শব্দগুচ্ছ ।। ফেব্রুয়ারি সংখ্যা ।। বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, কানাডা
মৌ মধুবন্তী
পরিচিতি- কানাডার টরন্টোবাসী মৌ মধুবন্তী বর্তমানে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডা’র সভাপতির দায়িত্বে আছেন। একজন কবি, আবৃত্তিশিল্পী, সফল সংগঠক ও সঞ্চালক। আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন বাংলা ভাষার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। ললিতকণ্ঠ আবৃত্তি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তার মোট ১৩টা কাব্যগ্রন্থ, একট গল্পগ্রন্থ। তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও এওয়ার্ড পেয়েছেন তার লেখার জন্য। তার রচিত কবিতার বই আছে তিন ভাষায়। এছাড়াও বহু ভাষায় তার কবিতা নিয়মিত অনুবাদিত হচ্ছে ভিন্ন ভাষার পাঠকে রপাঠ সুবিধার জন্য। পড়ুন তার লেখা-
শাশ্বত একুশ
আন্তর্তাজিক মাতৃভাষা সমাবেশে,দুই হাজার —তেইশে
আসো লেখক, আসো কবি,আসো সাহিত্য শিল্পামোদী
বিশ্বের নানা দেশ হতে আসো অন্তর্জালে ভেসে ভেসে
আসো সবে আহবান করি —- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সমাবেশে
দুই হাজার তেইশে————–ফেব্রুয়ারী একুশে
বাংলাকে লালন করি বুকের গভীরে
থাকি আমরা দূর প্রবাসে— বরফ ঢাকা একুশে
আহবান করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সমাবেশে
দুই হাজার তেইশে————-ফেব্রুয়ারী একুশে।
একুশ মানে না কোন বাধা বিপত্তি
একুশ মানে না কারো কোন আপত্তি
একুশ নয়তো কোন রাজনৈতিক দলের
একুশ সবলের-দুর্বলের, একুশ সকলের
একুশ বাংলা ভাষার কোন একক সংগ্রাম নয়
একুশ আত্মচেতনার বলিষ্ঠ দাঁড়,
বেয়ে যায় জাতীয় গৌরবতরী
একুশ হলো শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের,মানবতার
একুশ হলো সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদারতার
একুশ হলো
খণ্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকারের
একুশ হলো অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের।
একুশ কখনো কারো কাছেই মাথা নত করে না
মহান একুশের অঙ্গীকার- সব অন্যায়, অবিচার,
অত্যাচার, শোষণ ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু রেখে
শহিদের ও প্রাণের দাবিকে ঘোষণা করা।
একুশ আসে বছরে বছরে ফুল আর সঙ্গীতের মুর্ছনায়
একুশ আমাদের কাছে আত্মমর্যাদার বলিষ্ঠ উচ্চারণ চায়
একুশ বাংলাদেশ ছেড়ে সারা বিশ্বের নগরে নগরে শহিদ মিনারে
একুশ এখন গল্পে ,কবিতা আর মিছিলে -ব্যানারে নয়
একুশ এখন বিশ্বের সকল পার্লামেন্টের অন্দরমহলে হয়
বাংলার একুশ বিশ্ববাসীর একুশ হয়ে গেছে গোলার্ধ থেকে গোলার্ধে
একুশকে কেউ ব্যবহার করো না কেবলই ব্যক্তিগত সার্থে
শহিদের রক্তে রাঙা একুশ গ্রোথিত আছে জাতীয় জীবনের মর্মমুলে
সেই রক্তের স্রোত তুলে নেবে সকল অন্যায়কে সমূলে।
ভুলি নাই ভুলব না অমর একুশে ফেব্রুয়ারীকে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
©কপি রাইট মৌ মধুবন্তী
শানা হক
পরিচিতি- ডক্টর আব্দুল হাই সুমন। শানা হক লেখক নাম। পেশায় কৃষি বিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশে সরকারী উর্ধ্বতন ক্যাডার কর্মকর্তা পদে মৃত্তিকা ভবন খামার বাড়ীতে কর্মরত ছিলেন। পেশাভিত্তিক লেখালেখির পাশাপাশি সাহিত্য নিয়েও লিখতেন। বর্তমানে টরেন্টোর বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের সাথে কাজ করছেন। তিনি কানাডার প্রোভিন্সিয়াল সরকারের হর্টিকালচারাল গবেষনায় নিয়োজিত। পড়ুন তার লেখা-
একুশ আমার চেতনা
একুশ তুমি বসন্তে নুতন কুড়ির খেলা,
একুশ তুমি গ্রাম বাংলায় দুষ্ট ছেলের মেলা।
একুশ তুমি কৃষ্ণচূড়া শিমুলের ফুল,
তাইতো তোমায় স্মরণ করতে হয়না কোন ভুল।
একুশ তুমি শিশুর কান্না বৃদ্ধ লোকের হাসি,
তাইতো তোমায় এ জীবনে এত ভালবাসি।
একুশ তুমি গড়েছ মোরে করেছ উচ্চ শির,
মায়ের ভাষা আমার মুখে রেখেছ অটুট ধীর।
একুশ তুমি স্বাধীনতার প্রথম বীজ বুদ্ধিজীবী,
তাইতো হয়েছে স্বপ্ন পূরণ আমরা সবাই গাজী।
একুশ তুমি বীরত্বগাথাঁ জাতির গাজীনামা,
একুশ তুমি কৃষ্টি চর্চার মোদের শপথনামা।
একুশ তুমি ভাষা শহীদের সাধ পূরণের অরণী,
তাইতো তুমি শহীদ মায়ের আমৃত্যু রক্তক্ষরণী।
দেশ স্বাধীনের সূচনা তুমি ভাষা রক্ষার প্রমাণ,
তাইতো আজ বিশ্বজনীন মাতৃভাষা দিবস বহমান।
একুশ তুমি চেতনা তাইতো এত রটনা,
তোমার সুখে সুখী হবো গরব জীবন ভুলব না।
আলী আজগর খোকন
পরিচিতি- সঙ্গীতজ্ঞ,লেখক,সমাজসেবক ও সংগঠক আলী আজগর খোকন ১৯৫৭ সালে ১ জানুয়ারী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে নবম শ্রেণিতে প্রথম কবিতা ও দশম শ্রেণিতে প্রথম ছোটগল্প লেখেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। ২০১৪ সাল থেকে কানাডার টরন্টোতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ২০১৮ সাল থেকে ম্যাগাজিন ও বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা,ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখছেন। তিনি বিক্রমপুর এসোসিয়েশন অফ কানাডা’র সভাপতি এবং বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডা’র সচিব। প্রকাশিত গ্রন্থঃ যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘শত কবির দ্রোহের কবিতা’।
ভুলিনি ভুলবোনা
বায়ান্নতে তোমরা দিয়েছ প্রাণ
রাজপথে ছড়িয়েছিল বারুদের ঘ্রাণ,
তোমাদের আত্মত্যাগ চির অম্লান
বাংলা ভাষা পেয়েছে সম্মান।
তোমরা সেদিন বুঝেছিলে বাংলা ভাষার মূল্য
তাইতো অ, আ, ক, খ সদা জাগ্রত উৎফুল্ল,
একুশ আসে বারবার
শোক শ্রদ্ধায় মনে জাগে দুর্বার।
বাংলার আপামর মানুষের ভালবাসায়
শহীদ মিনারের বেদী ফুলে ফুলে ভরে যায়,
তোমরা হয়েছ অমর
সেদিনই ভেঙ্গেছে পাকিস্তানের কোমর।
তোমরা দেখিয়েছ মুক্তির পথ
সে পথেই দুর্বার গণ-আন্দোলন,
একাত্তরে চূড়ান্ত বিজয় স্বাধীনতা
আমরা তোমাদের ভুলিনি ভুলবো না।
১৩ জানুয়ারী ২০২৩, মারখাম,অন্টারিও, কানাডা।