প্রতারণা যাদের পেশা! ৩১ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ১০ কোটি টাকা লেনদেন
মো. শহিদুল ইসলাম। পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। বর্তমানে রাজমিস্ত্রি শহিদুল কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ৭টি ব্যাংকে তার নামে রয়েছে ১১টি অ্যাকাউন্ট। তার এসব অ্যাকাউন্টে এখন পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। একইভাবে ডিম বিক্রেতা মো. সজীব আহমেদের বিভিন্ন ব্যাংকে ৩১টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর ভ্যানচালক মো. শরিফ হোসাইনের নামে-বেনামে রয়েছে ৪২টি অ্যাকাউন্ট। কিন্তু বাস্তবে তারা তিনজনই প্রতারক। এই প্রতারকদের বস মর্জিনা আক্তার রনি।
মর্জিনা মূলত চক্রের সদস্যদের প্রলুব্ধ করে থাকে। যত অ্যাকাউন্ট তত কমিশন। প্রতি ১ লাখ টাকার বিপরীতে কমিশন হিসেবে পাবেন ১৫শ’ টাকা। সম্প্রতি গোয়েন্দাদের বিশেষ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এমনই এক প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। প্রতারক চক্রের মূল হোতা এবং ম্যানেজার শহিদুল ইসলামকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চক্রটির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সরাসরি প্রায় অর্ধশত মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজ করলেও দেশে ফিরে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে চক্রের মূল হোতা এবং ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে গত চার থেকে পাঁচ বছর আগে পরিচয় হয় মর্জিনার। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে প্রতারণার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৭০টি অ্যাকাউন্ট, ৪৭টি চেকবই এবং এটিএম কার্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে। শহিদুল রাজমিস্ত্রির কাজ করার সময় প্রায় ৯ বছর আগে বিদেশি একদল প্রতারক চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে সে নিজেই একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা শাখা চক্র রয়েছে।
প্রতারণার ধরন এবং কীভাবে অর্থ লেনদেন হয় এ সম্পর্কে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে সাধারণত নিজেদের মধ্যে বিদেশি ফোন নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যালসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে। ভিডিও কল ছাড়া কথা বলে না তারা। ভুয়া ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে বিদেশ থেকে উপহার এবং পাউন্ড এসেছে বলে প্রথমে প্রতারণার টোপ ফেলে তারা।
এরপর বিভিন্ন ছদ্মনামে তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে ভুয়া কাগজপত্র পাঠিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে। প্রতারক চক্রটির লেনদেনের টাকার বেশির ভাগই চেকে উত্তোলন করে চক্রটি। বিশেষ প্রয়োজনে বুথ থেকেও টাকা তোলে তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক নারী মর্জিনা জানায়, চলতি বছরের প্রথমদিকে ডিম বিক্রেতা সজীবের সঙ্গে পরিচয়ের একপর্যায়ে তাকে দলে নেয় এই প্রতারক নারী। তাকে দিয়ে সে প্রথম দফায় ২০ থেকে ২৫টি অ্যাকাউন্ট করিয়েছে। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অটোভ্যানচালক শরীফের সঙ্গে গাড়িতে পরিচয় হয় ওই নারীর। বিভিন্ন প্রলুব্ধ কথা বলে তাকেও এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত করে। তাদের চেকবই, এটিএম কার্ড, মোবাইল, সিম নিজের কাছে নিয়ে পরবর্তীতে মূল হোতা শহিদুলের কাছে দিয়ে দেয় প্রতারক নারী। চক্রের সদস্য শরীফকে দিয়ে ওই নারী ৩০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করায়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাদের এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন, বড় বড় ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, খেটে খাওয়া মানুষসহ অনেকেই। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন না বলে জানায় সূত্রটি।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, তাদের এই ৭০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখন পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা আদান- প্রদান হয়েছে। পূর্বে এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে বিদেশিরা যুক্ত থাকলেও এখন চক্রের দুই একজন বিদেশি সদস্যের বিপরীতে বাকি সবাই আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এবং তেজগাঁও থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
-মরিয়ম চম্পা । মানবজমিন
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান