রাজের বাসায় তদন্ত টিমের অভিযান # দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ । পরীমনিকে তিন বছর থাকতে বাধ্য করা হয় রাজের বাসায়
নায়িকা-মডেল স্ক্যান্ডাল, প্রভাবশালীদের নাম সিআইডির লিস্টে
নায়িকা-মডেল কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্তে নেমে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে এসব ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে সিআইডি। তাদের তালিকা তৈরি করে পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এদিকে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছে সিআইডি। তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইডির একটি দল রাজের বাসায় তল্লাশি চালায়। এ সময় ওই ভবনের গ্যারেজ থেকে একটি হ্যারিয়ার এবং একটি র্যভ-৪ গাড়ি জব্দ করে সিআইডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে থাকা প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, নায়িকা পরীমনি, মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের অনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পেশার অনেকের নামই উঠে এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। এ ছাড়া প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় প্রভাবশালী বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি। এদের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক পদধারীরাও রয়েছেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিনে প্রভাবশালী অনেকের নাম বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি পরীমনিকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। এ ছাড়া পরীমনির দুবাইয়ে ভ্রমণের ১৭ দিনের ঘটনাপ্রবাহও তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। শাপলা মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার প্রযোজক সেলিম খান গত কোরবানির ঈদে পরীমনিকে ছয়টি গরু উপহার দেন। পরীমনির সঙ্গে সেলিম খানের সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিআইডি। তদন্তের প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
নায়িকা-মডেল স্ক্যান্ডাল, প্রভাবশালীদের নাম সিআইডির লিস্টে রয়েছে, সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের অপরাধের অনেক তথ্য-প্রমাণ ডিজিটাল ডিভাইসের মধ্যে পাওয়া গেছে। কাজেই এসব ডিজিটাল ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
নায়িকা-মডেল কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের হওয়া সাতটি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। গতকাল দুপুরে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, নানা পেশার লোকজনের জড়িত থাকার বিষয়ে আমরা তথ্য পাচ্ছি। সব ধরনের লোকজনের নামই আমরা পেয়েছি। আমরা অনেক নাম পাচ্ছি, তদন্তের স্বার্থে এগুলো এখনো বলা সম্ভব না। তবে আমরা ভেরিফাই করব তদন্তের মাধ্যমে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে হলে আবারও তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
সিআইডির তদন্তে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে এই কর্মকর্তা আবারও বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত যে লেভেলের হোক না কেন, আইনের আওতায় আনা হবে।
ডিবি কর্মকর্তা সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির সম্পর্ক কী, এ বিষয়ে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি কোনো তথ্য দিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওমর ফারুক বলেন, আমাদের কাছে যেসব মামলা এসেছে বেশিরভাগই মাদকদ্রব্যসংক্রান্ত মামলা। মাদকদ্রব্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তদন্তের বিষয়গুলো ঠিক করেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। যদি অন্য কোনো বিষয় থাকে আমরা পরে তদন্তের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে আসব।
ওমর ফারুক আরও বলেন, এসব তথ্য তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো পাওয়া গেলেই পরবর্তী সময়ে জানানো সম্ভব হবে। আমরা বলতে চাই- কোনো ইনোসেন্ট লোক যেন ভিকটিম না হয় সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। ব্যাংকের অনেক লোক জড়িত আছে, এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে আসলেই তারা এ ধরনের ঘটনায় সম্পৃক্ত কিনা এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, আবার অসঙ্গতিও পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কী ধরনের অসঙ্গতি পাচ্ছি এ বিষয়টি এখনই তদন্তের স্বার্থে বলা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, সিআইডির উদ্ধৃতি দিয়ে যেসব ব্যক্তির নাম প্রকাশিত হয়েছে, সেসব নাম সিআইডি থেকে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও নাম আমরা এখনো প্রকাশ করিনি। আমাদের কাছে অনেক তথ্য আছে, অনেক নাম আছে। যাচাই-বাছাই করার পরই আমরা বলতে পারব।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন। তাদেরও নাম আমরা পেয়েছি, তবে তাদের সঙ্গে এখনো আমরা কথা বলতে পারিনি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাদের বক্তব্য আমরা নেব। বক্তব্য যাচাই-বাছাই করব। যাচাই-বাছাই করেই পরবর্তী সময়ে বলতে পারব- আরও কারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
এ ছাড়া শনিবার রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ল্যাপটপ এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানীর অভিজাত এলাকার গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য দেয়। এ তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বনানী এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে শামসুর নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ, পরীমনির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু ও রাজের ম্যানেজার সবুজ আলীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ২ আগস্ট রাত ১০টার দিকে প্রথমে রাজধানীর বারিধারায় মডেল পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর পিয়াসার দেওয়া তথ্যে মডেল মৌকে ধরতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ২৯ জুলাই মধ্যরাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব। ওইদিন রাত ২টার দিকে র্যাবের একটি দল মিরপুরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন আইপি টিভি ‘জয়যাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ ভবনে অভিযান চালায়।
পরীমনিকে তিন বছর থাকতে বাধ্য করা হয় রাজের বাসায়
পরীমনি নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের হাত ধরে। তবে এ জন্য পরীমনিকে শর্তের জালে জিম্মি করেন রাজ। শর্ত অনুযায়ী রাজের বনানীর ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন পরীমনি। একই সঙ্গে তিন বছর ওই বাড়িতে রাজের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হন নায়িকা পরীমনি। এক পর্যায়ে বাড়িতে ওঠেন রাজের স্ত্রী ইশরাত জাহান জুই। নিজের স্ত্রী এবং পরীমনিকে নিয়ে একই বাসায় থাকতে শুরু করেন রাজ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শুধু রাজ নয়, চলার পথে পরীমনিকে মোকাবিলা করতে হয়েছে এ ধরনের নানা চ্যালেঞ্জ। অনেকেই সুযোগ মতো নিজেদের কাজে পরীমনিকে ব্যবহার করে আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের হয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে অবশেষে তাকে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকার আশুলিয়ায় বোট ক্লাবে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্তাধীন মামলার তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন সিথিলও প্রেমের সম্পর্কের নামে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা শুরু করেন পরীমনির সঙ্গে।
পরীমনির এক স্বজন বলেন, পরীমনি হয়তো কোনো চক্রে মিশে অপরাধ করেছে। কিন্তু সবাই পরীমনির কাছ থেকে শুধু সুবিধা নিয়েছে। তাকে ব্যবহার করেছে। কারা পরীমনিকে আজকের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য দায়ী তাদেরও সামনে আনা উচিত।
সূত্র জানায়, প্রযোজক রাজের নেতৃত্ব রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থে পরীমনিকে ব্যবহার করেছে। বিনিময়ে পরীমনিকে খ্যাতি ও অর্থের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এ রকম অন্তত দুই শতাধিক মডেল-নায়িকাকে নিজের কবজায় রেখেছেন রাজ। সুযোগ মতো তাদের কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করেন রাজ। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশরাত জাহান জুই আমাদের সময়ের কাছে দাবি করেন, তিনি ওই ফ্ল্যাটে ওঠার পর পরীমনিকে দেখেননি।
গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানীর অভিজাত এলাকার গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য প্রদান করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বনানী এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে শামসুর নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ, পরীমনির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু ও রাজের ম্যানেজার সবুজ আলীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
-আমাদেরসময় ( নায়িকা-মডেল স্ক্যান্ডাল, প্রভাবশালীদের নাম সিআইডির লিস্টে )
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান