আজ ৫ জানুয়ারি। উত্তর আমেরিকার পাঠকনন্দিত লেখক, কথা সাহিত্যিক ড. মীজান রহমানে ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৫ সালের এই দিনে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি! একজন মীজান রহমান এবং কিছু স্মৃতি যা মানব চেতনার তীর্থচারী একজন মীজান রহমান এবং কিছু স্মৃতি‘ এই লেখাটি অনেক পুরাতন। দেশদিগন্ত মিডিয়ার ফাইল থেকে পাওয়া যা পুনঃপ্রকাশ হলো। লেখাটিতে ভুলবশত কা’রো নাম বাদ পড়লে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।-সদেরা সুজন
মানব চেতনার তীর্থচারী একজন মীজান রহমান এবং কিছু স্মৃতি
বেশ ক’বছর ধরে উত্তর আমেরিকার পাঠক নন্দিত লেখক শ্রদ্ধেয় মীজান রহমানের অসাধারণ সুন্দর সাবলীল লেখাগুলো পড়তে পড়তে কবে যে নিজের অজান্তেই মীজান ভক্ত হয়ে গেলাম। প্রতি সপ্তাহে দেশেবিদেশে, মাসিক দেশদিগন্ত, সাপ্তাহিক প্রবাসীসহ বিভিন্ন পত্রিকার পাতা খুলেই সব কিছুর আগে দেখতাম মীজান ভাই কী লিখেছেন। ড. মীজান রহমান কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংকের শিক্ষক হলেও তিনি একজন অসাধারণ লেখক, কথাসাহিত্যিক, যিনি মানুষের ভিতরের অব্যাক্ত কথাগুলো ফেলে আসা দিনগুলোর ছবি সত্য ও সুন্দরের মননে তুলে ধরতেন পাঠকের কাছে। তাঁর প্রতিটি লেখায় আমরা দেখতে পাই একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রিয় দেশ-মাটি-মা ও মানুষের কথা কতো সুন্দর সাবলিলভাবে তুলে ধরেছেন পাঠকের কাছে। জীবনের দন্যদশা থেকে এক কিশোর-যুবার কৃষক মাটির ফসলের কথা প্রকৃতির ছায়াঘেরা প্রিয় স্বদেশের স্মৃতি জাগরিত নাড়ির টান নিবিড়ভাবে আন্দোলিত হয়েছে মীজান রহমানের দিগন্ত প্লাবিত লেখার মাঠের শব্দবীজে। অজস্র লেখার অংকুর থেকে সুবিশাল বৃক্ষগুলো এখণ তাবৎ বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে প্রাণের স্পন্দন হয়ে আছে। থাকবেও অনাদিকাল।
একজন অংকের শিক্ষক মীজান ভাই’র পাঠক নন্দিত লেখাগুলো কি করে মানুষকে নাড়া দিয়েছে তার প্রমান আমি পেয়েছি যখন আমি মীজান ভাই’র ওপর একটি গ্রন্থ ‘মানব চেতনার তীর্থচারী একজন মীজান রহমান’ সম্পাদনা করার সিদ্ধান্ত নেই। দেখেছি কী করে মীজান ভাই তার লেখনীর মাধম্যে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তা সহজ কথা নয় এবং স্বাভাবিক পথেও নয়।
২০০৪ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। বেশ কিছুদিন ধরে মাথায় ঘুর ঘুর করছিলো মীজান ভাইকে নিয়ে কিছু একটা করার, যদিও ইচ্ছে থাকলেও সাধ্য ছিলো না, ফলে এ অবস্থায় কি করা যায় ভেবে পাচ্ছিলাম না। সম্ভববত ২০০৩ সালের কোন এক সময়ে (সঠিক তারিখটি মনে নেই) ড. মীজান রহমান এসেছিলেন মন্ট্রিয়লের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আর সেই সুযোগটা হাত ছাড়া করলাম না। ভাগ্য ভালো ছিলো মীজান ভাই আমার বাসায় রাতটি যাপন করার জন্য। আমি জানতাম মীজান ভাই আত্মপ্রকাশে বিমূখ সুতরাং যদি তাঁর কাছে বলি তাঁকে নিয়ে কিছু করতে চাই তাহলে তিনি তাতে সাড়া দিবেন না ফলে সেই রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে আমার স্ত্রী রুবী, বন্ধু সরোজ দাস এবং তার স্ত্রী রুবী বৌদি এবং আমি বিভিন্নরকমের প্রশ্ন করতে লাগলাম যা বলতে হবে আমরা সেদিন অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলাম তাঁর কাছ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। বুঝতে পেরেছিলাম কী সুন্দর মনের মানুষই না তিনি। আমরা যখন তাঁকে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছিলাম তখন তিনি কী অদ্ভুত সুন্দরভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন।
সারারাত মীজান ভাইকে নিয়ে কিছু একটা প্রকাশ করবো ভেবে রাতে ঘুমুতে পারিনি, সকালে ঘুমহীন ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠতে পারছিলাম না তবুও উঠতে হলো কারণ এই সাতসকালেই মীজান ভাই ওটোয়াতে চলে যাবেন এবং আমারও কাজে যেতে হবে। কাজে গিয়েও মাথায় খেলছে বিষয় শুধু একটিই মীজান ভাই। ওনার ওপরে কিছু করতে হবে। কাজ থেকে সেদিন তাড়াতাড়ি ফিরে শুরু করলাম টেলিফোন, একের পর এক অসংখ্য ফোন করলাম বন্ধু-বান্ধব এবং পত্রিকা পাঠকদেরে। আবারো বিষয় একই, মীজান রহমান। সবাইকে খুলে বললাম আমার হৃদয়ের কথা একটি সম্পাদনা গ্রন্থ বের করবো বলে এবং মীজান ভাই’র ওপর লেখা কিংবা প্রশ্ন থাকলে পাঠানোর জন্য। আমাকে কেউ ফিরিয়ে দেননি, সবাই আশ্বাস দিলেন এগিয়ে যাবার জন্য এবং এই মহতি সুন্দর প্রয়াসের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে সবাই আশ্বাস দিলেন। যেমন কথা তেমনি কাজ। পরদিন থেকে শুরু করে দিলাম।
পরিকল্পনা সহজ হলেও কাজটি ছিলো ভীষণ কঠিন আর তা বুঝতে পেরেছিলাম পরে। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁর ওপর লেখা ও প্রশ্ন আসতে শুরু করলো যা শেষাবধি আমাকে হিমশিম খেতে হয়েছে কোনটি রাখবো আর কোনটি ছাপাবো। আর এমন মানুষের ওপর গ্রন্থ সম্পাদনা কী সহজ ব্যাপার? এই মানুষটি দেখতে ছোটখাটো হলেও মেধার ওজনটা অনেক বেশী। এই বইটি প্রকাশ করতে যিনি সর্বপ্রথম আমাকে বিভিন্ন দিক থেকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে আসছেন তিনি হলেন ওটোয়ায় বসবাসরত লেখক ও কবি আব্দুল হাছিব ও তাঁর স্ত্রী রুনা ভাবী। তিনি তখন খুব ব্যস্ত, দেশে যাবার পরিকল্পনা থাকায় ব্যস্ততার মাত্রাটা ছিলো আরো বেশি। তবুও তিনি যে শ্রম এই বইয়ের জন্য দিয়েছেন তা আমার জন্য বাড়তি পাওনা। যেদিন উনাকে আমি বলেছি আমার পরিকল্পনার কথা সেদিন থেকেই বই’র কাজে নেমে গিয়েছিলেন আর তাঁর অক্লান্ত শ্রমই বই প্রকাশে এতটুকু এগিয়েছিলো। তিনি নিজে কাজ বাদ দিয়ে মীজান ভাই’র সাক্ষাৎকার গ্রহণ থেকে শুরু করে বই’র প্রচ্ছদের জন্য ওটোয়ার খ্যাতিনামা ফটোগ্রাফার জামাল চৌধুরীকে নিয়ে মীজান ভাই’র বাসায় গিয়ে প্রচ্ছদের জন্য বিভিন্ন আঙ্গিকের ছবি নিয়েছেন, মীজান ভাই’র ব্যক্তিগত এ্যালবাম থেকে ছবি সংগ্রহ করে আবার এগুলো স্ক্যান করে সিডিতে করে ক্যুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়েছেন।
শধু কি তাই, আমরা (আমি আর রুবী) বইটির টাইপ (বইটির টাইপ ও ডিজাইন দিনের পর দিন কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে করতে হয়েছে এবং আমার স্ত্রী রুবী তার সদ্যপ্রসূত সন্তান সৌভিককে নিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছে, একটি বিষয় না বললেই নয় মীজান ভাই’র এত ছোট লেখা যা আমাদের মত সৌখিন কম্পোজিটারের পক্ষে কম্পোজ করা ভীষণ কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো) সেটিং ডিজাইন শেষে বই’র এই বিশাল পান্ডুলিপিটির কপি ও সিডি নিয়ে দেশে গিয়েছিলেন এবং তা প্রকাশনীর হাতে নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিয়েছেন হাছিব ভাই। এর পরের ঘটনাতো আরো আবেগপ্রবণ। দেশে থাকাকালীন সব সময় দেশ থেকে ফোন করে বই’র খোঁজখবর নিয়েছেন এবং ক্যানাডায় ফিরার সময় তিনি নিজে ভীষণ অসুস্থ থাকা স্বত্ত্বেও ডাক্তারের নির্দেশ অমান্য করে দু’টি লাগেজ ভরে মীজান ভাই’র বই এনেছেন এবং এই বই’র জন্য ওটোয়া বিমানবন্দরে অহেতুক ক্লান্ত শরীর নিয়ে ৩/৪ ঘন্টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে যা হাছিব ভাই’র মতো এমন মীজানভক্ত মানুষ আমাকে শধু ঋণীই করেননি যে ঋণের শোধ কখনো দেওয়া যায় না। ওটোয়ার আরো এক দম্পতি শৈলেশ দেব ও মঞ্জু দেব যে সহযোগিতা দেখিয়েছেন তা আমাকে স্তম্ভিত করেছেন। নিজের জিনিস রেখে লাগেজ ভরে বই এনেছেন যা এমন বদান্যতা কে দেখায় এই সময়ে। শৈলেশদা ও মঞ্জুদির কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।
মন্ট্রিয়লের বন্ধু সরোজ দাস ও যুবনেতা সুশীল পাল খোকা এবং জীবক বড়ুয়াতো শুরু থেকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলেন। অনুষ্ঠানের জন্য কনর্কডিয়া ইউনির্ভাসিটির বিশাল হল বুকিং এবং হল থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনায় তিনি আমাকে সহযোগিতা করলেন তিনি হলেন সরোজ দাস। মন্ট্রিয়লের মীজান ভক্ত সুশীল পাল খোকার (বর্তমানে টরন্টোবাসী) কথা কি বলবো, উনি নিজেতো মীজান ভাই লেখা পড়ে মীজান ভাই’র আপন হয়ে গেছেন যদিও মীজান ভাই’র সঙ্গে উনার কখনো দেখা হয়নি অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত। যুবনেতা সুশীল পাল খোকা আমাকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলেন মীজান ভাই’র ৭২তম জন্ম দিনে। মীজান ভাইর ৭২তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশে-বিদেশে পত্রিকার অর্ধপৃষ্টাজুড়ে মন্ট্রিয়লের শিশুদের নামে বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছেন নিজে প্রচার বিমুখ হওয়াতে নেপথ্যে কাজ করে গেছেন শুধু কি তাই আমার এই বই প্রকাশ করার সময়ও আর্থিক নৈতিক সহায়তা করেছেন যা কৃতজ্ঞতাবোধ জানালেই শেষ হবে না। জীবক বড়ুয়া (বর্তমানে টরন্টোবাসী) অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির শুরু থেকে সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমাকে অকৃপণভাবে সহযোগিতা করে গেছেন। নিজেই নিয়ে গেছেন অনেক দায়িত্ব। প্রবাসের এই কষ্ট কঠিন সময়ে ক’জন পাওয়া যাবে এমন মীজান ভক্ত? অনুষ্ঠানের দায়িত্ব আমার উপর অনেকটা পড়ায়, জীবক বড়ুয়া নি:স্বার্থভাবে আমাকে সহযোগিতা করে গেছেন তা হয়তো নিজ ভাই ও করবে কিনা সন্দেহ বিশেষ করে এই প্রবাসে। জীবক বড়ুয়ার প্রতি আমার এ ঋণ রাখবো কোথায়? কথা সাহিত্যিক মীজান রহমানের ৭২তম শুভ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মন্ট্রিয়লের ৭২ জন শিশু লাল গোলাপ দিয়ে তাঁকে সম্মান জানায় যা ছিলো এ প্রবাসে একজন লেখককে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সম্মান জানানোর ছিলো নতুন পন্থা।মন্ট্রিয়লের সুপরিচিত আওয়ামী লীগ নেত্রী আকলিমা ভাবী ৭২টি গোলাপ ফুল আনলেন ৭২ জন শিশুরা মীজান ভাইকে উপহার দেওয়ার জন্য। আকলিমা ভাবী শুরু থেকে কাজ করে গেছেন অনুষ্ঠানটি সুন্দর করার জন্য।
মন্ট্রিয়লের এম.এ আহাদকে সবাই চেনেন। শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই নন একজন সুন্দর মনের মানুষ। আহাদ ভাইকে যখন মীজানভাই’র সংবর্ধনার ব্যাপারে আলাপ করলাম এবং তাঁর সহযোগিতা চাইলাম তিনি এগিয়ে আসলেন যদিও তিনি ভীষণ ব্যস্ত তবুও মীজান ভাই’র প্রতি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী’র (আমাদের ভাবী) শ্রদ্ধা আমাকে আপ্লুত করেছে ঠিক একইভাবে সাংবাদিক দীপক ধর অপুও। দীপক ধর অপু মন্ট্রিয়লের কমিউনিটি নেতাই শুধু নন একজন পরোপকারী। মানুষের দুঃসময়ে তিনি এগিয়ে যান নিঃসংকোচিত্তে। তিনিও এগিয়ে আসলেন মীজান ভাইর অনুষ্ঠান করতে। মীজান ভাই’র প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রচন্ড যা আমাকে বিমোহিত করেছে। একইভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেন মন্ট্রিয়লের কমিউনিটি নেতা তৈমুছ আলী (বর্তমানে টরন্টোবাসী)। মন্ট্রিয়লের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব কমিউনিটি নেতা রীতীশ চক্রবর্তী ও শিবানী বৌদিতো শুরু থেকেই আমাকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন, মীজান ভাইর প্রতি রীতীশদা ও শীবানী বৌদির অকৃতিম শ্রদ্ধা যা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া মন্ট্রিয়ল এশিয়ান কমিউনিটির সুপরিচিত ব্যক্তিত্বই নন একজন পরোপকারীও। আমি যখন বই প্রকাশের পরিকল্পনা করি তখন তিনি বাংলাদেশে তারপর তিনি সহযোগিতা করতে ভুল করেননি বাংলাদেশ থেকে ফিরার পথে মীজান ভাইর ওপর প্রকাশিত এক বান্ডিল বই নিয়ে এসেছেন তাঁর অসুস্থ শরীর নিয়ে ফলে এমন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভালো লাগে।
মীজান রহমানের প্রতিটি লেখা যেন প্রাণের ছোঁয়া মিশানো সর্বকালের অনুভূতি ঘেরা। মীজান রহমানের লেখাগুলো পড়তে পড়তে অনেকেই হারিয়ে যান অতীত বিন্যাসে ফেলে আসা দিনগুলোর মাঝে ফলেই মীজান রহমানের ওপর বইটি প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সহায়তা করার জন্য লেখাসহ বিভিন্ন উপাদেয় দিয়ে এগিয়ে আসলেন ক্যানাডার সুপরিচিত লেখক ও কবি অপরাহ্ণ সুসমিতো, কবি সকাল অনন্ত, লেখক ও ব্যবসায়ী শাবনুর আলমগীর, মন্ট্রিয়লের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লেখক সাদেক নেওয়াজ চৌধুরী পারভেজ, খ্যাতিমান লেখক গবেষক এবং অনুবাদক আলম খোরশেদ, নিউইয়র্কের খ্যতিনামা রম্য লেখক রণজিৎ দত্ত, টরন্টো থেকে আমার পিতৃতুল্য আলবার্ট এস. মন্ডল বাবু নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে আমার জন্য লেখা পাঠালেন নিজে কম্পোজ করে যা আমাকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ রেখে দিলেন। টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাবেক সাপ্তাহিক দেশে-বিদেশের সাহিত্য সম্পাদক লেখক গল্পকার আকতার হোসেন যিনি মীজান ভাই’র ওপর একটি প্রামান্য চিত্র করেছেন ‘নায়ক’ নামে। আকতার হোসেন নিজেই এই প্রামান্য চিত্রটির পরিকল্পনা, গ্রন্থনা, পরিচালনা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন এবং সম্পাদনা, ক্যামেরা ও ফটোগ্রাফী ও পরিচালনায় ড. খান মনজুর ই- খোদা। ড. খান মনজুর ই- খোদা যখনই শুনলেন আমরা মীজান ভাই কে একটি সংবর্ধনা দিচ্ছি এবং তাঁর সহযোগিতা চাই বলতেই তিনি বললেন ‘অবশ্যই, এমন মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে গর্ববোধ করবো’, যাক আকতার ভাই ও মনজুর ভাই তাঁদের মীজানভাই’র ওপর প্রকাশিত ডকুমেন্টারী নিয়ে আসলেন এবং কনকর্ডিয়া ইউনির্ভাসিটি অডোটিরিয়াম হলের বিশাল স্ক্রীনে যখন মীজান ভাই’র ওপর ডকোমেন্টারী চলছিলো তখণ হলের ভিতর তিল ধারণের স্থান ছিলোনা। তাদের এমন উদ্যোগে আমরাও তাদের আন্তরিকতায় ও বদন্যতায় ঋণী।
শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব মন্ট্রিয়লের বাংলাদেশ কমিউনিটির অন্যতম নেতৃবৃন্দ ভানু লাল দে, শ্যামল দত্ত, হাজী শামসুল হক, জি.এম.মন্ডল, অজয় নাগ, নবেন্দু দাস, কবি হাবিবুল্লাহ বিশ্বাস, সৈয়দ আব্দুর রব, কৃষ্ণপদ সেন, সাদত রহিম চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, বিবেকানন্দ বিশ্বাস ভোলা, দেবেশ রঞ্জন পুরকায়ন্থ, জাসদ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী, দিলীপ কর্মকার, কমিউনিটি নেতা বিদ্যুৎ ভৌমিক, শানু আলম, হাজী মুসুদুর রহমান ও জয়নাল উদ্দিন আমাকে প্রথম থেকেই অনুপ্রেরণা যোগিয়েছিলেন। তাঁদের সবার অভিমত ছিলো যে এখন সৎ মানুষের বড়ো অভাব সত্য ও সুন্দরের পক্ষে কথা বলার মানুষ এখন হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। মীজান রহমান একজন জ্ঞানি-গুণী এবং সৎ মানুষের জন্য কেউ কিছু করলে আমরা অবশ্যই এগিয়ে আসবো মনেপ্রাণে। যেমন কথা তেমনি কাজ। সহযোগিতার হাত তাঁরা এগিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক মীজান রহমানের জন্ম দিনের অনুষ্ঠানে।
মন্ট্রিয়লের বাংলা স্কুলের নির্বাচিত প্রতিনিধি যদিও যুবা তবুও কর্মে মনে হয় তারুন্যের রক্তে উদ্ভাসিত আলোকিত নক্ষত্র আকলিমা বেগম ও তার স্বামী ইকবাল ভাই, দিদার মাহমুদ ভূইয়া, সাজেদা বেগমসহ উদীচীর বাবলা দেব, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সহীদুর রহমান, সাংস্কৃতিক কর্মী রণজিৎ মজুমদার, কংকন দেব, কল্লোল দেব, অম্লান দত্ত সংবাদিক নারায়ন দে সঞ্জু (বইর প্রচ্ছদের ছবি দিয়েছেন) শুধু উৎসাহই যোগাননি সব ধরনের কাজে এগিয়ে এসেছিলেন ‘নিঃশঙ্ক চিত্তে।
রাজনৈতিক নেতা উত্তর আমেরিকার সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব আওয়ামী লীগ নেতা ইতরাদ জুবেরী সেলিম, নূর আহমেদ, মুন্সী বশীর, এম.এম. ওসমান, ডেইজি ভাবি, আব্দুল মালিক, আজিজুর রহমান দুরুদ, জুবায়ের সিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান, আব্দুল হাই, জয়নাল উদ্দীন, মাহফুজ হাসান শাহীন, জামাল উদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ রহমত উল্লাহ, আব্দুর রউফ, করিম উল্লাহ, রোকসানা আক্তার ডেইজি, দুরুদ মিয়া, জাসদ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সহ অনেকেই প্রেরণা যুগিয়েছেন এগিয়ে যাবার জন্য।
মন্ট্রিয়লের সাংবাদিকবৃন্দরা আমাকে শুধু উৎসাহই দিয়েছেন তা নয় বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে সহযোগিতা করছেন যা আমাকে ঋণি করেছে অবশ্য তার কারণ খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক মীজান রহমান। আমার সহকর্মী সাংবাদিক বন্ধুরা যেভাবে সহযোগিতা করেছিলেন তা আমাকে এমন কাজের প্রতি আরো বেশী উৎসাহ যুগিয়েছিলো। মীজান রহমানের ওপর কিছু করতে গেলে প্রথমেই যে নাম চলে আসে তিনি হলেন ক্যানাডা থেকে প্রকাশিত দেশে বিদেশের (অধুনালুপ্ত) সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিন্টু। অপ্রিয় হলেও সত্য যে মীজান ভাইর লেখালেখি বা পরিচিতি দেশে-বিদেশের মাধ্যমে, যদিও মীজান ভাই’র লেখার মাধ্যমেই ‘দেশেবিদেশে’র অনেকটা বহুল প্রচার ও প্রসার হয়েছিলো। কানাডার সব ক’টি বাংলা পত্রিকা ফ্রি হলেও দেশেবিদেশে এক ডলারে বিক্রি হতো। অপ্রিয় হলেও সত্য যে একমাত্র মীজান রহমানসহ মাত্র ক’টি কানাডার সংবাদ ছাড়া সব কিছুই ইন্টারনেটের পাঠকরা আগেই পড়ে ফেলতেন ফলে অধিকাংশই পাঠকই দেশেবিদেশে কিনতেন মীজান ভাই’র লেখা পড়ার জন্য। যাক, অনুষ্ঠানের জন্য দেশে-বিদেশের সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিন্টু ও বানিজ্যিক সম্পাদক আব্দুল হাই, বাংলা রিপোর্টারের সম্পাদক সুমন ভাই, বাংলা কাগজের সম্পাদক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ভাই আমাকে উৎসাহ যোগিয়েছিলেন। বইটি প্রকাশকালে কম্পিউটারে বাংলা সফটওয়ারের সমস্যাতো লেগেই ছিলো যা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিলো যদিও দেবদূতের মতো এ সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিলেন মন্ট্রিয়ল থেকে প্রকাশিত ঢাকা পোষ্টের সম্পাদক বাবলু ভাই আমি তাঁর কাছেও ঋণি, আরো যারা আমাকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছে তারা হলেন ক্যানাডা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার ব্যুরো প্রধানরা। অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলা রিপোর্টারের (অধুনালুপ্ত) সম্পাদক সুমন রহমান। বাংলা কাগজের ব্যুরো প্রধান ছিলেন সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল (বর্তমানে অটোয়াবাসী), বাংলা রিপোর্টারের ব্যুরো প্রধান ছিলেন মনিরুজ্জামান, সময় পত্রিকার (অধুনালুপ্ত) ব্যুরো প্রধান মুহিবুল হাসান, বাংলা নিউজের (অধুনালুপ্ত) আবাসিক সম্পাদক দীপক ধর অপু, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাগজের ব্যুরো প্রধান ছিলেন সরোজ দাস, এনওয়াইবাংলা ডটকমের প্রকাশক আবিদ রেজা, সংবাদ থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপনসহ সবধরনের সহযোগিতা করছেন যা আমাকে এগিয়ে যাবার সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছেন, যা আমাকে ঋণের ওজনটা বাড়িয়ে দিলেন।
মানব চেতনার তীর্থচারী একজন মীজান রহমান গ্রন্থটি’র মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন খ্যাতিনামা লেখক গবেষক হাসান মাহমুদ। আমাদের অনুরোধ তিনি ফিরাতে পারেননি ফলে মীজান ভাই’র প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টরন্টো থেকে ছুটে এসেছিলেন মন্ট্রিয়লের অনুষ্ঠানে। তাঁর কাছেও আমরা ঋণি। মীজান ভাই’র ৭২তম শুভ জন্মদিনে মীজান ভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে সাত সাগর তেরো নদী পার হয়ে সেই সুদূর বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছিলেন বাংলাদেশ-ভারতের খ্যাতিনামা সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা। এছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে অনুষ্ঠানের জন্য উজ্জ্বল কুমার দেব, মৌসুমী চ্যাটার্জী, জয়নাল উদ্দীন, দেবাশীষ ধর, এ্যানি গোমেজ, কাজল দাস, মুকুল রায়, যে সহযোগিতা করেছেন তা ভোলার মত নয়।
বই প্রকাশ ও মীজান রহমানের ৭২ তম শুভ জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বেশ ক’টি বছর পার হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তবুও এই লেখাটা টরন্টোর অনলাইন বাংলা পত্রিকা ‘নতুন দেশ’-এর সম্পাদক/ প্রকাশক বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক দম্পতি শওগাত আলী সাগর ও সেরীন ফেরদৌস এর অনুরোধে লিখতে হলো। তাদের অনুরোধে তাড়াহুড়ো করে লিখতে গিয়ে এবং অনেক দিনের পুরনো দিনের অনুষ্ঠান যা নিজের অজান্তে অনেকেরই নাম ভুলে গিয়েছি যারা আমাদেরে সবরকমরে সহযোগিতা দেখিয়েছেন, এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থী।
আমি কোন দিনই ভাবতে পারিনি মীজান ভাইকে সংবধর্ণা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব আমার কাঁধে নিতে হবে। আমি কোন দিনই প্রবাসে অনুষ্ঠান করিনি, বা ইচ্ছে করেই সংশ্লিষ্ট হতে চাইনা। দেশে এসবের সঙ্গে খুব বেশী সংশ্লিষ্ট থাকলেও প্রবাসে ভীষণ ভয় করে। কিন্তু এই অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতার দুয়ার খোলে দিয়েছে। অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে অনেক হুমকিধামকি খেতে হয়েছে। অনেকে আননোন ফোন নাম্বারে আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলেছেন কোন মুসলমানের জন্মদিন পালন করা যায় না ফলে অনুষ্ঠানের আগের রাতেও অনুষ্ঠানটি বাতিল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলেন। যা ভুলেনি, ভুলতে পারিনি। এরপরও সহস্র প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে কত অসময়ে কতো মানুষকে যন্ত্রণা দিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। কোন কোন সময় কাউকে ফোন করে নিজেই বিব্রতবোধ করেছি, অনেককেই একাধিবার ফোন করেছি কিন্তু কোন কিছু করার উপায় ছিলো না। সবচেয়ে বড়কথা হলো এ অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বেশ ক’সপ্তাহ আমার কতো ঘন্টায় রাত কিংবা দিন অতিবাহিত হয়েছে কিভাবে হয়েছে তা জানিনা। এমোন ব্যস্ত সময় বোধহয় আমার জীবনে আর কোনদিন ছিলো না। সারা দিন কাজ শেষ করে এসে মীজান ভাই’র অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থেকে গভীর রাতে কাজ থেকে ফিরে মানুষের সঙ্গে আলাপ শেষ করে বিছানায় ঘুম আসার পূর্বেই ফের কাজে যাবার সময় হয়ে যায় ফলে এই ক্লান্ত-অবসন্ন শরীর নিয়েই দিনের পর দিন কাজ করতে হয়েছে। তাতে আমার কোন বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই, কারণ এই মহৎ সুন্দর অনুষ্ঠানটি সবার সহযোগিতায় স্বার্থক হয়েছিলো। পাঠক নন্দিত লেখক কথাসাহিত্যিক মীজান রহমানের ৭৮ তম শুভ জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তিনি দীর্ঘজীবী হোন মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় অনাদিকাল।
লেখক : ফ্রিল্যান্স সংবাদপত্র কর্মী
মন্ট্রিয়ল. ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০
আরও পড়ুনঃ ‘এটা কেবল শুরু’, বললো মার্কিন ওয়েবসাইটে হামলাকারীরা
আরও পড়ুনঃ এস কে সিনহার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন