শুরু করল।
সূত্র: প্রথম আলো
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন