একদিকে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসন আর অন্যদিকে বিশ্বের সেরা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকারী কানাডার ১৫৫ তম জন্মদিন পালিত হয়েছে।বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত জন্মদিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগ দেয় প্রবাসী বাঙালিরাও।
বছরের বেশীর ভাগ সময়ই বরফাচ্ছন্ন কানাডা আয়তনের দিক থেকে ৯ হাজার ৯শত ৮৫ মিলিয়ন কিলোমিটার হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৩৮ মিলিয়ন। যার রয়েছে ১০টি প্রভিন্স এবং ৩টি টেরিটোরিজ। ১৯৭১ সালে কানাডাই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয় মাল্টিকালচারিজমের, যার মূলমন্ত্র হলো সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও দায়িত্ব।
যার ফলস্বরূপ দেশটির জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ মিলিয়নের বেশী লোক অভিবাসী হয়ে দেশটিতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কানাডা শান্তি রক্ষায় সবসময় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে আসছে। কানাডাবাসী সভ্য
জাতি হিসেবে পরিচিত। কানাডার ইমিগ্রেশন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশী পাড়ি দেয় কানাডায়। দিন দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কানাডার বিচার ব্যাবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, শিক্ষা ব্যাবস্থা, চিকিৎসা যোগাযোগ ব্যাবস্থা, জীবনের নিরাপত্তা, স্থীতিশীল অর্থনীতি শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যাবস্থা একটি ব্যতিক্রমধর্মী দেশ হিসেবে বিশ্বের সকলের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অন্যদিকে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা গেছে বর্তমান বিশ্বের সেরা দশ শহরের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে কানাডার ক্যালগারি, ভ্যাংকুভার এবং টরন্টো শহর।
দিবসটি উপলক্ষে কানাডার প্রধানমন্ত্রীজাস্টিন ট্রুডো শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের প্রায় প্রতিটি স্থানেই ছিলো উপচে পড়া ভিড়।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মুল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর কানাডার জন্মদিনের কেককাটা ছোটছোট শিশু-কিশোরদের ফেসপিন্ট,জর্লি জার্ম্পসহ বিভিন্নধরনের খেলাধুলা ছাড়াও আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
কানাডার ‘নতুন দেশ’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, বহু সংস্কৃতির দেশ কানাডা তার অভিবাসী নাগরিকদের নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে ধারন করতে চায়। কানাডা ডে উদযাপনে নাগরিকদের নিজ নিজ দেশের হতিহ্যের, গৌরবের গল্পগাঁথা তুলে ধরার উৎসাহ দেয়া হয়। বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি কানাডীয়ানরা সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে, বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে কানাডার মূলধারার সংস্কৃতিতে।কানাডা ডে কানাডার জন্মদিন হলেও বাংলাদেশি কানাডীয়ানদের জন্য এটি নিজ দেশের এতিহ্যকে তুলে ধরার একটি প্লাটফরমে পরিণত হয়েছে।
কানাডার “সিবিএনএ২৪” এর প্রধান সম্পাদক সদেরা সুজন বলেন, খুবই ভালো লাগছে বাংলাদেশী কানাডিয়ান হয়ে কানাডার ১৫৫ তম জন্মদিনে অংশগ্রহণ করতে পেরে। বাংলাদেশ ও কানাডার দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে- কানাডার ১৫৫তম জন্মদিনে এটাই আমার প্রত্যাশা।
ক্যালগেরির এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এবং বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ড.মোঃ বাতেন বলেন, দুর প্রবাসে থাকলেও মাতৃভুমি আমাদের হৃদয়ে ,দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা আমাদের আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম রোল মডেল দেশ। কানাডার জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা প্রচুর সংখ্যক বাঙ্গালীরা এদেশে আসুক জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখুক।
বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান বলেন, বহুজাতিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনে মানবিক সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কানাডা। শান্তি, সাম্য আর সমৃদ্ধির পথে কানাডা আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে এটি-ই আজকের প্রত্যাশা।
বালাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মোঃ রশিদ রিপন বলেন,- কানাডার ১৫৫ তম জন্মদিনে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশীদের কানাডায়
আমরা প্রত্যাশা করি, সেই সাথে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বালাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারন সম্পাদক জয়ন্ত বসু বলেন,- আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত যে বাংলাদেশ আজ অনেক দুরে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগীতা করছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে। কানাডার ১৫৫ তম জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা।
সিলেট এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত বলেন, আমরা আনন্দিত যে কানাডায় বসে কানাডার ১৫৫ তম জন্মদিনে অংশ গ্রহন করতে পারছি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী এদেশে এসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করুক এমনটাই কামনা করছি।
সিলেট এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক
কয়েস চৌধুরী বলেন -আমরা যারা অভিবাসী হয়ে এদেশে আসি সবারই হৃদয় পড়ে থাকে নিজ দেশে। দেশের উন্নয়ন আমাদের গর্বিত করে,বিশ্বের কাছে নিজেদের ভাবর্মর্তি উজ্জল করে। কানাডার ১৫৫তম জন্মদিনে অফুরন্ত ভালবাসা। দীর্ঘজীবি হোক কানাডা।
ক্যালগেরি বঙ্গীয় পরিষদের সভাপতি জয়দীপ সান্যাল বলেন, বাংলাদেশ যেমন আমাদের অহংকার পাশাপাশি কানাডাও আমাদের কাছে অহংকার, কানাডার জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশকে যে কটি দেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল কানাডা তাদের মধ্যে অন্যতম দেশ।
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কিরন বনিক শংকর বলেন,বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশ নিয়ে ভাবছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী হয়েও আমরা বাংলাদেশ কে নিয়ে গর্ব করি, অহংকার করি।
ক্যালগেরির প্রবাসী লেখক বায়াজিদ গালিব বলেন, কানাডার জন্মদিনে আমরা চাই বাংলাদেশ ও কানাডার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হোক।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যে সকল দেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাদের মধ্য অন্যতম দেশ কানাডা। সেই কানাডার জন্মদিনেই দেশটির আরো উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক,প্রচুর সংখ্যক বাঙ্গালীরা এখানে এসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং প্রবৃদ্ধিতে বিরাট ভুমিকা রাখুক এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার প্রবাসী বাঙালিদের।