দ্রৌপদী রাষ্ট্রপতি হতেই আলোয় আলোয় ভরল ওড়িশার আদিবাসী গ্রাম, বিলি হল লাড্ডু
দেশের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর মুহূর্তে বদলে গেল দ্রৌপদী মুর্মুর গ্রামের ছবি। ময়ূরভঞ্জ-কন্যার রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হওয়ার খবর পাওয়া মাত্র শুরু হল মিষ্টি বিলি। ওড়িশার অখ্যাত আদিবাসী গ্রাম ভরে উঠল আলোর ছটায়।
দেশের প্রথম মূলবাসী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী। প্রস্তুতি অবশ্য আগেই নিয়ে রেখিছিলেন ময়ূরভঞ্জের বাসিন্দারা। দ্রোপদীর ছবি সম্বলিত হোর্ডিংয়ে মুড়ে গিয়েছিল রাস্তাঘাট। আর বৃহস্পতিবার তাঁর জয়ের খবর আসা মাত্রই রায়রংপুরে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদীর বাসভবনের সামনে বাজির শব্দ যেন আর থামছেই না। উৎসবের মেজাজে দ্রৌপদীর বাপের বাড়ির গ্রাম উপরবেদা। শ্বশুরবাড়ি পাহাড়পুরেও একই ছবি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুধু রায়রংপুরেই প্রায় ২০ হাজার লাড্ডু বিলি হয়েছে। দ্রৌপদীর বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া এক মহিলার কথায়, ‘‘আমরা ভীষণ খুশি এবং গর্বিত। আজ আমাদের দিদি ভারতের সর্বোচ্চ পদের জন্য নির্বাচনে জিতেছেন। প্রথম থেকেই আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে উনি জয়ী হবেন। তাই, সকাল থেকেই আমরা তার বিজয় উদ্যাপন শুরু করেছিলাম।’’ আর এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই প্রথম ওড়িশা থেকে কেউ ভারতের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। আমরা খুশি যে, এক জন আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হয়েছেন এবং সেটিও এই ওড়িশা থেকে।’’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামতেই উৎসবের রেশ ময়ূরভঞ্জ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারা ওড়িশায়। রাস্তায় রাস্তায় দেখা গিয়েছে বিজু জনতা দল এবং বিজেপির কর্মী সমর্থকদের। সবাই দ্রৌপদীর জয় উদ্যাপনে মত্ত। ভুবনেশ্বরের এক বিধায়ক তো নিজের টাকায় তাঁর এলাকার সমস্ত মানুষকে মিষ্টিমুখ করানো শুরু করেছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের টুইট, ‘প্রত্যেক ওড়িশাবাসীর জন্য সত্যিই এটা গর্বের মুহূর্ত। দ্রৌপদী মুর্মু যে তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তাতে আমরা সবাই খুশি।’
দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী, বিপুল ভোট পেয়ে রাইসিনা হিলসে ময়ূরভঞ্জের কন্যা
বিজেপি আদিবাসী সমাজের একজন প্রতিনিধিকে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসাতে চেয়েছিল। এনডিএ-র প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার সময়ে জেপি নড্ডা স্বয়ং বলেছিলেন, আদিবাসী এবং মহিলা হিসাবে বাছা হয়েছে দ্রৌপদীকে। এর পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব দ্রৌপদীকে ‘প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি’ হিসাবেই তুলে ধরতে চেয়েছে। সেই চাওয়ার জয় মিলল বৃহস্পতিবার। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ভোটমূল্য পেয়ে যান দ্রৌপদী। গণনা শেষে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি হিসাবে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটমূল্য ছিল ৫,৪০,৯৯৬। দ্রৌপদী তৃতীয় রাউন্ড গণনার পরেই পেয়ে যান ৫,৭৭,৭৭৭ মূল্যের ভোট। তখনও বাকি আটটি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভোট গণনা। অন্য দিকে সেই সময় বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হার প্রাপ্তি ছিল ২,৬১,০৬২ মূল্যের ভোট। সব রাউন্ডের গণনার শেষে দ্রৌপদী ৬,৭৩,৮০৩ মূল্যের ভোট। যশবন্ত পেয়েছেন ৩,৮০,১৭৭ মূল্যের ভোট। রিটার্নিং অফিসার পিসি মোদী জানান, দ্রৌপদী পেয়েছেন ৬৪ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে, যশবন্ত পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ ভোট।
বৃহস্পতিবার প্রথমে গোনা হয় সাংসদদের ভোট। তাতে দেখা যায় ১৫ জন সাংসদের ভোট বাতিল হয়েছে। প্রথম রাউন্ডে সাংসদদের ভোটগণনা শেষে দ্রৌপদীর পক্ষে পড়ে ৫৪০ জন সাংসদের ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী যশবন্ত পান ২২৮টি। এর পরে আরও ১০ রাজ্যের ভোট গণনার পরে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন দ্রৌপদী।
দলগত ভাবে বিজেপি এবং শরিক দলগুলি ছাড়াও অনেক দলই দ্রৌপদীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন। হিসাব থেকে দেখা যায় যে সব দল সমর্থন দেবে না জানিয়েছিল তাদেরও ১৭ সাংসদের ভোট পেয়ে যান দ্রৌপদী।
আগামী ২৪ জুলাই শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ। এর পরে শপথ নেবেন দ্রৌপদী। তবে বৃহস্পতিবার গণনা শুরুর পর থেকেই উৎসবে মেতে ওঠে গেরুয়া শিবির। রাজ্যে রাজ্যে ধামসা, মাদল নিয়ে মিছিল শুরু হয়। দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতর থেকে কলকাতায় রাজ্য বিজেপি দফতরের সামনে উৎসবের মেজাজে দেখা যায় বিজেপি নেতা, কর্মীদের।