পত্রিকার পাতা থেকে

কে এই শাহীন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ যার সঙ্গে কথা বলতেন ফোনে?

কে এই শাহীন

কে এই শাহীন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ যার সঙ্গে কথা বলতেন ফোনে?

 

কে এই শাহীন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ যার সঙ্গে কথা বলতেন ফোনে?  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদকে গত ১২ এপ্রিল, শনিবার ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে মৃ্ত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ৬ জনের সাজা কার্যকর হলো। কলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি আহমেদ আলি নামে। কলকাতায় থাকার সময় দুটি নম্বরে প্রতিদিন নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতেন মাজেদ। অনলাইনে ট্রু কলারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেই ফোনের একজন মালিকের নাম শাহীন। এখন জানার বিষয়, কে এই শাহীন?

খুনি মাজেদ কলকাতায় বাস করতেন ভারতীয় হিসেবেই। তার ছিল আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড ও ভারতীয় পাসপোর্ট। সেই সাথে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের দরিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারের তালিকাতেও তাঁর নাম ছিল। এতে তিনি বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা পেতেন। ভারতীয় নাগরিককদের পক্ষেও এই তালিকায় নাম ওঠানো কঠিন, সেই তালিকায় বাংলাদেশি এক দুর্ধর্ষ খুনির নাম থাকা সত্যিই আশ্চর্যজনক!

ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন মাজেদ। ২০১৭ সালের ২৪ মে ওই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, তার মেয়াদ ১০ বছর; মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৩ মে। অনেক ভারতীয়ই বিষয়টিকে বিস্ময়কর বলে মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি সেই বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য কাজ নিজে করে দেখিয়েছেন অদৃশ্য কোনো শক্তির জোরে!

ভারতীয় মিডিয়ার দাবি, কলকাতায় এক কিংবা একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সান্নিধ্যে ছিলেন খুনি মাজেদ! নইলে আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়া এবং কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের তালিকায় নাম ওঠানো অসম্ভব! কে কিংবা কারা সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি, সেটাই এখন অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে উঠেছে।

নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পর মাজেদের ভারতীয় পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছেন অনায়াসে। তাঁর আধার কার্ড নম্বর- ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এ ছাড়াও ২০১২ সালে মাজেদ সচিত্র ভোটার কার্ড বানিয়েছিলেন।

২০১১ সালে তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন আব্দুল মাজেদ। তাঁদের ছয় বছরের এক মেয়ে আছে। মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতেন মাজেদ। এমনকী খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেতেন তিনি।

শরীর খারাপ হওয়ায় জানুয়ারি মাসে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান মাজেদ। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। কলকাতায় মাজেদের স্ত্রী (সেলিনা বেগম) ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ডায়েরি করেন। এরপর পার্ক স্ট্রিট থানা পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটেও মাজেদের খোঁজ পায়নি। তবে পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক মহিলাসহ তিন শিশুর ছবি পায়। কলকাতায় থাকার সময় দুটি নম্বরে প্রতিদিন নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী আব্দুল মাজেদ। নম্বর দুটি হলো +৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩ এবং +৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯। ট্রুকলারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর একটির মালিক ওই শাহীন।

এই ফোনে কথা বলাই নাকি কাল হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনে! সেই ফোন নম্বরের সূত্রেই নাকি তদন্তকারীদের হাতে আসে মাজেদের তথ্য। বাংলাদেশে থাকা মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাততো গোয়েন্দারা। ফলে মাজেদ কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, সেই তথ্য জেনে যায় তারা। এরপরই তাকে গ্রেফতারের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়। মাজেদ নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছেন যে, বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বেরোনোর পর তাঁকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তেমন হলে চিৎকার কিংবা ধস্তাধস্তির প্রমাণ থাকত। তাছাড়া একজন হলেও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যেত। এর মানে মাজেদ স্বেচ্ছাতেই ওই চার ষণ্ডামার্কা লোকের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তবে কি সেদিন মাজেদের পরিচিত কাউকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন গোয়েন্দারা?  গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এমনিতে সুদের কারবার ও টিউশনির টাকায় সংসার চললেও সম্প্রতি তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন মাজেদ। তবে সেই বাড়িতে ওঠার আগেই ফাঁসিতে ঝুলতে হলো তাকে। সূত্র : আজ বাংলা ও ভারতীয় মিডিয়া।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 15 =