কমলগঞ্জের ১৫২টি পূজামন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় দেবী দুর্গাকে বরণ করতে পূজামন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী সোমবার থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। চারদিকে পূজা পূজা গন্ধ। চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে দুর্গাপূজাকে ঘিরে আগের সেই উৎসবের আমেজ না থাকলেও দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে উপজেলার প্রায় অধিকাংশ পূজামন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রঙ-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা।
শারদীয় দুর্গাপূজা ১১ অক্টোবর (২৪ আশ্বিন) ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর (২৮ আশ্বিন) বিজয়া দশমী দিয়ে শেষ হবে। এর আগে পঞ্চমী থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ। তবে ষষ্ঠী থেকেই কার্যত উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে।
এদিকে করোনার কারণে এবারও আয়োজকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা আয়োজনের কথা বলেছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম ভাব আনার চেষ্টা করেছে পূজামন্ডপগুলো। সে লক্ষ্যেই কাজ করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা।
তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার মন্ডপগুলোতে তেমন একটা আলোকসজ্জা দেখা যাবে না, তারপরও পিছিয়ে নেই কেউ। স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে সাজানো হচ্ছে মন্ডপগুলো। গত বছরের মতো এবছরও পূজামন্ডপগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার খরচ কিছুটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আয়োজকরা।
এবারের পূজায় থাকছে না জাঁকজমকপূর্ণ কোনো অনুষ্ঠান। এরপরও থেমে নেই কোনো কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাজানো হচ্ছে মন্ডপ ও এর আশপাশ। হাতে আর মাত্র এক দিন বাকি। তাই রাত-দিন চলছে পূজার প্রস্তুতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু হিন্দু সনাতন ধর্মের অনুসারীরাই নয়, পূজার আমেজ পেতে শুরু করেছেন সব মত ও পথের মানুষ। এছাড়া কমলগঞ্জের বস্ত্র বিতানগুলোতে নারী, শিশু ও পুরুষদের দেখা যায় নতুন কাপড় ক্রয় করতে। ভানুগাছ বাজার, শমশেরনগর বাজার, আদমপুর বাজার সহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের মার্কেটগুলোতে পূজা উপলক্ষে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ইতোমধ্যে অনেকেই আবার পরিবার-পরিজনদের জন্য পূজার কেনাকাটার কাজ শেষ করেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলায় এবার সার্বজনীন মোট পূজামন্ডপের সংখ্যা ১৪২টি। তার মধ্যে কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৭টি, ১ নম্বর রহিমপুর ইউনিয়নে ১৯টি, ২ নম্বর পতনউষার ইউনিয়নে ১৫টি, ৩ নম্বর মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ১৫টি, ৪ নম্বর শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি, ৫ নম্বর কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৮টি, ৬ নম্বর আলীনগর ইউনিয়নে ২২টি, ৭ নম্বর আদমপুর ইউনিয়নে ১৪টি, ৮ নম্বর মাধবপুর ইউনিয়নে ১৮টি ও ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নে ১০টি পূজামন্ডপ রয়েছে। আর মোট ১০টি ব্যক্তিগত মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সবমিলিয়ে উপজেলায় পূজামন্ডপের সংখ্যা ১৫২টি।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্গাপূজা সার্বিক তদারকির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পূজামন্ডপগুলোতে যাতে একত্রে বেশি জনসমাগম না হয় এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালিত হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারির জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান জানান, কমলগঞ্জের প্রতিটি পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা আনন্দঘন পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা সর্বপ্রকার সতর্কতা অবলম্বন করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অধিকতর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য প্রত্যেক মন্ডপে মন্ডপ কমিটির উদ্যোগে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’