দেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আর একটি রাজনৈতিক দল দরকার ।।। শিতাংশু গুহ
সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলাম, নির্বাচনের আগে দেশে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি রাজনৈতিক দল দরকার’ -দেখলাম আমাদের প্রগতিশীল বন্ধুরা বেজায় নাখোশ। এরা সুষ্ঠূ নির্বাচন চায়, কিন্তু ‘তালগাছ’ আমাদের চাই-ই। কেন রে ভাই? বর্তমান আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র মধ্যে কি কোন তফাৎ আছে? আমরা জানতাম, বিএনপি’র আমলে সুষ্ঠূ নির্বাচন সম্ভব নয়, এখন জানি আওয়ামী লীগ আমলেও তা অসম্ভব। আমরা দেখেছি বিএনপি মৌলবাদীদের সাথে আপোষ করে; আওয়ামী লীগ এখন মৌলবাদীদের সাথে ‘ঘর’ করে! আমরা জানতাম,, বিএনপি দুর্নীতিবাজ, আওয়ামী লীগ দুর্নীতির সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। আর বাকি রইলো কি? আওয়ামী লীগের আমলে পার্লামেন্ট ঠুঠু জগন্নাথ, বিচার বিভাগ আজ্ঞাবহ, মিডিয়া ডিজিটাল সিকিউরিটির ভয়ে জড়সড়, নির্বাচন কমিশন ভীতসন্ত্রস্ত। প্রগতিশীল শক্তির মাজা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনের আগে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল দরকার। কারণ সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে না? আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে যাদের মাথাব্যথা তাঁরা বিএনপি’কে চায়না। তাই, ক্ষমতায় বসবেন কারা, তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। আওয়ামী লীগ ২০১৪ বা ২০১৮’র মত নির্বাচন করলে দেশে অশান্তির সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। বিএনপি ভেবে বসে আছে যে, আমেরিকা এমন কিছু একটা করবে, যাতে তারা ক্ষমতায় না আসলেও আওয়ামী লীগ বিদায় হবে? ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়েও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো বিএনপি’র মূল লক্ষ্য। আওয়ামী লীগও চায় তারা ক্ষমতায় না থাকলে বিএনপি যেন না আসে? এসব কারণেই দেশে আর একটি বিকল্প স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনৈতিক দল দরকার।
দেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আরো একটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো, কারণ স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয়, ক্ষমতার হাত বদল হওয়া উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলের মধ্যে।সামনের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এর আত্মপ্রকাশ ঘটলে মন্দ কি? যেহেতু এখন পর্যন্ত তেমন ঘটনা ঘটেনি, তাই বলা যায় জনসমর্থন থাকুক বা না-থাকুক আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনাকে যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়। এবারকার জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সফর সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। জাপান তাঁকে লাল-গালিচা সম্বর্ধনা দিয়েছে। বেশ ক’টি চুক্তি হয়েছে যাতে মনে হয়, চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশ জাপানের সাথে হাত মিলিয়েছে। যেই রাষ্ট্রদূত ঢাকায় বসে বিএনপি’র পরামর্শমত বলেছিলেন যে, ‘দিনের ভোট রাতে হয়’ তিনি ওএসডি হয়েছেন। বর্তমান রাষ্ট্রদূত তো এনিয়ে কথাই বলতে রাজি হননি।
আওয়ামী লীগ মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলে দিয়েছে। ভাবটা এরকম যে, এদের ভোটে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে? মৌলবাদীদের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্কটা ‘বিবাহ-বহির্ভুত’, এঁদের ঘর-সংসার বিএনপি’র সাথে। ওঁরা প্রেম করবে আওয়ামী লীগের সাথে, ভোট দেবে বিএনপি-কে। ওঁরা কখনো বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেয়নি, বর্তমান আওয়ামী লীগকেও দেবেনা। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার না, শুধু সুষ্ঠূ ভোট দিয়ে দেখুন না কেন? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে এখন দেশে আর কিছু নেই, যা আছে তা ধর্মীয় চেতনা! আবার ধর্মীয় চেতনার চাইতে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’র ঠেলায় জাতি বিপর্যস্ত। অনেকে বলতে চেষ্টা করেন, এইবার ক্ষমতায় আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। না, যাবেনা, কারণ সবাই সেই পুরানো প্রবাদ জানেন, ‘একবার খাতায় নাম লেখালে আর ফেরা যায়না’।
আওয়ামী লীগের চৌদ্দ বছরের শাসনামলে উন্নতি হয়েছে ব্যাপক, প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব দেশের উন্নয়ন করা, তাই উন্নয়ন দেখিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবেনা। দেশের মানুষ বিএনপি হয়ে যায়নি, এন্টি-আওয়ামী লীগ হয়েছে। এর কারণ আওয়ামী লীগ। আধিপত্যবাদ দলটিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আওয়ামী নেতাকর্মীদের জ্বালায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ, দুর্নীতি’র বেড়াজালে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। দেশে ভালো মানুষ এখন হারিকেন দিয়ে খুঁজতে হয়, নেতা নেই শুধু তোষামোদকারী। রিজার্ভ চুরি থেকে ব্যাংক ডাকাতি, ষ্টক এক্সচেঞ্জে ধ্স, সবই আওয়ামী লীগের অবদান। কোনটার বিচার নাই?
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর একুশ বছর লেগেছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে, আবার ক্ষমতাচ্যুত হলে কতবছর লাগবে তা বলা কঠিন। আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধান সুযোগ পেয়েও পুন্:প্রতিষ্ঠা করেনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের, এর পেছনে শেষ পেরেকটিও মেরেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে, গণতন্ত্র এনেছে, ধর্মনিরপেক্ষতা এনেছে, আওয়ামী লীগের হাত দিয়ে এসব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নূর হোসেন পিঠে ‘গণতন্ত্রের মুক্তি চাই’ লিখে এরশাদের পুলিশের টার্গেট করা গুলিতে নিহত হয়েছেন, আওয়ামী লীগ তাঁর মৃত্যু বিফল করে দিয়েছে, কারণ গণতন্ত্র ‘সোনার হরিণ’ই’ রয়ে গেছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু’র আওয়ামী লীগ নয়, এটি ‘মুসলিম আওয়ামী লীগ’। একদা সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা করতো, এখন ভয় পায়? রামু থেকে কুমিল্লা এবং প্রতিদিন সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার আওয়ামী লীগের আমলেই হচ্ছে, কোন বিচার নেই, সরকারি নেতারা চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র বেসুরা কোরাস গাইছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট হিন্দুদের ওপর ব্ল্যাসফেমি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সামনে নির্বাচন, হিন্দুরা কাকে ভোট দেবে (অবশ্য যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায়)? প্রায়ত: সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন যে, হিন্দু’র জমি দখলের জন্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ভাই-ভাই, একথা এখন সর্বক্ষত্রের সত্য। তাই বলছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আর একটি রাজনৈতিক দল দরকার!! [email protected];