একটা ফুটবল জার্সির দাম ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা!
টোস্টাওর থ্রো পড়ল রিভেলিনোর সামনে। একটু দৌড়ে চলতি বলেই তাঁর বাঁ পায়ের কিক। হালকা বাঁকে বলটার ভাসতে ভাসতে বেরিয়ে যাওয়া প্রলুব্ধ করল আপনাকে। শূন্যে লাফিয়ে হেড এবং গোল! উদ্যাপন করার মাঝে কখন যেন আবিষ্কার করলেন আপনি সতীর্থের কোলে। ক্যামেরার কড়া ফ্লাশের কালিতে ইতিহাসে লেখা হচ্ছে আপনার জার্সি নম্বর, ১০ নাম পেলে!
হ্যাঁ, কৃত্রিম দুনিয়ার খেলাই। সফটওয়্যার নির্ভর গেমস না। কল্পনার দুনিয়া, ঠিক করে বললে স্বপ্ন। ক্যানভাসটা বাস্তবের। ১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালের ১৮ মিনিটে পেলের গোলটি। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা সে বিশ্বকাপ ফাইনাল টিভিতে দেখেছে রেকর্ড দর্শক। পেলের জার্সিটা চিরস্থায়ী আসন পেয়ে যায় বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের মনে।
এখন রাস্তা দিয়ে যখন কোনো তরুণ মেসি-রোনালদোর জার্সি পড়ে হেঁটে যায় তখন ‘৭০ বিশ্বকাপ দেখা কোনো ব্রাজিল-ভক্ত বুড়ো হয়তো ভাবেন, জার্সির চলটা যদি তখন থাকত! জাদুকরী ওই হলুদ জার্সিটা যদি তখন পড়তে পারতাম! আর পরলে তো পেলের জার্সিই। ফুলের বাগানে সেরা ফুলটাই তো আগে চোখে পড়ে।
এই ‘৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল এখনকার ফুটবল প্রজন্মের কাছেও বিস্ময়, রূপকথার মতো। ওয়ার্ল্ড সকার সাময়িকীর জরিপে ইতিহাসের সেরা ফুটবল দল। টোস্টাও, জর্জিনহো, রিভেলিনো, কার্লোস আলবার্তোরা মিলে নাকি ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন সে বিশ্বকাপে।
পেলের ওই ১০ নম্বর জার্সি তাই যেকোনো প্রজন্মের কাছেই মোক্ষধাম। সবাই এ জার্সিটা পেতে চায়। অন্তত রেপ্লিকা, আর আসলটি পেলে? দাঁড়ান আগে হজম করতে দিন।
হজম করা সত্যিই কঠিন। ১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেলের জার্সিটি পেতে হলে যে কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে। টাকার ব্যবস্থা না হয় হলো, তবু প্রশ্ন থাকে। এত সাধের জার্সিটি বিক্রি করা হবে কি না? থাক, বাদ দিন। আকাশ-কুসুম স্বপ্ন না দেখে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফুটবল জার্সির গল্প শুনে সন্তুষ্ট থাকাই ভালো।
২০০২ সাল। লন্ডনের দক্ষিণ কেনসিংটনে ক্রিস্টির নিলাম। আর সেখানে নিলাম হওয়া একটি ফুটবল জার্সির দাম শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। একটি ফুটবল জার্সি বিক্রি হলো ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫০ পাউন্ডে। এখন বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। নিলামের জন্য জার্সি দিয়েছিলেন ইতালির সাবেক ডিফেন্ডার রবার্তো রোসাতো। ঠিক ধরেছেন। ১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেলের সঙ্গে নিজের জার্সি বদল করেছিলেন তিনি। আর ‘৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা পেলের জার্সিটি ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ফুটবল জার্সি।
প্রত্যাশিত দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি দাম উঠেছিল নিলামে। ভাবা হয়েছিল, ৩০ হাজার পাউন্ড থেকে ৫০ হাজার পাউন্ডের মধ্যে দাম উঠবে। কিন্তু হিসেব নিকেশ গুবলেট করে টেলিফোনে ওই অবিশ্বাস্য দামে জার্সিটি কিনেছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পেলের সেই জার্সি ভেঙেছিল জিওফ হার্স্টের জার্সির রেকর্ড। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে যে জার্সি পরে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংলিশ কিংবদন্তি। ২০০০ সালে এই ক্রিস্টির নিলামেই তাঁর জার্সির দাম উঠেছিল ৯১ হাজার ৭৫০ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৭ লাখ টাকা।
১৯৭০ বিশ্বকাপে চার গোল করেছিলেন পেলে। ৩২ বছর পর ফাইনালে খেলা তাঁর ওই জার্সি যদি সব রেকর্ড ভাঙতে পারে তাহলে এখন মেসি-রোনালদোর বিশ্বকাপ সাফল্যের জার্সির দাম কত হতে পারে?
দুঃখিত, প্রশ্নটাই ভুল। বিশ্বকাপে শিরোপাজয় ছাড়া সাফল্য বলে কিছু নেই।
সূত্রঃ প্রথম আলো
বাঅ/এমএ