বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে কমলালেবু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির অভাবে কঠিন হয়ে পড়েছে এই ফলের চাষ। তাই গাছের সুরক্ষায় এবার আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভ্যালের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেনের কর্দোবা ও সেভিয়া শহরের মাঝে কমলালেবুর বাগিচা রোদের তাপে পুড়ে, শুকিয়ে গেছে। আগের বছরের মতো প্রায় ১৬ লাখ টনের ফসল যে এবার পাওয়া যাবে না, চাষিদের কাছে তা এখন স্পষ্ট।
এক কৃষক বলেন, ‘বীজ বপন করে গাছগুলি বড় করেছি৷ এখন সেগুলির এমন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে৷ ১৪ বছরে এমন অবস্থা কখনো দেখিনি৷ এখানে কিছু জায়গায় একেবারেই কোনো কমলালেবু ফলেনি, অন্য জায়গায় কয়েকটি ফল দেখা যাচ্ছে৷ তবে কমলার আকার খুবই ছোট, কয়েকটি এমনকি রস বার করারও উপযুক্ত নয়৷ গাছগুলি পুরোপুরি ফুলে ওঠার কথা৷ কিন্তু সেটা ঘটে নি।’
গাছগুলি দেখাশোনার জন্য হাজার হাজার পরিবারের পানির প্রয়োজন৷ কিন্তু জলাধার প্রায় শুকনো৷ মাত্র ১০ শতাংশের মতো পানি অবশিষ্ট রয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা পরের বারের খরার জন্য প্রস্তুতি নেবার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
কর্দোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এমিলিও কামাচো মনে করেন, ‘‘আমাদের পানির সরবরাহে উন্নতি ঘটাতে হবে৷ অর্থাৎ পানি ধরে রাখার আরও পথ খুঁজতে হবে৷ সেইসঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে পানির ব্যবহার আদর্শ করে তুলতে হবে৷”
ফিনকা ন্যাচারাল গ্রিনের সমন্বয়ক খেসুস মার্তিনেস বলেন, ‘এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যান্য খেতের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে৷ কোন গাছের কখন, কতটা পানি প্রয়োজন আমরা তা জানতে পারছি।’
তবে স্পেনের ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ফেলিপে ফুয়েন্তেলসাস মনে করেন, ‘‘আমাদের সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে, আরও ভালোভাবে পানির ব্যবহার করতে হবে৷ তাছাড়া সেচ ছাড়া চাষ করা যায়, এমন গাছের চাষ বাড়াতে হবে৷ সবাই মিলে একটা সমাধানসূত্র পেতে আমাদের নানা রকম পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করে দেখতে হবে৷”
আরও কম পানি দিয়ে সেচ ব্যবস্থাও একটা সমাধানসূত্র হতে পারে৷ মালাগা শহরে টিইউপিএল অ্যাগ্রো নামের এক স্টার্টআপ কোম্পানি সেই লক্ষ্যে এক সফটওয়্যার তৈরি করছে৷ এ ক্ষেত্রেও সেন্সরের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তবে সেই তথ্যের বিশ্লেষণই আসল বিষয়৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সেটি করা হচ্ছে৷
প্রকল্পের প্রধান আন্তোনিও মানুয়েল আদ্রিয়ান বলেন, ‘‘এআই এই প্রকল্পের মূল। সেন্সর, প্রযুক্তি সে সব আগেই আছে৷ কিন্তু এআই-এর প্রয়োগ এই প্রকল্পের মাত্রা বাড়াতে আমাদের সাহায্য করবে৷ এর মাধ্যমে আমরা আরও ফল ভালো রাখতে পারবো৷ বিশেষ করে প্রত্যেক চাষিদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে ভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারবো৷”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যে খরা চলছে, এআই-এর মাধ্যমেও তা এড়ানো সম্ভব নয়৷ তা সত্ত্বেও এই প্রযুক্তি কম পানি নিয়ে আরও বেশি সময় কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক