গুলিয়ার গল্প
১.
গেলাম গুলিয়াখালি
ডেকেছিল মনোমালি ।
দিয়েছিল মনোমালা
অপরূপ বনবালা ।
তার সহজাত সৃষ্টি
দিয়েছিল দৃষ্টি ।
ডেকেছিল ঢেকেছিল
লুটেছিল কেড়েছিল ।
প্রথম ও শেষ বার—
তারপর হাহাকার ।
একবার সাগরিকা তার ঝোপের ধারে সৈকতের কাছাকাছি । আরেকবার ফিরতি পথে মহাসড়কের পাশ থেকে ছিনতাই করে নিল, চোখের বাহিরে সেঁটে থাকা চোখের কেনা আলো । শেষবার শেষমেশ এই রহস্য-ক্রীড়ার জাল আমি ছিন্ন করতে পারিনি । সমগ্র আমাকে নিয়ে আসতে পারিনি । ভুল করে খুলে রাখা প্যান্টের পকেট থেকে নিজের অজান্তে কখন যে খসে গেছে । হারিয়ে ফেলেছি । আমার পকেটে ছিল আমদানি- কৃত ও আরোপিত সদ্য এক চৈনিক-দৃষ্টি । শেষ- তমবার চোখা-চক্ষু ডাক্তারনীর আবেগঘন তন্বী- কন্ঠ : ‘ দ্যাখেন তো ‘… ! ফলে, কাঁচকে বলী করেননি আর । নিকটকে পষ্ট পাঠ করার জন্য আমার চোখে এই দীপ জ্বালাতে হয়েছিল । ফলে, তিনি আমার খুব নিকটে হলেও, কিন্তু, কোনোরূপ জোর-উপরি ক্যারিশমা ছাড়াই আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম । সম্ভবতঃ আমি যে তাকে পড়ছিলাম, সেটাও কী তিনি বুঝে গিয়েছিলেন !
গুলিয়া, যেন দুটি আলোর কণিকা ফসকে তোমার
হৃদয়ে পড়ল সেদিন ! আমার অজ্ঞাতে তোমাকে অর্পণ করেছি । ধরে নাও, এ আমার অযাচিত উপহার । আমি ফেলে রেখে এসেছি । তোমার কাছে গচ্ছিত রেখেছি । জানতাম না । যখন জানলাম, তখন সরণী ও সত্তার মাঝে ধাবমান না-ফেরা গতি । অফেরতযোগ্য ধাতব গতি যেন ইচ্ছে করেই ছুটে চলেছে । গোলপাহাড়ের মোড় থেকে সংগ্রহ করেছিলাম এ দান । কাগুজে দামের বিনিময়ে দৃষ্টিদান করেছে আমাকে । দিনের আলো কিনতে হয় না । দেখার আলো কিনতে হয় । রাতের আলো কিনতে হয় । আমি ক্রেতা । বিক্রেতা নই।
সওদাগর নই । চাঁদ সওদাগর নই । বাণিজ্যতরী নিয়ে আসিনি তোমার কাছে ।
তোমাকে দেখে ফিরে যাবার পথে অন্ধকারে চুপিচুপি বুঝি কেউ পিছু নিয়েছিল ? চুপিসারে আমার সাথে কেউ এসেছিল ? কিছুদূর এগিয়ে দিতে তুমি, চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটেছিলে ? আবেগ-বিহ্বল বাকরুদ্ধ সে-ই তুমি গোপনে সরিয়ে রেখেছিলে আমার বিশেষ বাতি ? তোমারই কাজ !
আমার চোখে চোখ রাখবে ? বসবে মুখোমুখি ? ওখানে খুঁজবে বুঝি তুমি ! মানলাম হার—হারাবার দুঃখের কাছে নয়, তোমার কাছে । মানে, আমার দৃষ্টিকে খুইয়ে এসেছি, আমি চিরকালের মতো তোমার কাছে । অনন্তকালের নিমিত্ত আমার শূন্যদৃষ্টিকে পূর্ণতা দিলে তুমি । গুলিয়া, এভাবে আজীবন, সারাটি জীবন আমাকে একটু হলেও ঠাঁই দেবে ?